ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ছাত্রদলের
Published: 3rd, December 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বিগত প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনে তথাকথিত প্রতিনিধি হয়ে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বিভিন্ন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও বিতর্কিত মন্তব্য জাতির সামনে ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চরম অপমানের সম্মুখীন করছে। সম্প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ ডাকসুর বিতর্কিত মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে যে বিবৃতি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছেন, তা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ ইতিহাস বিকৃতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
এর আগে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা লিখেছেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘ডিসেম্বর আমাদের বিজয় ও নিজস্ব আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার গৌরবের মাস।
ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান, তিতুমীর, রজব আলী হাবিলদার, মঙ্গল পান্ডে, লক্ষ্মীবাইসহ সহস্র শহিদ, যাঁদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, তাদের ২০০ বছরের সংগ্রামের ফলেই আমরা পেয়েছিলাম ১৯৪৭–এর বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
‘বিজয়ের সুখ উপভোগের আগেই দুর্ভাগা এই অঞ্চলে আবারও নেমে আসে শাসন নামে শোষণের অন্ধকার। সেখান থেকেই বাংলা ও বাঙালির রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষার জন্ম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। সহস্র শহিদের রক্ত, সহস্র বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। আমাদের শহিদেরা আমাদের দিয়ে গেলেন একটুকরো লাল সবুজের পতাকা, নতুন নিজস্ব একান্ত ভূমি, দেশ, জাতীয়তা।
‘তথাপি, আমাদের রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো না। স্বৈরাচার, দুঃশাসন, দুর্নীতি, ফ্যাসিবাদ, হেজিমনি, গুম-খুন, বিচারিক ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পীড়নে এইটুকু দেশ ও দেশের মানুষ বারবার ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ২০২৪ আমাদের সামনে আরেকবার সুযোগ এনে দিয়েছে রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণের। এ পথে সফল হওয়ার সময় কারা কারা ৭১-পরবর্তী সময়ের মতো গাদ্দারি করলো—একদিন ইতিহাসে তাদের নামও উচ্চারিত হবে; দ্বিগুণ ঘৃণায়।
‘মহান বিজয়ের মাসের শুরু আজ, আমাদের নতুন আত্মপরিচয় দেওয়া সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা—যাদের রক্তের মূল্যায়ন আমরা কোনোবারই করতে পারি না।’
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকসজ্জার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও সমালোচনা করেছে ছাত্রদল। তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলাভবন, কার্জন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনকে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে উদ্যাপন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ ঐতিহ্য হলেও এবার তা একেবারেই করা হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে উদ্যাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের এমন দৃষ্টিকটু ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অনীহার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস উদ্যাপনে প্রশাসনের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন অবহেলার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জয় র ম স ছ ত রদল র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?
এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) এমন একটি ভাইরাস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এ থেকে এইডস হতে পারে। এইডস এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্যান্য জীবাণু দিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখনো বিশ্বজুড়ে এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ। গত বছর এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে বিশ্বে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ১৩ লাখ নতুন এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে সংক্রমণের ধারাবাংলাদেশে বর্তমানে এইচআইভির উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন প্রধানত পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি, নারী যৌনকর্মী ও অভিবাসী কর্মীরা। এইচআইভি পরীক্ষা ও এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে দেশের এআরটি কেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এ বছর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা গেছেন ২১৯ জন। ২০২৪ সালে দেশে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত হন এবং ৩২৬ জন এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা যান। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২৭৬ ও ২৬৬।
২০২৪ সালে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৬ হাজার ৮৬৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত ছিলেন। আর ইউএনএআইডিএস-এর অনুমান অনুসারে, দেশে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
সিরাজগঞ্জ ‘রেড জোন’, যশোরে তরুণ রোগী বাড়ছেবাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ, সীমান্তবর্তী জেলা যশোর ও রাজশাহীর পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। সিরাজগঞ্জকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, সেখানে ইনজেকশনযোগ্য মাদক সেবনকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
২০২০ সালে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে এআরটি কেন্দ্র চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে মোট ২৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ২৬ জন চিকিৎসা চলার সময় মারা গেছেন। এখানকার এইচআইভি আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৮৭ জন ইনজেকশনযোগ্য মাদক ব্যবহারকারী, যাঁরা সুই ভাগাভাগি করেন, ২৯ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চারজন পেশাদার যৌনকর্মী এবং ৩৫ জন সাধারণ নাগরিক।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যশোরের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন রোগীর বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বর্তমানে খুলনা বিভাগের এইচআইভি আক্রান্ত ২২০ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮টি নতুন সংক্রমণ এবং একজনের মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
তরুণদের মধ্যে ঝুঁকি কেন বাড়ছেস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, মাদক গ্রহণের সময় সুই ভাগাভাগি, কনডম ব্যবহারের প্রবণতা কম, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, যৌন স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাব, রোগনির্ণয়ের প্রাথমিক পরীক্ষাকে নিরুৎসাহিত করাসহ বেশ কয়েকটি কারণে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের হিসাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষ তাঁদের রোগ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
অথচ ইউএনএআইডিএস-এর ২০১৪ সালের ঘোষিত লক্ষ্য হলো—২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৫ শতাংশকে তাদের রোগ সম্পর্কে সচেতন করা।
আক্রান্তদের অনেকে তথ্য গোপন করে চিকিৎসাসেবা নেন। এটা অন্যদের মাঝে এইচআইভির সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ সচেতন হয়ে সঠিক তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকা সম্ভব। আক্রান্তের কাছ থেকে নতুন কারও মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকিও কম। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি অবশ্যই একটি জাতীয় এইচআইভি/এইডস পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার; যাতে স্পষ্ট উদ্দেশ্য, যথাযথ অর্থায়ন ও জনসম্পৃক্ততা থাকে। তবেই এইচআইভির বিস্তার ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
মুকেশ শর্মা চিকিৎসক, এমবিবিএস, এমডি (মাইক্রোবায়োলজি)