প্রতিবেশীর ঘরের খাটের নিচে মিলল নিখোঁজ শিশুর লাশ
Published: 4th, December 2025 GMT
ঝিনাইদহে নিখোঁজের ১৩ ঘণ্টা পর সাইমা আক্তার সাবা (৩) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে শহরের পবহাটি এলাকার বাসিন্দা শান্তনা খাতুনের ঘরের খাটের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় শান্তনা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্তের পর হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে।
আরো পড়ুন:
কুকুরছানা হত্যা: মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু
হোমনায় এসিল্যান্ডের গাড়িচাপায় শিশুর মৃত্যু
নিহত সাইমা পবহাটি এলাকার ভ্যানচালক সাইদুল ইসলামের মেয়ে। আটক শান্তনা তাদের প্রতিবেশী। তিনি মাসুদ হোসেনের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, সাইমা গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ির পাশ থেকে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত ৯টার দিকে প্রতিবেশী শান্তনা খাতুনকে বোরখা পড়ে বাড়ির বাইরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ করে। তার ঘরে প্রবেশ খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে খাটের নিচে মরদেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ আটক
এছাড়াও পড়ুন:
মিরসরাই উপকূলে সুন্দরবনের গোলপাতা কীভাবে এল
বলে না দিলে ছবি দেখে যে কেউ বলবে, এটি সুন্দরবনের দৃশ্য। খালের পাড়ে নরম পলিমাটিতে মাথা তুলেছে সারি সারি গোলপাতাগাছ। খাটো কাণ্ডের এই গাছ দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাটি ফুঁড়ে নারকেলগাছের পাতার মতো অসংখ্য পাতা ওপরে উঠে এসেছে। বাতাস বইলে সেই পাতার গায়ে আলতো ঢেউ ওঠে। কেবল সুন্দরবন নয়, এই দৃশ্য এখন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উপকূলীয় এলাকায় গেলেও দেখা যাবে।
সুন্দরবন এলাকার একমাত্র পাম পরিবারের এই উদ্ভিদ মিরসরাই উপকূলে পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়ে সফল হয়েছে বন বিভাগ। উদ্দেশ্য, উপকূলীয় নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা, আর সাগরের ভাঙন থেকে তীরভূমি রক্ষা। সুন্দরবনকে রীতিমতো দুর্ভেদ্য করে তুলেছে গোলপাতা। গোলপাতার বনে অনায়াসেই বাঘ লুকিয়ে থাকতে পারে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বনজীবী মানুষজন প্রতিবছর মধু আর গোলপাতা সংগ্রহ করেন বন থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলে উত্তরে ইছাখালী ও দক্ষিণে ডাবল খালের মাথায় গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র উপকূলের চারটি শাখা খালের দুই পাড়ে অন্তত ৩ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে গোলপাতা। দূর থেকে দেখে নারকেলগাছের চারার মতো মনে হওয়া গাছগুলোর উচ্চতা এখন ৬ থেকে ৭ ফুট। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খালগুলোতে নিয়মিত জোয়ার–ভাটা হয়। জোয়ার-ভাটার পলিতেই বেড়ে উঠছে গাছগুলো।
উপকূলীয় রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তা বাঁধের বাইরে চরের ভাঙন রোধে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি ও নতুন চর জাগাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ডোমখালি, মঘাদিয়া ও বামনসুন্দর বিট এলাকায় ৮২০ হেক্টর চরে বনায়ন করে রেঞ্জ কার্যালয়। বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের আওতায় দুই বছর আগে কেওড়া ও বাইনগাছের চারার পাশাপাশি গোলপাতাগাছ লাগানো হয়।
গোলপাতার বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ‘নিপা ফ্লুটিকানস’। ইংরেজি নাম ‘নিপা পাম’। তাল, নারকেল, সুপারির মতো এটিও পাম পরিবারের উদ্ভিদ। তবে জন্মায় লবণাক্ত ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলী বনে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মায় এটি। এর পাতা প্রায় ৩ থেকে ৯ মিটার লম্বা হয়। দেখতে অনেকটা নারকেলগাছের পাতার মতো। গোলপাতার কাণ্ড খাটো হয়। এর শিকড় জালের মতো মাটি আঁকড়ে থাকে।এ ছাড়া ইছাখালী বিট অংশে ইছাখালী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে চারটি শাখা খালের দুই পাড়ে ১০ কিলোমিটারজুড়ে খুলনার সুন্দরবন এলাকা থেকে আনা ২০ হাজার গোলপাতার বীজ ও বরিশাল থেকে আনা ১০ হাজার চারা লাগানো হয়। তবে শিকড় সংক্রমণে বরিশালের ১০ হাজার চারা নষ্ট হয়ে যায়। আর সুন্দরবনের ২০ হাজার বীজ থেকে চারা গজালেও দফায় দফায় ঘূর্ণিঝড়, ২০২৪ সালে ফেনী অঞ্চলে বন্যায় অর্ধেকের মতো গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এরপরেও প্রায় ১০ হাজার গোলপাতাগাছ টিকে রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ বনের একমাত্র পাম প্রজাতি
গোলপাতার বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ‘নিপা ফ্লুটিকানস’। ইংরেজি নাম ‘নিপা পাম’। তাল, নারকেল, সুপারির মতো এটিও পাম পরিবারের উদ্ভিদ। তবে জন্মায় লবণাক্ত ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলী বনে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মায় এটি। এর পাতা প্রায় ৩ থেকে ৯ মিটার লম্বা হয়। দেখতে অনেকটা নারকেলগাছের পাতার মতো। গোলপাতার কাণ্ড খাটো হয়। এর শিকড় জালের মতো মাটি আঁকড়ে থাকে। গোলপাতা দিয়ে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ যেমন ঘরের চালা, বেড়া ইত্যাদি তৈরি হয়। এর ফল সুস্বাদু। অনেকটা তালশাঁসের মতো। খেজুরের রসের মতো মিষ্টি রসও পাওয়া যায় গাছ থেকে। সুন্দরবন অঞ্চলে এ গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি হয়। বন কর্মকর্তারা বলছেন, মিরসরাই উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত জোয়ার–ভাটা হওয়ায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া গোলপাতা জন্মানোর উপযোগী। এখানে এই উদ্ভিদের বিস্তারের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
হঠাৎ এ অঞ্চলে গোলপাতার বাগান দেখে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। সাহেরখালী ইউনিয়নের ডাবরখালী খালের জাল ঠেলে মাছ ধরছিলেন মোহন চন্দ্র জলদাস। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে জানতাম গোলপাতা শুধু সুন্দরবনে হয়। এখন দেখছি আমাদের এলাকায় এ গাছে ভরে উঠছে। এখন এলাকায় বিভিন্ন পাখির আনাগোনা বেড়েছে।’
জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের মিরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহান শাহ নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত খালপাড়ের মাটির বুনন টেকসই করে ভাঙন রোধ করতে, মিরসরাই উপকূলীয় এলাকায় জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সুফল প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে গোলপাতার বনায়ন করা হয়েছিল। সব উপযোগিতা থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখানে এখন গোলপাতার বন তৈরি হচ্ছে। সুন্দরবনসহ দক্ষিণবঙ্গের বাইরে দেশে গোলপাতার বন সম্প্রসারণে এটি চমৎকার উদাহরণ হবে।’