অসম প্রেমের গল্প: বক্স অফিসে কতটা জমেছে অজয়-রাকুলের রসায়ন?
Published: 16th, November 2025 GMT
পরিচালক আকিব আলী নির্মিত হিন্দি সিনেমা ‘দে দে পেয়ার দে’। সিনেমাটিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অজয় দেবগন, টাবু ও রাকুল প্রীত সিং। ২০১৯ সালের ১৭ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। বক্স অফিসেও দারুণ সাড়া ফেলেছিল সিনেমাটি।
দীর্ঘ ছয় বছর পর নির্মিত হয়েছে ‘দে দে পেয়ার দে টু’। আকিব আলীর পরিবর্তে দ্বিতীয় পার্ট পরিচালনা করছেন অংশুল শর্মা। নির্মাতা বদলে গেলেও সিনেমাটিতে ৩৫ বছর বয়সি রাকুলের সঙ্গে ফের জুটি বেঁধেছেন ৫৬ বছর বয়সি অজয়। তবে সিনেমাটিতে নেই টাবু। গত ১৪ নভেম্বর বিশ্বের সাড়ে ৩ হাজার পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘দে দে পেয়ার দে টু’। চলুন জেনে নিই, দুই দিনে কত টাকা আয় করেছে সিনেমা।
আরো পড়ুন:
দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে নাম জড়াল নোরার, অভিনেত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি
তারকাবহুল পাঁচ সিনেমার বক্স অফিসে ভরাডুবি
বলি মুভি রিভিউজ জানিয়েছে, মুক্তির প্রথম দিনে ‘দে দে পেয়ার দে টু’ সিনেমা আয় করেছে ৮.
স্যাকনিল্প এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুই দিনে ‘দে দে পেয়ার দে টু’ সিনেমা বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ২৯.২৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা)।
বক্স অফিসে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি ‘দে দে পেয়ার দে টু’। তবে দর্শক-সমালোচকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের চলচ্চিত্র সমালোচক শুভ্রা গুপ্তা বলেন—“সিনেমাটির দৈর্ঘ্য আমাকে অস্থির করে ফেলেছে।” পাঁচে আড়াই রেটিং দিয়েছেন তিনি। ইন্ডিয়া টুডের বিনীতা কুমার বলেন, “দে দে পেয়ার দে টু’ একটি মজাদার, হালকা রম-কম, যা হাস্যরস, পারিবারিক নাটকীয়তাকে একত্রিত করেছে। কাস্টিং কিছুটা অস্বস্তিকর হলেও সিনেমাটি নিরাশ করেনি।” পাঁচে ৩ রেটিং দিয়েছেন তিনি।
‘দে দে পেয়ার দে’ সিনেমার গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই শুরু দ্বিতীয় পার্টের গল্প। এতে ২৮ বছর বয়সি আয়েশার প্রেমে পড়বেন ৫২ বছর বয়সি আশীষ। এ দুটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাকুল প্রীত সিং ও অজয় দেবগন।
সিনেমাটির দ্বিতীয় পার্টের বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে—আর মাধবন, জাভেদ জাফেরি, ইশিতা দত্ত, সঞ্জীব শেঠ প্রমুখ। প্রথম পার্ট নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৭৮ কোটি রুপি, আর দ্বিতীয় পার্টে ব্যয় হয়েছে ১০০ কোটি রুপি। এটি প্রযোজনা করেছেন লাভ রঞ্জন, অঙ্কুর গার্গ, ভুষণ কুমার, কৃষ্ণ কুমার।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র অজয় দ বগন বছর বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয়
শ্রীলঙ্কার মাঠে সেদিন দুপুরটা ছিল অস্বস্তিকর গরমের। এর সঙ্গে যোগ হলো ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই লঙ্কান ব্যাটারের তাণ্ডব। দুজনের ভাবভঙ্গিতে যেন ফুটে উঠল না–বলা কথা—‘আমরা থামব না।’ দ্রুত বাউন্ডারি আসছিল, রানের চাকা ঘুরছিল। হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের বোলাররা।
এরপর হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়। দেড় শ রানের অটল জুটি ভেঙে দিয়ে খেলার গল্প বদলে দেন যে ছেলেটি—তিনি নাঈম হাসান।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে নাঈম যেন মাঠে এক ‘ঘূর্ণিঝড়’ বইয়ে দেন। বাংলাদেশের দল হঠাৎ পায় নতুন প্রাণ, নতুন ছন্দ। সেই ম্যাচ ড্র হয়; কিন্তু নাঈমের বোলিংয়ের জাদু থেকে যায় গ্যালারির গুঞ্জনে, ভক্তদের আলোচনায়। এ বছরের জুনে শ্রীলঙ্কার গলে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নাঈম। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার বল করেন তিনি। দেন সবচেয়ে কম রান।
চট্টগ্রামের আলো–বাতাস গায়ে মেখে বড় হওয়া ছেলে নাঈম। পাড়ার মাঠ থেকে উঠে এসে আপন আলোয় জ্বলে ওঠা অদম্য স্পিনার। স্পটলাইট থেকে দূরে দাঁড়িয়ে নিজের খেলাটাকে নিখুঁত করে তুলতে যাঁরা চেষ্টা করেন—নাঈম তাঁদের একজন। দলে থাকেন, পারফর্ম করেন, আবার নিঃশব্দে সরে যান। আলোচনার কেন্দ্রে তিনি থাকেন না, কিন্তু তাঁর বোলিংয়ের ঘূর্ণি মাঠের বাইরের সব আলো নিজের দিকে টেনে নেয়।
শুরুটা সেই গলির মাঠেনাঈমের ক্রিকেটে হাতেখড়ি কৈশোরে। টেপ টেনিসের উচ্ছ্বাস, গলির ক্রিকেটের পাগলামি; যেখানেই ব্যাট-বল, সেখানেই ছুটে যাওয়া। খেলাপাগল ছেলেটির ব্যাটে জোর ছিল, বোলিংয়েও তেমন দাপুটে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট থেকে বলের দিকেই বেশি ঝুঁকে গেলেন তিনি।
পাহাড়-সাগর-হ্রদে ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফরিদারপাড়া এলাকা। নাঈমের ছোটবেলার পথচলা শুরু হয়েছিল এই এলাকাতেই। তাঁদের বাড়িটি একসময় লোকের কাছে ‘মাহবুব কাউন্সিলরের’ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের স্রোতে সেই নাম পাল্টে গেছে। এখন মানুষ চেনে ক্রিকেটার ‘নাঈম হাসানের বাড়ি’ হিসেবে।
জাতীয় দলের খেলা হলে ফরিদারপাড়ার মানুষ বসে যান টিভির সামনে। যখন নাঈম বল হাতে এগিয়ে আসেন, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস–উত্তেজনা বেড়ে যায়। দরজা-জানালার ফাঁক দিয়ে শুনতে পাওয়া যায় সম্মিলিত ফিসফাস—‘উইকেট চাই নাঈম, উইকেট চাই’। নাঈমের ছোট সাফল্য-ব্যর্থতাতেও মানুষের অনুভূতির ছায়া লেগে থাকে এ এলাকায়।
সমুদ্রপাড়ে লেখা ইতিহাস২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর। চট্টগ্রামের সমুদ্রঘেঁষা সাগরিকা স্টেডিয়ামের সকালটা যেন একটু উজ্জ্বল ছিল সেদিন। নাঈমের চোখে আলো, মনে উত্তেজনা। হয়তো তার চেয়েও বেশি ছিল একধরনের নীরবতা, যেটা বড় দিনে বড় খেলোয়াড়ের মনেই জন্ম নেয়। জাতীয় টেস্ট দলের জার্সিটি প্রথমবার তাঁর গায়ে ওঠে সেদিন। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ২৮৩ দিন। শুরুর দিনেই তিনি ইতিহাস লিখে ফেললেন। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড গড়েন চট্টগ্রামের এই সন্তান। মাঠে তখন উৎসব।
স্টেডিয়াম পেরিয়ে উৎসব শুরু হয় ফরিদারপাড়ার বাড়িতেও। নাঈমের মা মমতাজ বেগম পরে বলেছিলেন, ‘চোখে পানি এসে গিয়েছিল। গর্বে, আনন্দে, বিস্ময়ে।’ টিভিতে তাঁর ছেলেকে বল করতে দেখে নীরবে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেটা জাতীয় দলে খেলছে।’
হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়।সাগরিকা স্টেডিয়াম সেই থেকে নাঈমের কাছে শুধু একটা মাঠ নয়, এটাই তাঁর আত্মবিশ্বাসের ঘর। এখানে পাঁচ উইকেটের পর অন্য ম্যাচে ৬ উইকেটও নিয়েছেন। এই মাঠেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন নিজের ছন্দ, নিজের সত্তা।
তবু আফসোসনাঈমের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে একধরনের বৈপরীত্য চোখে পড়ে। সাত বছরে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৪ টেস্ট। এর মধ্যে চারবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। ৬৯ ম্যাচে ২৭৬ উইকেট। ১৮ বার ৫ উইকেট ও ৩ বার নিয়েছেন ১০ উইকেট।
বিপিএলে নাঈমের নামের পাশে আছে ৩০ উইকেট। চিটাগং ভাইকিংস, কুমিল্লা ভিকটোরিয়ানস, ফরচুন বরিশাল, সিলেট থান্ডার্স—এসব দলে খেলে তিনি হয়ে উঠেছেন পরের প্রজন্মের অফস্পিনের প্রতিশ্রুতি।
প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যায়—নাঈম নিজের খেলা নিয়ে কতটা মনোযোগী। তিনি নিজের স্পেল নিয়ে ভাবেন, চক্র ভেঙে কীভাবে ব্যাটসম্যানকে ভুল করানো যায়, তা নিয়েই থাকেন।
যে স্পিনার এতটা ধারাবাহিক, তাঁকে আরও বেশি সুযোগ না দেওয়ার আক্ষেপ থেকেই যায়। নাঈমের বাবা মাহবুবুল আলমের চোখের কোণে সেই আক্ষেপ জমে আছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাঈমকে নিয়ে আমাদের গর্ব আছে। কিন্তু সে সুযোগ পায় কম। আরও সুযোগ পেলে নামের পাশে উইকেটের সংখ্যা ভিন্ন হতো।’
নাঈম হাসান