তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে এসেছেন মরিয়ম খাতুন। শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেখভাল করছিলেন তিনি। দ্বিতীয় শ্রেণিতে চলছিল মৌখিক পরীক্ষা। সে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তাহমিনা আক্তার নামের আরেক অভিভাবক। তৃতীয় শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষা নিচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন। 

প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যখন পরীক্ষার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, তখন অফিস কক্ষে বসে কর্মবিরতি পালন করছিলেন চার সহকারী শিক্ষক। 

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে এমন চিত্র দেখা যায় ঢাকার ধামরাইয়ের ডেমরান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সরেজমিনে ধামরাইয়ের আরো কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, সহকারী শিক্ষকরা পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন। কয়েকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও অভিভাবকদেরকেও পরীক্ষা নিতে দেখা যায়। আবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের দেখভালও করতে দেখা যায় তাদেরকে।

ডেমরান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির কক্ষে হইচই করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের শান্ত করতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায় অভিভাবক মরিয়ম খাতুনকে। তার দুই কন্যা ও এক পুত্র পড়ে এ বিদ্যালয়ে। 

মরিয়ম খাতুন বলেন, শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন না। তারা ক্লাসে যাচ্ছেন না। বাচ্চারা ক্লাসে হৈ-হুল্লোড় করছে। শিক্ষক না থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদেরকেই আসতে হচ্ছে।

একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তাহমিনা আক্তার। তার ছেলে পড়ে এই শ্রেণিতে। 

তাহমিনা আক্তার বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার কেউ নেই। তাই, এভাবে নিজেই পরীক্ষা নিচ্ছি প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে। 

বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে চলছিল লিখিত পরীক্ষা। সেখানে প্রশ্নপত্র বিতরণ ও পরিদর্শকের কাজ করছিলেন প্রধান শিক্ষক মো.

আমজাদ হোসেন। 

তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে। তাই, শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে একাই সব চালিয়ে যাচ্ছি।

কর্মবিরতিরত শিক্ষকরা জানান, সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড করা, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবি তাদের। এসব দাবি না মানলে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। 

সহকারী শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। অবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই। 

সুমাইয়া আক্তার নামে অপর এক সহকারী শিক্ষক বলেন, আমরা সারা বছর বাচ্চাদের পড়াই। কিন্তু, আমরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছি না। তাই, এই কর্মবিরতি। দ্রুত আমাদের দাবি না মানা হলে এই কর্মসূচি চলবে।

ধামরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোবাখখারুল ইসলাম মিজান বলেছেন, আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে চেষ্টা করছি। কর্মবিরতির বিষয়েও খোঁজ রাখা হচ্ছে। 

ঢাকা/সাব্বির/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করছ ল ন শ ক ষকর পর ক ষ সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সুখীরাম উরাং (২৫) নামের বাংলাদেশি এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুখীরামের বাড়ি কর্মধার মুরইছড়া বস্তি এলাকায়।

স্থানীয় লোকজনের বরাতে কুলাউড়া থানা-পুলিশ জানায়, সুখীরাম বেলা দেড়টার দিকে মুরইছড়া সীমান্তের ১ হাজার ৮৪৪ ও ১ হাজার ৮৪৫ নম্বর মূল সীমান্তখুঁটি এলাকায় গরু চরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তাঁর পিঠে গুলি লাগলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে সুখীরাম মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মুরইছড়া সীমান্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৬ ব্যাটালিয়নের আওতায় পড়েছে। এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাটি শুনেছেন। সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ মারা যেতে পারেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ