মাছের চিপস বানিয়ে মাসে লাখ টাকা মুনাফা নাজমা আক্তারের
Published: 4th, December 2025 GMT
করোনার শুরুর দিকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন অনেকেই। লাভও করেন। সে ভাবনা থেকে ২০২০ সালে উদ্যোক্তা নাজমা আক্তার অনলাইনে মেয়েদের রূপচর্চার সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইনে ব্যবসার জন্য পালংকি কন্যা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। সে সময় রূপচর্চার সামগ্রী বিক্রি করে দুই মাসে ৫০ হাজার টাকা মুনাফা করেন। এই মুনাফা বদলে দেয় নাজমা আক্তারের জীবন।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী আদর্শগ্রামে থাকতেন নাজমা আক্তার। অবসরপ্রাপ্ত বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। তাই নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন নাজমা। একসময় নতুন পণ্য দিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন। সে সময় বাসার কাছেই একটি ডুমুরের গাছ ছিল। তবে এই ফল খাওয়ার প্রচলন না থাকায় বেশির ভাগ সময় পেকে রাস্তায় পড়ে থাকত। তাই এই ফল দিয়ে আচার বানানোর চেষ্টা করেন তিনি। যদিও পরবর্তী সময়ে ডুমুরগাছটি কেটে ফেলা হয়। তাই কাঁচামালের অভাবে এই পণ্য তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
পরপর দুটি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয় নাজমা আক্তারকে। এরপর ইন্টারনেট ও ইউটিউবে নতুন ব্যবসার ধারণা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে জোনাকি পোকার গুঁড়া তৈরির একটি ভিডিও দেখেন। তখন ধারণা আসে সামুদ্রিক মাছের গুঁড়া তৈরির। প্রথম চেষ্টায় কয়েক দফায় ব্যর্থ হন। তবে একসময় মাছের গুঁড়া তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। অনলাইনে বিক্রিও বাড়তে থাকে। ব্যবসা করতে গিয়ে এই পণ্যের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন তিনি। তাই মাছ ধরার নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া এই পণ্য তৈরি করেন না।
একপর্যায়ে ব্যবসা বড় করতে ২০২৪ সালে মাছের চিপস তৈরির পরিকল্পনা করেন নাজমা আক্তার। নিজের বাসায় বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠাপানির মাছ দিয়ে চিপস তৈরির চেষ্টা করেন। প্রথমে টুনা ও পোয়া মাছের চিপস বানানোর চেষ্টা করেন। কয়েকবারের চেষ্টায় তাতে সফল হন তিনি। তারপর ‘ফিসো ফিস চিপস’ নামে সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি চিপসের একটি ব্র্যান্ড গড়ে তোলেন।
বর্তমানে তিন রুমের একটি ভাড়া বাসায় কারখানা ও অফিস রয়েছে নাজমার। সেখানেই এই মাছের চিপস তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মাসে ৭০০ কেজি মাছের চিপস বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাখ টাকার বেশি মুনাফা থাকে নাজমার। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সাতটি পরিবারের সদস্য। এ ছাড়া ৩০ জন নারীকে মাছের চিপস তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
নাজমা আক্তার বলেন, ‘এই চিপস দিয়ে বাচ্চাদের চিপস খাওয়ার বায়না মেটে। অন্যদিকে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়। আমাকে এই চিপস অনেকেই বিদেশে রপ্তানি করার কথা বলে। তবে আমি আগে দেশের চাহিদা মেটাতে চাই। পরে রপ্তানি নিয়ে ভাবব। আগামী কয়েক বছরে আমি আরও বড় পরিসরে চিপস উৎপাদনে যেতে চাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা নবাব হন
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
সৃজনশীল প্রশ্ন: অধ্যায়–১
শহীদ মিয়া তরুণ বয়সে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম থেকেই কিছু আত্মীয় নিজেদের সুবিধার জন্য শহীদ মিয়াকে জনগণের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সুযোগ বুঝে একসময় তারা তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সক্ষম হয় এবং হত্যা করে।
প্রশ্ন
ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি কে ছিলেন?
খ. বাংলায় নবজাগরণ কী, ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে ঐতিহাসিক কোন ঘটনার মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ঘটনা কি বাংলার স্বাধীনতা হারানোর কারণ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর
ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি ছিলেন মানসিংহ।
খ. বাংলায় ইংরেজ শাসনের প্রভাবে এ দেশের মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়, তাকেই নবজাগরণ বলে। ইংরেজরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এলেও একসময় তারা এখানে বিভিন্ন সমাজসংস্কার, শিক্ষা বিস্তার প্রভৃতি কাজ করে থাকে। আধুনিক শিক্ষার কারণে এখানকার মানুষের মধ্যে অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়। তারা সমাজের কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ইতিহাসে এটাই বাংলায় নবজাগরণ।
আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা—বিজ্ঞান : টিকটিকি সরীসৃপ কেন০১ ডিসেম্বর ২০২৫গ. উদ্দীপকের শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে হত্যার সঙ্গে মিল রয়েছে। নবাব আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় নাতি সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর সামনে একদিকে ইংরেজ শক্তি, পাশাপাশি বড় খালা ঘসেটি বেগম ও সিপাহশালার মীর জাফর আলী খানের ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে তিনি নিহত হন। তখন বাংলায় শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ইংরেজদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা পায়। শহীদ মিয়ার তরুণ বয়সে চেয়ারম্যান হওয়ার সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার কম বয়সে নবাব হওয়ার মিল দেখা যায়।
অন্যদিকে সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের লোকজনও এই ক্ষমতা গ্রহণকে নেতিবাচক বলে মনে করে। উদ্দীপকের শহীদ মিয়াও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তাঁর পরিবারের আত্মীয়েরা বিরোধিতা করে, যা শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। তাই পারিবারিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলার পতনের ঘটনার মিল রয়েছে।
ঘ. হ্যাঁ, সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতা হারানো ও মৃত্যু বাংলার পরাধীনতার কারণ। এ ঘটনায় শাসন ক্ষমতায় ইংরেজরা প্রভাব রাখতে শুরু করে।
মীর জাফর ও পরবর্তী সময়ে মীর কাশিমকে ইংরেজরা বাংলার নবাব মনোনীত করলেও নানা কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে খাজনা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। অন্যদিকে নবাব ভাতা ভোগ করেন। নবাব শাসন ও বিচারের দিকটি দেখার সুযোগ পান। ক্লাইভ কর্তৃক এ অদ্ভুত শাসনই ইতিহাসে ‘দ্বৈত শাসন’ নামে পরিচিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে শাসন ক্ষমতা সুদৃঢ় করে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেরাই শাসন শুরু করে। ব্রিটিশদের এই শাসন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলার স্বাধীনতা ছিল ইংরেজদের হাতে। তাই সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যু বাংলার স্বাধীনতা হারানোর বড় কারণ।
মো. আবুল হাছান, সিনিয়র শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা