কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি গান ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’। গানটি ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত (মূলত গানের বই)। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালের আগস্ট মাস মোতাবেক ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে। (‘তবে মনে হয়, বইটি বের হয়েছিল ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে’—বিদ্রোহী রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী: গোলাম মুরশিদ, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, তৃতীয় সংস্করণ, ষষ্ঠ মুদ্রণ, ২০২১)। প্রকাশক ছিল কলকাতার ডি এম লাইব্রেরি এবং যুগবাণীর আর্য পাবলিশিং হাউস। উৎসর্গ করা হয়েছিল মেদিনীপুরবাসীদের উদ্দেশে। একই বছর ১১ নভেম্বর তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। নিষিদ্ধতার খড়্‌গ নিয়েই এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯৪৯ সালে।

গানটি রচনার প্রেক্ষাপট খুবই চমকপ্রদ। নজরুলের জীবনের মতোই আকস্মিকতাময়, রোমাঞ্চকর ও নাটকীয়। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় বের হয় পত্রিকা ‘বাঙ্গালার কথা’। এ সময় মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে একের পর এক ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামীরা কারারুদ্ধ হচ্ছেন। চিত্তরঞ্জন দাশও কারারুদ্ধ হলেন। তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবী দ্বারস্থ হলেন ২২ বছর বয়সী কাজী নজরুল ইসলামের। (পরবর্তীকালে বাসন্তী দেবীর সঙ্গে কবির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। কবি তাঁকে মা বলে ডাকতেন।)

কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি গান ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’। গানটি ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত (মূলত গানের বই)। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে। একই বছর ১১ নভেম্বর তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে।

গানটি রচনার বিষয়ে নজরুলের বাল্যবন্ধু কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা’ বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার সামনেই দাশ পরিবারের শ্রীসুকুমাররঞ্জন দাশ “বাঙ্গালার কথা”র জন্য একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু করে দিল। সুকুমাররঞ্জন ও আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি পড়ে শোনাতে লাগল।’

হুগলির জেলে দেশবন্ধুর সঙ্গে অন্য বন্দীরাও গেয়ে উঠতেন এই গান।

ব্রিটিশ শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে আন্দোলন শুরু হয়েছে দিকে দিকে। বিপ্লবীদের বন্দী করে পাঠানো হচ্ছে জেলে। এভাবে পুরো দেশটাই যেন হয়ে উঠেছিল কারাগার। এমন এক সময়ে বের হয়ে যায় নজরুলের ‘ভাঙার গান’। বইটি ব্রিটিশ শাসনের মর্মমূলে সত্যিই আঘাত হেনেছিল। আর আঘাতের প্রধান অস্ত্র ছিল—‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানটি। গানটি আরেকবার পড়ে নেওয়া যাক:

কারার ঐ লৌহ-কবাট
ভেঙে ফেল্, কর্‌রে লোপাট
রক্ত- জমাট
শিকল-পূজোর পাষাণ-বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ!
ধ্বংস-নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি ।।


গাজনের বাজ্‌না বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা,
মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি?
সর্বনাশী
শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?


ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা,
দে রে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা
জোর্‌সে ধ’রে হেঁচ্‌কা টানে!
মার্ হাঁক হৈদরী হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক,
ডাক্ ওরে ডাক্
মৃত্যুকে ডাক্ জীবন পানে!


নাচে ঐ কাল–বোশেখী,
কাটাবি কাল ব’সে কি?
দে রে দেখি
ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’!
লাথি মার্‌ ভাঙ্‌ রে তালা!
যত সব বন্দী–শালায়
আগুন-জ্বালা,
আগুন-জ্বালা, ফেল উপাড়ি’।।

বাঙালিরা তো নীচু জাতি। ম্লেচ্ছ, অশিক্ষিত, অসভ্য। তারা কেন প্রতিবাদ করবে! তারা কেন বীর হবে! তারা নিছক ‘বাঙ্গাল’ নামীয় গালিযোগ্য ঊনমানুষ হয়ে থাকবে। এরা দুঃশাসনের রক্ত চায় কীভাবে! আবার ভীমকে ডাকে! পাগলা ভোলাকে আহ্বান করে প্রলয়ের টানে সব গারদের আগল ভেঙে দেওয়ার জন্য! লাথি মেরে গারদের তালা ভেঙে ফেলতে চায়! বন্দিশালায় আগুন জ্বালাতে চায়! সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছুকে পায়ের ভৃত্য করে, উপেক্ষা করে, প্রতিবাদ করে, মৃত্যুকে ডাকে জীবনপানে! এগুলো তো আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চাওয়ার নামান্তর! যার সরল অনুবাদ স্বাধীনতা।

আমার সামনেই দাশ পরিবারের শ্রীসুকুমাররঞ্জন দাশ ‘বাঙ্গালার কথা’র জন্য একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু করে দিল। সুকুমাররঞ্জন ও আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি পড়ে শোনাতে লাগল।কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ

এই গানের প্রভাব ছিল গভীরতর। সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘জেলে যখন ওয়ার্ডাররা লোহার দরজা বন্ধ করে, তখন মন যে কী আকুলিবিকুলি করে, কী বলব। তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর সেই গান—“কারার ঐ লৌহ-কবাট”।’ পরাধীন ভারতে গানটির প্রভাব বুঝতে ওপরের ঘটনাটিই যথেষ্ট।

এই গানের বহিরাঙ্গিকে কারার লৌহ–কবাট ভাঙার কথা থাকলেও আদতে বৈষম্য ভাঙার কথা বলা হয়েছে। তাই তো যেকোনো প্রতিবাদে, শোষণের বিপরীতে বৈষম্য ভাঙার অভ্যুত্থানে নজরুলের এই গানের প্রবল উপস্থিতি লক্ষণীয় হয়ে ওঠে সব সময়। প্রতিবাদীর প্রাণের প্রণোদনা হয়ে ওঠে এই গান। গানের ভাবচিত্র দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তাদের প্রতিবাদের মাধ্যমগুলোতে। হয়ে ওঠে স্লোগানও।

আজ শতবর্ষ পরে বৈষম্যহীন সমাজের জন্য দেশে-বিদেশে কত মায়ের সন্তান নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে, অঙ্গ হারাচ্ছে, জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে—তার শুরুটা তো করেছিলেন নজরুল নিজেই। ‘ভাঙার গান’ তথা ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ তো তারই শিল্পসারথি। নশ্বর জীবনে নজরুল মিশে গেছেন প্রকৃতির সঙ্গে; কিন্তু কারার ঐ লৌহ-কবাট ভাঙার যে গান একদা তিনি গেয়েছিলেন, তা আজও ভাঙেনি। নিষিদ্ধের খড়্‌গ মাথায় নিয়েই বেজে চলেছে শতবর্ষব্যাপী। রচনা ও নিষিদ্ধের শতবর্ষ পরেও সব প্রজন্মের মনোলোকে স্থান করে নিয়েছে। আজকের এই দিনেও এই প্রজন্ম যেখানে অবিশ্বাস্য রকম টেকনোলজিক্যালি নৈপুণ্যবান—তারাও শতবর্ষ পূর্বে লেখা ‘ভাঙার গান’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়! এটা কি কম বিস্ময়কর! অথচ এই সমকালে বসেও অনেকেই এসব প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠতে পারে না, শতবর্ষ আগেই নজরুল তা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন এ রকমই চিরতরুণ।

সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘জেলে যখন ওয়ার্ডাররা লোহার দরজা বন্ধ করে, তখন মন যে কী আকুলিবিকুলি করে, কী বলব। তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর সেই গান—“কারার ঐ লৌহ-কবাট”।’ পরাধীন ভারতে গানটির প্রভাব বুঝতে ওপরের ঘটনাটিই যথেষ্ট।

বন্দী থাকা অবস্থায় নজরুল যখন এ গান গাইতেন তখন বন্দীদের জমানো ক্ষোভ গর্জে উঠত। একই দৃশ্য যেন দৃশ্যায়িত হচ্ছে শতবর্ষ পরে। শুধু শারীরিকভাবে নজরুল অনুপস্থিত। বাকি সবই উপস্থিত। আমরা বলে থাকি, ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। তা–ই যেন হয়েছে। তবে ইতিহাসের ফিরে আসাটা বৃত্তাকার নয়। হলে তা মিশে যেত। ইতিহাসের ফিরে আসাটা আসলে স্পাইরাল। ঠিক আগের বিন্দুতে মিলিত হবে না। একটা বাঁক নিয়ে আবার ঘুরতে শুরু করবে। তাই তো নজরুলকে দিয়ে বৈষম্যবিরোধিতার যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তা শতবর্ষ পরেও চলমান। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক ও প্রেক্ষিতে তা প্রয়োগ হতে থাকে।

‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ আসলে সব ধরনের অচলায়তন-দুর্বৃত্তপনা ও বৈষম্য ভাঙার গান। ব্রিটিশরাজের ভয় ছিল, এসব ভাঙলে তাদের সিংহাসনও ভেঙে যাবে। তাই তো আটকে দেওয়া হয়েছিল এই গানের সুর। কিন্তু যা শাশ্বত অধিকারের অংশ, তাকে কোনো নিষিদ্ধতার বাধা দিয়ে আটকানো যায় না। তাই তো আটকানো যায়নি এই গানের সুর। আজ তা আরও অধিকতর প্রয়োজনীয় হয়ে বাজছে।

ব্রিটিশদের বা শোষকদের ভয় মোটেও অমূলক ছিল না। ছিল প্রবল হুমকি। এই হুমকিকে জীবিত রেখে শাসন নির্বিঘ্ন করা যায় না। তাই তো গানটিকে ও ভাঙার গানের অন্যান্য গান হত্যার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়েছে কি? হয়নি। নিষিদ্ধের শতবর্ষ পরেও শোনা যাচ্ছে সদাজাগ্রত ও জীবন্ত গানের সেই সুর। যার প্রাসঙ্গিকতা এখনো চলমান। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে-বিপ্লবে-বিদ্রোহে-সংগ্রামে বাঙালি আজও এই গানের কাছে আশ্রয় খোঁজে। ষাটের দশকের শেষ দিকে যখন আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন তুঙ্গে, তখন বিখ্যাত পরিচালক জহির রায়হানের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি। সেই সিনেমায় পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কারারুদ্ধ রাজনৈতিক বন্দীরা গেয়ে ওঠে এই গান। আলতাফ মাহমুদের সুর করা ও খান আতাউর রহমানের সংগীতায়োজনে এই গানের চিত্রায়ণ ও অভিনেতাদের অভিব্যক্তি এক আইকনিক দৃশ্য হয়ে রয়েছে। নজরুলের গানটির মতোই এই দৃশ্যও বাঙালির কাছে চিরনতুন এবং মুক্তিকামী বাঙালির সংগ্রামী চেতনার সদা প্রতীক।

‘কবাট’ ভাঙার প্রদীপ্ত-দুর্ভেদী-অবিচল যে প্রত্যয়, যে আত্মবিশ্বাস, তা অনেকবারই আমাদের অনাচার ও দুঃশাসন তাড়ানোয় প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। আমরা সফল হয়েছি বারবার। আর এই সফলতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ একাত্তর, যা আমাদের স্বাধীনতার সাধ ও মর্যাদা দিয়েছে।

নিষিদ্ধের নভেম্বর থেকে আজকের নভেম্বর—ব্যবধান শত বছরের অধিক। কিন্তু এর আবেদন ম্লান হলো না একটুও। গেঁথে গেল চিরদিনের প্রতিবাদী-কাঙ্ক্ষায় আর শিল্পসত্তায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম শতবর ষ প এই গ ন র নজর ল র হয় ছ ল র জন য প রক শ আম দ র জন দ শ তখন ব

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত

অপেক্ষার পালা শেষ। প্রায় তিন বছর পর আবার জলে ভাসবে পি এস মাহসুদ। ঢাকা–বরিশাল নৌপথে চলার জন্য শতবর্ষী এই স্টিমারটি সংস্কার করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২১ নভেম্বর শুরু হবে চলাচল।

এক সময় ঢাকার সদরঘাট থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীর অভাবে ২০২২ সালে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিন বছর ধরে অচল থাকা মাহসুদকে নতুন রূপে সাজায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন ঢাকা থেকে বরিশাল যাবে স্টিমারটি। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে, বরিশাল পৌঁছবে রাতে। আগে স্টিমার চলাচল করত রাতে। কিন্তু এবার দিনে স্টিমার চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে মানুষ আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি স্টিমারটির ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘পি এস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদীজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।’

স্টিমার চলা তো শুরু হচ্ছে, কিন্তু এতে একসঙ্গে কত যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে, ভাড়া কেমন পড়বে, টিকিট কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনেকের কৌতূহল। এই প্রতিবেদন তাদেরই জন্য।

কতজন যেতে পারবে

বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল রুটে অনেক বিলাসবহুল লঞ্চ চলালচল করে। লঞ্চগুলো তিন-চারতলা হয়ে থাকে। তবে শতবর্ষী স্টিমার দোতলা। এ কারণে বেশি যাত্রী একসঙ্গে স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ যাত্রী স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন।

স্টিমারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি থাকবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন। এই কেবিনে দুটি শয্যা থাকবে। সেখানে দুজন অনায়াসে ভ্রমণ করা যাবে। প্রতিটি কেবিনের বাইরে চেয়ার পাতা থাকে। সেখানে বসে নদীপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতেও কেবিন সুবিধা রয়েছে। তবে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এটি অবশ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়। এখানেও দুটি করে শয্যা থাকবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২২টি কেবিন রয়েছে স্টিমারে। প্রতিটি কেবিনে দুজন করে যাত্রী থাকলে মোট ৪৪ জন যাত্রী কেবিনে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া স্টিমারের দোতলার মাঝখানের জায়গা তৃতীয় ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য চেয়ার থাকবে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থাকবে না। এখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঅক্টোবরেই নদীতে ফিরছে স্মৃতিময় স্টিমার০৬ অক্টোবর ২০২৫

ভাড়া কেমন

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া সবচেয়ে বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কেবিনের ভাড়া এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ভাড়া ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ দুজন গেলে মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা খরচ হবে সারা দিনের জন্য।

দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই কেবিনের যাত্রীকে মাথাপিছু ২২০০ টাকার কিছু বেশি খরচ করতে হবে।

আর চেয়ারে বসে যেতে চাইলে প্রতি যাত্রীকে ২ হাজার টাকা খরচ করা লাগতে পারে।

বিআইডব্লিউটিসির ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণের খরচের মধ্যে যাত্রীদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি নাশতার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর পরপরই শুরু হবে নাশতা পর্ব।

শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ তিন বছর পর আবার নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করছে। গতকাল শুক্রবার সদরঘাটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
  • শতবর্ষী স্টিমারে চড়বেন কীভাবে, কত খরচ
  • শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত