দাম কমার সুফল কেন ভোক্তারা পাবেন না
Published: 4th, December 2025 GMT
জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্যে শুল্ক-করের বোঝা ও বিপিসির মুনাফা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি; বরং মূল্যস্ফীতি এখনো ৮-এর ওপরে।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদের ঘাড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বোঝা চেপে বসেছিল, তাতে বড় অবদান রেখেছিল জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী দর। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় এ বছরের অক্টোবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ২৫ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে কমেছে মাত্র ৪ শতাংশের মতো। সরকার জ্বালানি পণ্যকে সেবার বদলে মুনাফা ও রাজস্ব আয়ের নীতি হিসেবে গ্রহণ করায় তার মাশুল গুনতে হচ্ছে নাগরিকদের।
মূল্যস্ফীতিকে নীরব মহামারি বলা হয়, তার কারণ হচ্ছে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান পড়ে যায়। বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের সাম্প্রতিক জরিপগুলো প্রমাণ দিচ্ছে, দেশে দারিদ্র্য ও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, তাঁদের আয় কমেছে এবং আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা বর্তমান নাগরিক অসন্তুষ্টির বড় কারণ।
বিগত সরকারের আমলে ভুল জ্বালানি নীতির সুফল ভোগ করেছিল সরকারঘনিষ্ঠ কিছু গোষ্ঠী; বিপরীতে অর্থনীতি ও নাগরিকদের জন্য সেটি স্থায়ী দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও নাগরিকের স্বার্থ রক্ষিত হয়, এমন একটি জ্বালানি নীতি করবে। দায়মুক্তি আইন বাদ দেওয়ার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করলেও জ্বালানি নীতি প্রণয়নে উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং বিগত সরকারগুলোর মতোই জ্বালানি খাত রাজস্ব আয় ও বিপিসির মুনাফার উৎস হিসেবে থেকে গেছে।
অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের ওপর ভর করে বিগত সরকার অর্থনীতিতে যে সংকট ডেকে এনেছিল, তা থেকে উদ্ধার পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নিতে হয়েছিল। ঋণের শর্ত হিসেবেই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে নির্বাহী আদেশের পথ থেকে সরে এসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের সূত্রে যে ফাঁকফোকর আছে, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বিপিসির ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার মুনাফায় তার প্রমাণ দেয়। এ ছাড়া জ্বালানি তেল থেকে শুল্ক-কর বাবদ সরকার প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।
সরকারের যুক্তি হলো বিপিসির মুনাফা ও শুল্ক-কর থেকে আয় হওয়া টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্য, যার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে-কমে, সেখানে সরকারের ব্যবসা করার সুযোগ থাকাটা কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? জ্বালানির দাম বাড়লে ভোক্তাকে বাড়তি দামেই সেটি কিনতে হয়, তাহলে দাম কমলে কেন তাঁরা তার সুফল পাবেন না। প্রতিবেশী দেশে তেল পাচার হয়ে যাবে—এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জ্বালানি তেলে শুল্ক-করের বোঝা চাপিয়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। প্রত্যক্ষ করের উৎস না বাড়িয়ে জ্বালানি তেল থেকে রাজস্ব আয়ের সহজ পথ থেকেও সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিপিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার যে অভিযোগ আছে, তারও যথাযথ তদন্ত হতে হবে। আমরা মনে করি, বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি রাশিয়ার
পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। শহরটি ইউক্রেন থেকে দনবাস অঞ্চলের প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একটি লজিস্টিক হাব হিসেবেও পরিচিত। দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে রুশ বাহিনী এই দাবি করল।
রবিবার (২ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ওই শহর ও হাবটিতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছিল। এটির দখল নিতে রাশিয়ার অনেক সেনা নিহত ও আহত হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের অসংখ্য সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রাশিয়ার ২ ট্যাংকারে আগুন
কিয়েভের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার ড্রোন হামলা
যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন ও ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দখলের দাবি করে ক্রেমলিন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে পোকরোভস্ক শহর দখলের তথ্য জানায় ক্রেমলিন। রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উদ্ধৃত করে পোস্টে আরো বলা হয়, খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক শহরটিও রুশ বাহিনী দখল করেছে।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস-এর খবর অনুসারে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রবিবার গভীর রাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফ্রন্টলাইনের একটি কমান্ড সেন্টার পরিদর্শন করার সময় ‘মুক্তির’ খবরটি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন পেরাসিমভ।
পোকরোভস্ক দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বড় পরিবহন কেন্দ্র। পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি রাশিয়া নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
একসময় ৬০ হাজার মানুষের বাসস্থান এই শহরটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ান ড্রোন, কামান ও বোমাবর্ষণ ফলে অনেক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইউক্রেন এখনও রাশিয়ার শহর দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মস্কো পোকরোভস্কের রাস্তায় সৈন্যদের মিছিল করে রাশিয়ার পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করেছে।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস-এর খবর অনুসারে, পুতিন পরে রাশিয়ান বাহিনীকে তাদের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ