বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোটের ভূমিধস জয়ের কারণ কী?
Published: 16th, November 2025 GMT
১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ইস্যুতে জনসমর্থন গড়ে তুলতে ভারতজুড়ে রথযাত্রার আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদভানি। বিহারে সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। গোটা দেশে লাল কৃষ্ণ আদভানির রথ মসৃণভাবে যাত্রা করলেও বিহারে লালুর বাধায় আটকে যায় আদভানির রথের চাকা।।
আদভানির ‘রাম রথযাত্রা’ বিহারের সমস্তিপুরে প্রবেশ করার পর, তাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে লালুর পুলিশ। এই ঘটনাটি ভারতে ‘মণ্ডল-মন্দির’ রাজনীতির জন্ম দেয়, যেখানে ধর্মীয় ও বর্ণগত মেরুকরণ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন:
ভারত ‘দাদাগিরি’ দেখালে বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে পাবে না: ফখরুল
ভয়াবহ আগুন কলকাতার বড়বাজারে, ঘটনাস্থলে দমকলের ২০ ইঞ্জিন
লালু প্রসাদ যাদবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের গ্রাফ তখন উর্ধ্বমুখী। সেসময় বিহারের রাজনীতিতে বলা হতো- ‘সিঙ্গারায় যতদিন আলু আছে, বিহারের ক্ষমতায় ততদিন লালু আছেন’। এরপর গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একাধিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গান্ধী পরিবারের অনুগত লালু প্রসাদ যাদব সক্রিয় রাজনীতির থেকে বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ে গিয়েছেন জেলে। এরপর স্বাস্থ্য ভেঙেছে। ধীরে ধীরে লালুর রাজনৈতিক দল আরজেডির হারিকেনের হ্যান্ডেল ধরেছে তার ছেলে তেজস্বী যাদব। দল পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় রাখে তেজস্বী। ২০১৫ , ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদলে থাকলেও সাফল্যও মেলে। কিন্তু ২৫ সালের নির্বাচনে পদ্মের ঝড়ে রীতিমতো নিভেই গেছে হারিকেনের আলো।
এদিকে কখনো বিজেপিকে ঠেকাতে জেডিইউ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে, আবার কখনো জোট ভেঙে বিজেপির এনডিএর জোটসঙ্গী হয় রাজনীতিতে পল্টুরাম খ্যাতি পেয়েছে নিতিশ কুমার।
একদিকে যাদব রাজনীতির ঐতিহ্য অন্যদিকে রাজনীতির পল্টুরাম। তারপরেও কেন বিহারের দশম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পল্টুবাবু নিতিশ কুমারেকেই বেছে নিল আমজনতা? বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোটের অবিশ্বাস্য এই জয়ের পিছনে কারণ কী?
এনডিএর মহাকাব্যিক জয়ের একাধিক কারণ বিশ্লেষণ করেছে বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন-
* নিতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট খুব ভালো কাজ করেছে, অথবা
* বিরোধীদের বিরোধী হওয়ার যোগ্যতা নেই বলে ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখন নির্বাচন পরবর্তী রাহুল গান্ধী ঘোষণা দিয়েছেন, এমন শোচনীয় পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করবেন তারা। নিশ্চিতভাবে বিশ্লেষণ করবে আরজেডি নিজেও।
টু দ্য পয়েন্ট আলোচনা করলে বিহারে বিরোধীদের পরাজয়ের কারণ বা এনডিএ-র সাফল্য বলতে গেলে প্রথমেই তিনটি বিষয়ে বলতে হয়। যেগুলো নিতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ করে দেখিয়েছে। নিতিশকে বিহারের রাজনীতির ভিত তৈরি করতে যে তিনটি কারণ মূল সহযোগিতা করেছে এবং ভোট বাক্সে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে-
* বিহারের সুশাসন ও নিরাপত্তা। বিহার নিরাপদ এখন এটা বিহারে পা দিলে অনুভব করা যায়। রাত ২টার সময় একজন নারী শুনশান সড়কে ভয়ডরহীন ঘুরে বেড়াতে পারে। এই বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে বিহারের পুলিশি ব্যবস্থা কতটা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে। নিতিশ কুমারের অপরাধের প্রতি জিরো টলারেন্স বিহারে সুশাসন কায়েম করেছে। যেটা আজ থেকে ১০ বছর আগেও কল্পনা করা যেত না।
* বিহারের রাস্তাঘাট। বিহারের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছোট রাস্তা পর্যন্ত পাকা সড়কের আওতায় এসেছে। অর্থাৎ পাকা সড়কের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সুবিধা দেওয়ার যে প্রকল্প সেটা নিতিশ কুমার নিয়েছিলেন সেটা তাকে সুবিধা দিয়েছে।
* বিদ্যুৎ, শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সর্বত্র ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ সংযোগ।
এছাড়াও ভোটে নির্দিষ্ট সুবিধা দিয়েছে কোন কোন বিষয়গুলো যদি আলোচনা করা হয় তাহলে প্রথমে আসবে বিরোধীদের প্রতি বিহারের আমজনতার ঘৃণা ভোট, কংগ্রেসের প্রতি বিহারবাসীর অনাস্থা, নারী ভোটের ম্যাজিক, মদ ব্যান, নীতিশের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি ও খোদ মহাগাটবন্ধন জোটের প্রচার দুর্বলতা।
* ঘৃণা ভোট: সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে শুরুতে বিরোধী মহাজোটের তরফে তেজস্বী যাদবকে যখনই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয় তখনই আবারও কুড়ি বছর আগের জঙ্গল রাজের দিনগুলোর স্মৃতি মানুষের মনে উঠে আসে। সেই সঙ্গে জঙ্গল রাজের অতীত তুলে বিজেপির নিবিড় প্রচার। মানুষের মধ্যে একটা বিষয় স্পষ্ট করে তোলে ক্ষমতায় আর যেই আসুক যাদব পরিবার নয়। স্পষ্টতই যাদব পরিবারের প্রতি ঘৃণা ভোটের একেবারে পজিটিভ প্রতিফলন ঘটেছে এনডিএর ভোট বাক্সে ।
* কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থা: বিহারে আরজেডি কংগ্রেসের দশকের পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে যে- ‘যে হাতে (কংগ্রেসের প্রতীক হাত) হারিকেন (আরজেডির প্রতীক হারিকেন) ধরানো হয়েছে সেই হাত বিহারবাসীকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি।’ একথা তখন প্রচলিত ছিল তখন কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই মুহূর্তে কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে নিষ্প্রভ। বিধানসভার ৬১ আসনের লড়াইয়ে কংগ্রেস মাত্র ৬টি আসনে জেতার মতো লজ্জাজনক ফলাফলের পরই কংগ্রেসকে দুষেছে খোদ জোট শরিকরা।
রাহুল গান্ধীর ‘নেতৃত্বে’ থাকা কংগ্রেসকে ডুবন্ত নৌকার সঙ্গে তুলনা করে খোদ জোটসঙ্গীদের থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারাও বলেছেন, “তিনি (রাহুল) নিজেও ডুবছেন, জোটসঙ্গীদেরও ডোবাচ্ছেন। তিনি সবসময় অ্যাটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমার কথা বলে বেড়ান। আমার মনে হয়, তিনি সব বোমা নিজের দল এবং জোটসঙ্গীদের উপরই ফাটিয়েছেন।”
* নারী ভোট ও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি: বিহারের অতীত বর্তমান ঘাটলে দেখা যাবে ভারতের অন্যান্য যেকোনো রাজ্যের তুলনায় বিহারে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিমাণ বেশি। রাজ্যে কাজ না থাকায় বিহারী পুরুষেরা প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে কাজ করতে চলে যায়। সেক্ষেত্রে বিহারের ভোটেও নারী ভোটের সংখ্যা বেশি। সদ্য নির্বাচনে মোট ভোটারের ৭১.
এছাড়াও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি হিসেবে গৃহস্থদের ঘর পিছু ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন নীতিশ। এরই সাথে ছিল রাজ্যটির এক কোটির বেশি সিনিয়র নাগরিক, বিধবা, শারীরিকভাবে অক্ষমদের পেনশনের অর্থ বৃদ্ধির ঘোষণা। ৪০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ১১০০ রুপির ঘোষণা দিতেই বেকারত্বের সমস্যা ভুলে রাজ্যের মানুষও দুহাত তুলে ভোট দিলেন এনডিএ-কে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারে বারে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বিহারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা উন্নতিসহ একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেটাও কাজে দিয়েছে তাদের ভোট জয়ের ক্ষেত্রে।
* মদ নিষিদ্ধ: ভারতের বড় বড় রাজ্যগুলো আবগারি আয়ের লোভে যা করে দেখাতে পারেনি নীতিশ কুমার সেটা করে দেখায় রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মদ নিষিদ্ধ করায় দীর্ঘমেয়াদে সুশাসন পেয়েছে বিহার।
একদিকে যেমন অপরাধ কমে যায় অন্যদিকে তেমন কমে যায় গার্হস্থ্য বিবাদ, নারীদের উপর অত্যাচার। যেসব পরিবারগুলো নেশার কারণে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল তারাও সে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসে। এইসব পরিবারগুলো বর্তমানে নীতিশের শক্ত ভোট ব্যাংক।
* বিরোধীদের প্রচার দুর্বলতা: কংগ্রেস ও জেডিইউ জোটের পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত প্রচার তাদেরই বিপক্ষে গেছে। মহাগাটবন্ধন জোট যখন বিহারে রোজগার নেই এমন ইস্যু তুলে পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত প্রচার তুঙ্গে তুলেছে, তখন বিরোধীদের এমন প্রচারকেই হাতিয়ার করেছে এনডিএ। সরাসরি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোতে বিহারীদের লাগাতার হেনস্থার ইস্যুগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনডিএ জোটের এত বড় জয়ের পিছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো আলোচনা না করলেই নয়।
* রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ প্রসাদ বসু বলছেন, বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লিতে যে জোট তৈরি হয়েছে তার কোনো প্রভাব তৃণমূল স্তরে পড়েনি। নির্বাচনে যে বিরোধী জোট লড়াই করেছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তৃণমূল স্তরে বন্ধুত্বপূর্ণ নির্বাচনী লড়াই করেছে। ২৪৩ আসনে জোটের প্রার্থী ছিল ২৫৪ জন! এই রাজনীতি বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচনে কোনো লড়াই বন্ধুত্বপূর্ণ হয় না। সেক্ষেত্রে এনডিএ বিরোধী ভোট সরাসরি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।
* বিহার নির্বাচনে কংগ্রেস ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন বা এসআইআরকে ব্যাপকভাবে প্রচারে আনার চেষ্টা করেছে। বলা ভালো এসআইআর এর মাধ্যমে ভোট চুরি ইস্যুকে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। যেখানে বিহারের স্থানীয় ইস্যুগুলো থেকে কংগ্রেস অনেকটা দূরে থেকে গেছে। ভোটারদের কানেক্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
* কট্টর হিন্দুত্ববাদের ভোট: বিহার নির্বাচনে বিজেপি একটি আসনেও সংখ্যালঘু মুসলিমদের টিকিট না দিয়ে তাদের হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার মডেল পরোক্ষভাবে ভোটারদের বুঝিয়ে দেয়। এবং ভোটারদের এক প্রকার বার্তা দেয়া হয় সংখ্যালঘু ভোট ছাড়াই জিতে আসবে বিজেপি। ফলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের ভোট বিজেপিকে ৮৯ আসনে জিতিয়ে বিহারের সব থেকে বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে।
* প্রশান্ত কিশোর ফ্যাক্ট: বিহার বিধানসভার নির্বাচনের আগে প্রত্যাশা জাগালেও ভোটের ফলাফলে কোনো ছাপই ফেলতে পারেনি ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) ‘জন সুরজ পার্টি’। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের খাতাই খুলতে পারেনি তারা। তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। তবে এনডিএ বিরোধী ভোট কাটার ক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের দল অন্তত ৩৬ আসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেখানে এনডিএ প্রার্থীদের জয়ের মার্জিন দশ হাজারেরও কম।
সবমিলিয়ে একটি নয়, একাধিক কারণে রীতিমতো হতাশাজনক ভরাডুবি ঘটেছে মহাগাঁটবন্ধনের। পরাজয় স্বীকার করে দিয়েছে কংগ্রেস, আরজেডি। তবে এতসবের মধ্যেও আশঙ্কা নীতিশের স্বাস্থ্য। অনেকেই বলছেন, নীতিশের স্বাস্থ্যের যা অবস্থা সেই অবস্থায় পরবর্তী পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রীত্ব চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কঠিন। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিতিশকে নতুন কাউকে তুলে আনতে হবে। অন্যদিকে, এই কথাও উঠছে যে- রাজ্যের বড় দল হিসেবে বিজেপি উঠে আসায় তারাও মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবি করতে পারে। যদিও কেন্দ্রে নিতিশের সমর্থনে বিজেপির এনডিএ সরকার টিকে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব হ র ব ধ নসভ ম খ যমন ত র র জন ত ক র র জন ত র জন ত র র জন ত ত পর ব র প রস দ আরজ ড আদভ ন বলছ ন এনড এ
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।