ক্যাম্পেইন শেষ, অথচ টাইফয়েড টিকার কথা জানে না বেদে সম্প্রদায়
Published: 16th, November 2025 GMT
দেশ জুড়ে টাইফয়েড টিকাদান শেষ হয়েছে গত ১৩ নভেম্বর। অথচ, এই টিকা সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানা ছিল না গাজীপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের হোতাপাড়া গ্রামের বেদে সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের শিশুরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শেষ হলেও হোতাপাড়া এলাকায় বসবাসরত বেদে পরিবারগুলো টিকার ব্যাপারে কোনো তথ্যই পাননি। বনের ভেতরে অস্থায়ী তাঁবুতে থাকা এসব পরিবারের সদস্যদের কেউই জানতেন না কোথায়, কীভাবে বা কখন টিকা দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের শিশুদের কেউই টিকা পায়নি।
আরো পড়ুন:
অবহেলিত বেদে পল্লীর মানবেতর জীবন
শীতে কাতরাচ্ছে চাঁদপুরের বেদে জনগোষ্ঠী
স্থানীয়দের মতে, বেদে সম্প্রদায় প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করে। তাদের শিশুরা স্কুলে না যাওয়ায় সরকারি প্রচারণার বাইরে থেকে যায়। কেউ কখনো এসে তাদের টিকার গুরুত্ব বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০০ মিটার উত্তর দিকে হুয়াথাই টাইলস কারখানার কাছে বনের ভেতর রয়েছে কিছু তাঁবু । সেখানে বসবাস করছে আটটি পরিবারের প্রায় ২৫ জন সদস্য। তাঁবুর পাশে খেলাধুলা করতে দেখা যায় ওই পরিবারগুলোর শিশুদের। বিভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান করে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন পরিবারের লোকজন। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের এখানে ৩০টি পরিবার ছিল। বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবার টাঙ্গাইলে চলে গেছে।
গত দুই মাস ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হোতাপাড়া গ্রামে ঢাকা-ময়মনসিংহ মাহাসড়কের পাশের বনের ভেতর তাঁবু তুলে বসবাস করছেন ফজল হক। সন্তানদের টাইফয়েড টিকা দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তারা এমন কিছু শোনেননি। টাইফয়েড টিকা সম্পর্কে তাদের জানা নেই। তাদের সন্তানদের কোনো টিকা দেওয়া হয়নি। কীভাবে ও কোথায় টিকা দিতে হয় তাও জানেন না।
তাঁবুর সামনে খেলায় ব্যস্ত তিন শিশু
তিনি বলেন, “যাযাবর জীবনযাপনে থাকার কারণে তাদের সন্তানরা কেউ স্কুলে যায় না, পাড়ালেখাও করে না।”
ফজল হকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁবুতে তার দুই সন্তান আয়েশা (৭) ও ফারজানা আক্তার (৮ মাস) রয়েছে। এ ছাড়াও, সুখী আক্তার (৮), আল আমিন (৫), মোমিনুল ইসলাম (৩), মো.
জিয়াউল হক নামে অপর বাসিন্দা জানান, তাদের পাড়ার সন্তানরা কেউ কখনো স্কুলে যায় না। তাই দেশে কখন কোথায় কি ঘটছে, তা তারা জানতে পারেন না।
তিনিবলেন, “যেখানে বনের জায়গায় অবস্থান করাই একটা চ্যালেঞ্জ; সেখানে সন্তানের পড়ালেখা, টিকা এগুলোর কথা চিন্তাই করা যায় না। যখন তখন বনের লোকজন এসে তাড়িয়ে দিতে চায়।”
রিভার এন্ড নেচার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকর্মী মো. খোরশেদ আলম বলেন, “তারা তো আমাদের দেশেরই বাসিন্দা। তাদের শিশুরা অন্যান্য শিশুদের মতই স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর উচিত এই শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া।”
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, “যারা এখনো টিকা নেয়নি, তাদের জন্য একটি নির্দেশনা আসতে পারে। আমাদের প্রচারণা স্কুলভিত্তিক হয়েছে। গাজীপুর রিজিওনে এরকম এরিয়া কম। তারপরেও নতুন নির্দেশনা আসলে বেদে সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব দ পর ব র ট ইফয় ড ট ক পর ব র র সন ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফিরে দেখা’: শিল্প ও সময়ের মিলিত রূপ
ছবি: আয়োজক সৌজন্যে