খুলনা-৬ আসনে নির্বাচনের মাঠে ‘বেহেশতের টিকিট’ বিতর্ক
Published: 16th, November 2025 GMT
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের নির্বাচনী মাঠে হঠাৎ করেই সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হয়ে উঠেছে ‘বেহেশতের টিকিট’। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তীব্র বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত হচ্ছে ভোটের মাঠ।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কয়রা উপজেলার ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত নির্বাচনী প্রচার সভায় দলের মনোনীত প্রার্থী ও খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব মনিরুল হাসান অভিযোগ করেন, দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়ার ‘টিকিট’ মিলবে—জামায়াত এমন প্রলোভন দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের মিথ্যা প্রচার ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার। যারা এসব বলে এবং যারা বিশ্বাস করে, উভয়ই সমানভাবে দায়ী।
মনিরুল হাসান দাবি করেন, জামায়াত ধর্মের ভয় দেখিয়ে সরলমনা নারীদের বিভ্রান্ত করে ভোট নিতে চাচ্ছে। বিএনপির কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এসব বিভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করছেন।
সভায় মনিরুল হাসান বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীকে ‘বহিরাগত’ বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও তিনি খুলনার অন্য একটি উপজেলার সন্তান, তবু এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘খুলনা-৬ আসনের জামায়াত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদও খুলনা শহরে থাকেন এবং কয়রা-পাইকগাছায় তাঁর স্থায়ী বাড়ি নেই। উনি যে খুলনা থেকে এসে নির্বাচন করছেন, আমিও একইভাবে করছি।’
মনিরুল হাসান বলেন, ‘জামায়াত প্রার্থীর জন্ম ভারতে এমন কথাও মাঠে শোনা যাচ্ছে। অথচ আমার জন্ম খুলনায়, এ কারণে এই জনপদে আমার অগ্রাধিকার বেশি।’ অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় জামায়াতের প্রার্থীকে এমপি নির্বাচিত করা হলেও কয়রা-পাইকগাছায় উন্নয়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও একই আসনের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেহেশতের টিকিট’ দেওয়া বা বিক্রির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘উনি যদি এমন কোনো টিকিট কারও কাছ থেকে দেখাতে পারেন, তাহলে বুঝব তাঁর অভিযোগ সঠিক। এটি নিছক অপপ্রচার।’ নিজের জন্মস্থান ও বাড়ি নিয়ে প্রচারকে তিনি মিথ্যাচার উল্লেখ করে বলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামেই তাঁর পৈতৃক বাড়ি আছে।
এদিকে ‘বেহেশতের টিকিট’ নিয়ে সর্বশেষ ব্যাখ্যা এল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের কাছ থেকে। গত বৃহস্পতিবার দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, তাঁরা কোনো টিকিট বিক্রি করেন না। কোরআন-হাদিসে জান্নাত-জাহান্নামের পথ স্পষ্টভাবে বর্ণিত—সেটাই তাঁরা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর ব্যাখ্যা, সৎ প্রার্থীকে ভোট দিলে ভোটারও সওয়াব পান, আর দুর্নীতিবাজকে ক্ষমতায় বসালে তার পাপের একটি অংশ সেই ভোটারের ওপরও বর্তায়। এটাকে যদি কেউ ‘বেহেশতের টিকিট’ বলে মনে করেন, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব হ শত র ট ক ট মন র ল হ স ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড় সদর ও পৌর যুবদলের নতুন কমিটি বাতিলের দাবি
পঞ্চগড় সদর উপজেলা ও পৌর যুবদলের পূর্বের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে সম্প্রতি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে এই কমিটি বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে আগের কমিটির নেতারা।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) পঞ্চগড় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে এ দাবি তোলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. বশির, পৌর যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ময়নুল ইসলাম ও সদস্য সচিব নূর ইসলাম দিপু।
আরো পড়ুন:
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবি
পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
তাদের অভিযোগ ত্যাগী, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিধিবহির্ভূতভাবে তথাকথিত একতরফা ও পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চগড়-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ কমিটি অনুমোদন করেছেন।
তারা বলেন, মূলত উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু নতুন কমিটির ব্যাপারে জেলার নেতারা কিছু জানে না। এখানে ত্যাগী ও বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়া এবং নির্যাতিতদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, তারা কখনো যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। তারা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদ পেতে অন্তত তিন বছর যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু তারা কেউ যুবদলের রাজনীতি করেনি।
বক্তব্যে পঞ্চগড় পৌর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব নুর ইসলাম দিপু বলেন, ‘‘নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কখনোই যুবদলে ছিলেন না। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই কমিটি বিলুপ্ত না করা হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে ত্যাগী নেতারা।’’
সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. বশির বলেন, ‘‘উপজেলার নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি কখনো উপজেলা যুবদলে ছিলেন না। তার বাড়ি পৌরশহরে। পৌরসভায় বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও বিধিবহির্ভুতভাবে উপজেলা কমিটিতে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে।’’
পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, ‘‘নতুন কমিটির বিষয়ে আমরাও জানতাম না। হঠাৎ করে জানতে পেরেছি কাগজের মাধ্যমে। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেননি।’’
ঢাকা/নাঈম/বকুল