আওয়ামী লীগের মতোই গোপনে বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে: বাম জোট
Published: 16th, November 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও গোপনে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
চট্টগ্রামের লালদিয়ার এবং ঢাকার পানগাঁওয়ের কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিযোগ করা হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার বদলে এসব চুক্তির মাধ্যমে তা ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে একের পর এক গোপন চুক্তি করেছিল, বর্তমান সরকারও একইভাবে গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে।’
১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির এক সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটি সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানিকে দিয়ে পুনরায় চালু করার আলোচনাও হয় ওই সভায়।
‘দেশবিরোধী’ এসব চুক্তি রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সমাবেশে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ এগুলো নয়। আপনাদের কাজ হলো দ্রুত একটা সাধারণ নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া। কিন্তু সেটি না করে একের পর এক দেশের স্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে।’
সমাবেশে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই চুক্তি হলে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। সব জিনিসপত্রের ওপর শুল্ক বসবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের অংশ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সম্পদের ওপর বড় আঘাত।’
সরকারকে এসব চুক্তি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারা দেওয়ার মানে দেশের বন্দরকে নিরাপত্তাহীন করে ফেলা। দেশকে আরও বৈষম্যের দিকে ঠেলা দেওয়া। আমরা সেটি হতে দেব না। অবিলম্বে এই চুক্তি থেকে সরে আসুন। দেশীয় মালিকানায় বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। না করলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকারের ওপর কী দায়িত্ব ছিল, আর তিনি কী করছেন? আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল তুলে দিয়ে তাদের দালালি করছেন। সাম্রাজ্যবাদীর দালালি করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন, সেটা হবে না।’
বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানাও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাম জোট।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।