এখনো ‘ট্রাভেল পাস’ চাননি তারেক রহমান, মায়ের বিষয়ে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
Published: 3rd, December 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনের কাছে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘ট্রাভেল পাস’ চাননি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা মতামত দেবেন। এই মতামতের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থা আর নাই—চিকিৎসকেরা এমন সিদ্ধান্ত দিলে তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন।
দলীয় ওই সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সে মতামত দিলে তা অনুসরণ করা হবে। এই ক্ষেত্রে লন্ডন প্রথম অগ্রাধিকার। সেটা হলে তারেক রহমান লন্ডনেই থাকবেন। আর খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময়ের বিমানযাত্রার বিষয়ে চিকিৎসকেরা অনুমোদন না দিলে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে সিঙ্গাপুরকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান ওই দেশে যাবেন মায়ের পাশে থাকতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমান দেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। মায়ের বিদেশি চিকিৎসক দল ও মেডিকেল বোর্ডের মতামতের অপেক্ষায় আছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় বা যে স্ট্যাটাসে (মর্যাদা) রয়েছেন, সেটাও ওই দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে চান।
এর আগে গত রোববার তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে কোনো বিধিনিষেধ নেই। এক দিনে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এটার নিয়ম হচ্ছে যে যখন পাসপোর্ট থাকে না বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, তখন কেউ যদি আসতে চান, তাহলে তাঁকে আমরা ওয়ান টাইম পাস একটা দিয়ে দিই, একবার দেশে আসার জন্য। তো এটাতে এক দিন লাগে। কাজেই এটা উনি যদি আজকে বলেন যে উনি আসবেন, আগামীকাল হয়তো আমরা এটা দিলে পরশু দিন প্লেনে উঠতে পারবেন। কোনো অসুবিধা নাই। এটা আমরা দিতে পারব।’
খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন থেকে ১১ দিন ধরে তিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা এখনো উদ্বেগজনক। খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। প্রায় চার মাস লন্ডনে অবস্থানের পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক আশ্রয়: নিজ দেশে ভ্রমণের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আইন কী বলে১৪ ঘণ্টা আগেতারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে তিনি সে দেশেই আছেন। অবশ্য তাঁর স্ত্রী ডা.
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল এবং কোনো কোনো মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান। এর পর থেকে তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন দ ব এনপ র চ ক ৎসক মত মত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
Untitled Dec 03, 2025 10:46 pm
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে যোগ দিলেন চীন থেকে আসা চার সদস্যের আরেকটি চিকিৎসক দল। আজ বুধবার রাত নয়টার পর তাঁরা ঢাকায় অবতরণ করেন। সেখান থেকে তাঁরা সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন।
দেশের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। তাঁর চিকিৎসায় সহায়তা করতে ১ ডিসেম্বর চীনের চিকিৎসকদের পাঁচ সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ঢাকায় আসে। আর আজ সকালে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল ঢাকায় আসেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত এই চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখার পর পরামর্শ দেবেন। তাঁদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করবে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চলবে, না কি লন্ডনে নেওয়া হবে।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর দ্রুত তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৩০ নভেম্বর ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে তাঁর হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা কাটছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেখা যাচ্ছে চিকিৎসায় এ সমস্যাগুলোর একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে; যা কয়েক দিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকেরা এখনো এই অর্থে আশাবাদী যে তাঁরা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। ওষুধ কাজ করছে।
চিকিৎসকেরা এখনো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তাঁর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
যদিও কয়েক দিন ধরে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব চলছে। অনেকে তাঁর অবস্থা ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ বলে রটাচ্ছেন।
তবে যেকোনো ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্যতম এ জেড এম জাহিদ হোসেন।