বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বৃহস্পতিবার ভারতে আসছেন। সঙ্গে আসছে তাঁর নিরাপত্তা বহর। এই বহরে আছে তাঁর ব্যবহৃত বিলাসবহুল সাঁজোয়া লিমোজিন গাড়ি অরাস সেনাট। এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত যানবাহনগুলোর একটি।

চার বছরের মধ্যে এটি পুতিনের প্রথম ভারত সফর। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনায় অংশ নেবেন এবং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন।

যেসব বিশ্বনেতা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পুতিন। তিনি তাঁর সব সফরে বিশেষায়িত লিমোজিনটি নিয়ে যান।

অরাস সেনাটের খুঁটিনাটি

অরাস সেনাট রাশিয়ার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বিলাসবহুল লিমোজিন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ও সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এটি। গাড়িটির ভেতরের অংশ অত্যন্ত বিলাসবহুল ও উচ্চ-প্রযুক্তিতে তৈরি।

রুশ মডেলের এই লিমোজিনের আগে পুতিন মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস ৬০০ গার্ড পুলম্যান ব্যবহার করতেন। তবে পরে মস্কো আমদানি করা গাড়ির পরিবর্তে নিজেদের কোর্তেজ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত গাড়ি সরকারি কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। সরকারের জন্য অতি বিলাসবহুল ও সম্পূর্ণ সাঁজোয়া যান তৈরির জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালে পুতিনের শপথ অনুষ্ঠানে অরাস সেনাট উন্মোচন করা হয়। রাশিয়ার নামী ইনস্টিটিউট সোলার্স জেএসসি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তাওয়াজুন হোল্ডিংয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রকল্পের আওতায় অরাস মোটরস গাড়িটি তৈরি করে।

২০২১ সালে এই লিমোজিনের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়। এর পর থেকে লিমোজিনটি উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন কূটনৈতিক মুহূর্তে দেখা গেছে। ২০২৪ সালে এটি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে উপহার দেওয়া হয়।

কেন অরাস সেনাটকে ‘অভেদ্য’ বলা হয়

চরম হুমকির মুখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের সক্ষমতা রয়েছে অরাস সেনাটের। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

লিমোজিনটি সম্পূর্ণ বুলেটপ্রুফ। এটির ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিরোধের সক্ষমতা রয়েছে। গাড়িটি পানিতে পড়ে গেলে ভেসে থাকতে পারে ও নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর আগপর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। সব টায়ার নষ্ট হয়ে গেলেও গাড়িটি উচ্চগতিতে চলতে পারে।

রাসায়নিক হামলা প্রতিরোধে গাড়ির কেবিনে রয়েছে স্বতন্ত্র বায়ু-পরিশোধন ব্যবস্থা, যা ভেতরে বিষাক্ত গ্যাস ঢুকতে দেয় না। গাড়িটির ইঞ্জিন এত বেশি শক্তিশালী যে এটি ঘণ্টায় শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি ওঠাতে মাত্র ৬ থেকে ৯ সেকেন্ড সময় নেয়।

গাড়িটির ভেতরের অংশ অত্যন্ত বিলাসবহুল। চামড়ার আসন, হাতে বানানো কাঠের প্যানেল, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে।

অরাস সেনাটের দাম

অরাস সেনাটের সাধারণ সংস্করণের দাম প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ রুবল। পুতিনের জন্য তৈরি বিশেষ সাঁজোয়া সংস্করণে গোপন নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এটির দাম সাধারণ মডেলের প্রায় দ্বিগুণ। এ সংস্করণ সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি করা হয় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অর স স ন ট র ব ল সবহ ল ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

১২ বছরে ৩০ প্রচেষ্টার পর অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি পেলেন রুট

অবশেষে জো রুটের লম্বা সময়ের অপেক্ষার অবসান হলো। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১২ বছরের দীর্ঘ ‘সেঞ্চুরি খরা’ ভেঙে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কে পা রাখলেন। আজ বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গাব্বায় দিবা-রাত্রির টেস্টে ১৮১ বল খেলে পেলেন ক্যারিয়ারের বহু প্রতীক্ষিত মাইলফলক। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ৪০তম এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৪৯তম সেঞ্চুরি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সেঞ্চুরি পেতে তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সতীর্থ জ্যাক ক্রলি। যার সঙ্গে রুট গড়েছেন ১১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।

পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজের এই সিরিজে রুটের ওপর ছিল অজস্র চাপ। গত কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছেন তিনি। আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি! তা যেন ভাগ্য এড়িয়ে চলছিল। ১৬টি টেস্ট খেলে একবারও তিন অঙ্কে না পৌঁছানো, রুটের মতো মানের ব্যাটারের জন্য ছিল কিছুটা হতাশাজনকও।

আরো পড়ুন:

ওয়াসিম আকরামের রেকর্ড ভেঙে শীর্ষে স্টার্ক

আফ্রিদিকে পেছনে ফেলে ছক্কার বিশ্বরেকর্ড গড়লেন রোহিত

এমনকি কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ম্যাথিউ হেইডেন পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন- এই অ্যাশেজেও রুট যদি সেঞ্চুরি করতে না পারেন, তবে তিনি নাকি এমসিজিতে নগ্ন হয়ে হাঁটবেন! অবশেষে সেই অস্বস্তিকর আলোচনা ও বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটলো। কারণ রুট অস্ট্রেলিয়ায় পেলেন তার প্রথম টেস্ট শতক, আর হেইডেনও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।

আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। সেই অবস্থায় ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ককে। মিচেল স্টার্ক আবারও দুর্দান্ত শুরুর আঘাত হেনে ফেরান বেন ডাকেট ও অলি পোপকে শূন্য রানে। সেখান থেকে ক্রলিকে সঙ্গে নিয়ে ১১৭ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরান রুট। ক্রলি যখন ৭৬ রানে আউট হয়ে যান, তারপরও রুট হ্যারি ব্রুক ও বেন স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখেন এবং একাই হয়ে ওঠেন ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ।

বিভিন্ন দেশে জো রুটের সেঞ্চুরি সংখ্যা:
ইংল্যান্ড – ২৪টি
ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ৪টি
ভারত – ৩টি
নিউ জিল্যান্ড – ৩টি।
শ্রীলঙ্কা – ৩টি।
দক্ষিণ আফ্রিকা – ১টি
পাকিস্তান – ১টি
অস্ট্রেলিয়া – ১।

অবশেষে, রুটের নামের পাশে যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়াতেও এক সেঞ্চুরি। আর সেই সঙ্গে ইতিহাসে আরেকটি রেকর্ডও। ১২ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে যে মাইলফলক তিনি স্পর্শ করলেন, তা নিঃসন্দেহে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিশেষ অধ্যায়ের একটি হয়ে থাকবে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ