Risingbd:
2025-11-16@08:50:26 GMT

খুলনায় চুইঝাল চাষে বাজিমাত

Published: 16th, November 2025 GMT

খুলনায় চুইঝাল চাষে বাজিমাত

খুলনার রূপসায় চুইঝাল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের চাষি মো. আবু জাফর। তিনি বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি চুইঝালের চাষও করে আসছেন দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে। বাড়ির মেহগনি বাগানে আনুমানিক অর্ধশত গাছে চুই ঝাল রোপন করেছেন তিনি। 

খুলনা ও রূপসার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আবু জাফরের বাড়িতে গিয়ে চুইঝাল কিনে নিয়ে যান। এতে সীমিত লাভ হলেও তিনি মানসিক প্রশান্তি পান। 

চুইঝাল মসলা জাতীয় ফসল হলেও এতে রয়েছে ঔষধি গুণ। মাংসসহ বিভিন্ন তরকারিতে দিয়ে রান্না করা হয় চুইঝাল। এতে খাবার যেমন সুস্বাদু হয়, তেমনি শরীর ব্যাথা উপসমসহ নানা উপকার রয়েছে এতে।

চাষের দুই থেকে তিন বছরের মাথায় চুইঝাল বিক্রি শুরু করেন চাষিরা। সাইজ অনুযায়ী লতানো এই চুইঝাল গাছ একেকটি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। 

চাষি আবু জাফর বলেন, “বৃষ্টির মৌসুমসহ বিভিন্ন কারণে চুইঝাল গাছ মারা যায়। কিন্তু গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যা করা হলে একটি চুইঝাল গাছ ২০-৩০ হাজার টাকাও বিক্রি করা হয়। চুইঝালে কোন কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। তবে, গাছ দুর্বল হয়ে গেলে জৈবসার ব্যবহার করা জরুরি। এতে গাছের মান ভালো থাকে।”

আবু জাফর জানান, চুইঝালসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেন তিনি। প্রায় ২০ বছর ধরে চাষ করে আসছেন। আনুমানিক ৫০টি গাছে চুইঝাল রোপন করেছেন। ক্রেতারা বাড়িতে এসে চুইঝালের গাছ পছন্দ করে ক্রয় করে নিয়ে যান। 

তিনি বলেন, “চুইঝালে বিভিন্ন রকমের উপকার হয়। আমরা মাংসের ভিতরে দিয়ে খাই। খেতে খুব সুস্বাদু। দুই তিন বছরের মাথায় বিক্রি করা হয়। বড় হলে বিক্রি করে দিই। খুলনা অঞ্চলসহ রূপসা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা বাড়িতে ক্রয় করতে আসেন। বৃষ্টির মৌসুমে এবং বিভিন্ন কারণে চুইঝাল গাছ মারা যায়। তবে ভালোভাবে পরিচর্যা করা হলে কোন ওষুধ ব্যবহার করা লাগে না।”

পূর্ব রুপসা কাঁচাবাজারের খুচরা চুইঝাল বিক্রেতা আলাউদ্দিন ধলা বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে চুইঝাল বিক্রি করি। চুইঝালে খাবারে স্বাদ হয়, শরীরে ব্যাথা কমে এবং অনেক উপকারও রয়েছে। আমি গ্রাম থেকে পাইকারি ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। মোটামুটি চুইঝালের চাহিদা ভালো আছে, বিক্রিও ভালো। চুইঝালগুলো শ্রীরামপুর, কাজদিয়া, নৈহাটি, দেবীপুরসহ মাঝেমধ্যে ফুলতলা থেকেও এনে বিক্রি করি।”

রূপসা বাজারের খুচরা চুইঝাল বিক্রেতা আহাদ বলেন, “চুইঝালের চাহিদা এখনও ভালো। আমি সাত বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। গরুর গোশতের সাথে রান্না করলে আরো বেশি স্বাদ লাগে। বিশেষ করে কুরবানির ঈদের সময় প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ কেজি চুইঝাল বিক্রি হয়। এই সিজনে প্রতিদিন ৫-৭ কেজি চুইঝাল বিক্রি করা হয়।”

ক্রেতা মো.

আব্দুর রাজ্জাক শেখ বলেন, “আমি ১৫-২০ ধরে চুইঝাল কিনি। চুইঝাল খুবই ভালো। গরুর গোশতে দিলে খুব ভালো স্বাদ লাগে, গায়ের ব্যাথাও কমে।”

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে খুলনা জেলায় প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে জেলায় বছরে মোট ২৫০ মেট্রিক টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়। খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা চুইঝাল উৎপাদনের শীর্ষে। এই উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে অর্থকরী ফসল চুইঝাল উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া পাইকগাছায় ৯ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৮ হেক্টর, রূপসায় ৫ হেক্টর এবং ফুলতলায় ৫ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬০০ টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উৎপাদন হয়েছিল ৫৫০টন। প্রতি বছরই এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনলাইনে খুলনার চুইঝাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘উড়া’র স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরণ বলেন, “সারা দেশের ভোজনবিলাসীদের পছন্দের শীর্ষে এখন খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল। কোরবানির ঈদে চুইঝালের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনার চুইঝালের অর্ডার পেয়ে সরবরাহ করেছি। অন্য সময়েও এর চাহিদা থাকে।”

তিনি আরো বলেন, “খুলনার মানুষ অতীতে শখের বশে বসতবাড়ির আশপাশে চুইঝালের চাষ করতেন। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। অনেকে নার্সারির মাধ্যমে চুইঝালের চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। খুলনায় সবচেয়ে বেশি চুইঝাল উৎপাদন হয় সশ্য ভাণ্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলায়।”

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “চুইঝালের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা খুলনার কৃষকদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন চুইঝাল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফিরে দেখা’: শিল্প ও সময়ের মিলিত রূপ

ছবি: আয়োজক সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ