বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক কি একাত্তরেই আটকে আছে
Published: 4th, December 2025 GMT
সাড়ে পাঁচ দশক পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি। ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ অনেকটাই বদলে গেছে; ক্ষমতার কেন্দ্রে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন শক্তি।
এখন সামনে খোলা দুটি পথ—এই পরিবর্তনকে অস্বীকার করে আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অথবা পরিবর্তিত বাস্তবতাকে মেনে নতুন পথের সন্ধান। কোন পথে এগোবো আমরা?
একটা জিনিস স্পষ্ট। এই মুহূর্তে দুই দেশের জন্য প্রধান সংকট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; তাঁকে নিয়ে ফেঁসে গেছে উভয় দেশই। তাঁকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে আদালত বিচারিক দায়িত্ব শেষ করলেও এই রায়ের বাস্তবায়ন এখন ইউনূস সরকারের গলার কাঁটা।
অনেকের, বিশেষ করে গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের দাবি, অবিলম্বে হাসিনাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। অথচ ভারতের সম্মতি ছাড়া সেটা অসম্ভব, সে কথা বোকাও বোঝে। তারপরও নানা রকম খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, তারা হাসিনাকে দেশে এনেই ছাড়বে, দরকার হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে; কিন্তু এই সংকট শুধু একজন ব্যক্তিকে ঘিরে নয়, এটি দুই দেশের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের গাঠনিক ভুলের অনিবার্য পরিণতি।
অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ভারত এখন না পারছে তাঁকে গিলতে, না পারছে তাঁকে উগরাতে। তাঁকে ফেরত দেওয়া মানে ফাঁসি, একজন বিশ্বস্ত মিত্রকে এমন বিপদের মুখে সে ফেলে দেবে না। ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য তা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
অন্যদিকে হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না, তা স্পষ্ট। হাসিনা সরকারের পতনের ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তার ফাঁক গলিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছে পাকিস্তান। দরজার ওপাশে চীন। ভারতের জাতীয় স্বার্থের জন্য এর কোনোটাই অনুকূল নয়।
গাঠনিক অসাম্যঅধিকাংশ ভাষ্যকারই একটা বিষয়ে একমত। হাসিনার ১৫ বছর বাংলাদেশে যে ভারতনির্ভর রাজনীতি ও কূটনীতি গড়ে ওঠে, দুই দেশের চলতি দূরত্ব তার ফল। ভারত বাংলাদেশের মানুষের বদলে নির্ভর করেছিল হাসিনার ওপর। ফলে ‘এক ঝুড়িতে সব ডিম’ রাখলে যা হয়, তা–ই হয়েছে। হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ‘ডিম’ গেল, সঙ্গে ‘ডিমের ঝুড়ি’।
ভারতীয় লেখক বিনোদ খোসলা বিষয়টাকে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের ‘গাঠনিক অসাম্য’ বা ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাসিমেট্রি’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সার্বভৌম প্রতিবেশী ও অংশীদার হিসেবে বিবেচনার বদলে ভারতের কাছে বাংলাদেশ ছিল একটি ক্লায়েন্ট স্টেট। সে যত নতজানু, ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে তার কদর তত বেশি।
হাসিনা নিজেও সে কথা জানতেন। সে জন্য একাধিকবার তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতকে আমি এত কিছু দিয়েছি যে তারা আর ভাবতেও পারে না।’ হাসিনা সরকারের এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কথাও বলেছিলেন, ‘ভারতকে নিজের স্বার্থেই হাসিনাকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে হবে।’
ভারত নিজেকে ‘বড় ভাই’ ভাবলেও সব সময় যে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করেনি, এ কথাও অনেক ভারতীয় স্বীকার করেছেন। নদীর পানির হিস্যা নিয়ে এই দুই দেশের দীর্ঘদিনের পুরোনো বিবাদ এর একটি উদাহরণ।অসাম্যভিত্তিক হলেও এই সম্পর্কের একটি অন্তর্গত লজিক (যুক্তি বা যৌক্তিকতা) ছিল। সব মাস্টার–ক্লায়েন্ট বা প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কের কেন্দ্রীয় যৌক্তিকতা হলো, অসম হলেও তারা একে অপরের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করে। প্রয়োজনে মালিক ভৃত্যের মাথার ওপর নিজের ছাতাটি মেলে ধরবে; জবাবে ভৃত্য যখন যা নির্দেশ আসবে, তা বিনা বাক্যে পালন করবে।
সমস্যা হলো, দীর্ঘমেয়াদি হিসাবে এই অসম সম্পর্ক কোনো না কোনো সময় দুর্বল বা ভৃত্যদেশটির ভেতর ক্ষোভের জন্ম দেয়। দেশের মানুষ ভাবতে শুরু করে, ‘প্রভু’রাষ্ট্রের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতার বিস্তর অপব্যবহার করেও তাদের দেশের শাসকেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষোভ স্বৈরাচারী দেশীয় শাসকদের প্রতি যতটা, ঠিক ততটাই বিদেশি প্রভুদের প্রতি।
এসব কথা মাথায় রেখে সুপরিচিত ভারতীয় সমরকৌশলবিদ রাজা মোহন লিখেছেন, ক্ষুদ্র কোনো প্রতিবেশী দেশ ও মানুষ—তা বাংলাদেশ বা অন্য যে–ই হোক—যখন মনে করে, তাদের সার্বভৌমত্ব বৃহৎ প্রতিবেশীর চাপে নুইয়ে আসছে, তখন তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে। রাজ মোহনের ভাষায়, এটা হলো ‘ন্যাশনালিস্টিক ব্যাকলাশ’ । বাংলাদেশে তার প্রকাশ ছিল ক্ষোভ, সন্দেহ এবং ভারতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর অনাস্থা।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গতিপথ কী হবে০৬ জানুয়ারি ২০২৫প্রায় একই উপসংহারে পৌঁছেছেন ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। তিনি মনে করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গাঠনিকভাবে অসম।
এর কারণ, ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক নির্মাণের বদলে সেই সম্পর্কের ব্যক্তিগতকরণ (পারসোনালাইজেশন) করেছে। দেশ মানে সে দেশের মানুষ ও তার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিবেশী দেশের পছন্দের নেতার সঙ্গে সখ্য থাকতে পারে, কিন্তু দেশের মানুষের সঙ্গে সে সম্পর্কে চির ধরলে পুরো সম্পর্কের ভিতই নড়ে ওঠে। মেননের কথায়, ‘আপনি যখন সে দেশের (গণতান্ত্রিক) প্রতিষ্ঠানগুলোর বদলে প্রাধান্য দেন ব্যক্তির ওপর, তার ফল ভালো হবে না, এ কথা প্রায় নিশ্চিত।’
একাত্তরের নস্টালজিয়াভারত-বাংলাদেশের এই অসম সম্পর্কের একটি গঠনগত ও মনঃসাংস্কৃতিক চরিত্র রয়েছে, রয়েছে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি। নিউইয়র্কে ভারতীয় কূটনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁরা ধরেই নেন যে এই সম্পর্কে ভারত ‘বড় ভাই’, বাংলাদেশ ‘ছোট ভাই’।
এই মনোভাবের পেছনে একট প্রচ্ছন্ন কারণ একাত্তর নিয়ে তাঁদের নস্টালজিয়া। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে তাঁরা প্রায় সবাই (পাঠক অনায়াসে ‘প্রায়’ শব্দটি বাদ দিতে পারেন) একই সঙ্গে নিজেদের বিজয় ও কনিষ্ঠ ভ্রাতার জন্য উপহার বলেই ভাবেন।
মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে মেজর জেনারেল সিপি সিং কিছুটা আত্মপ্রসাদের সঙ্গে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা শুধু ১৪ দিনে স্বাধীন করেছি তা–ই নয়, পাকিস্তানকে দুই টুকরা করে দিয়েছি।’
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার পরিণতি থেকে কি দিল্লি শিক্ষা নেবে১১ আগস্ট ২০২৪গত বছর বাংলাদেশে গণ–অভ্যুত্থানের পর ভারতের ক্ষমতাসীন মহলের অনেক কর্তাব্যক্তিও বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই দুই দেশের সম্পর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ১৯৭১। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বছরের ২৬ মার্চ অধ্যাপক ইউনূসের কাছে পাঠানো এক বার্তায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘একাত্তরের চেতনা এখনো আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের আলোকবর্তিকা।’
‘এ জন্য বাংলাদেশিদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত’, এ কথা মোদি লেখেননি বটে, কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নানাভাবে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তাদের চোখে, বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা ও তাঁর সরকার সেই একাত্তরের চেতনার ধারক ও বাহক। তারা এই ‘আত্মতুষ্টি ও কৃতজ্ঞতার চশমা’ থেকে দেখে বলেই ভারতীয়রা কিছুতেই ভাবতে পারেন না যে তাঁদের ডিঙিয়ে ‘পুরোনো শত্রু’ পাকিস্তান ও একাত্তরের আরেক শত্রু চীন বাংলাদেশে জায়গা করে নেবে।
বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনার বদলে বিদেশি ‘ডিপ স্টেট’কে দায়ী করার প্রবণতা থেকে ভারতীয় ভাষ্যকার ও নীতিনির্ধারকেরা একটি সহজ টার্গেট খুঁজে নিয়েছেন, আর সেটি হলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনূস।
আরও পড়ুনভারত ‘তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও’০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে যদি একটি বাস্তবসম্মত, সুষম ও সমমর্যাদাপূর্ণ স্তরে উন্নীত করতে হয়, তাহলে ভারতকে এই বিগত ‘মনোভাবনা’ থেকে সরে আসতে হবে। বাংলাদেশকে একটি ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ নয়, সার্বভৌম এক প্রতিবেশী মানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে অসংখ্য বিবাদের মূল কারণ, ভারত এখনো তার প্রতিবেশীদের সমসার্বভৌম হিসেবে মেনে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।এ রকম একজন হলেন সামরিক ভাষ্যকার আশিষ সিং। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের অকৃতজ্ঞতা’, শিরোনামে এক রচনায় কোনো ভনিতা ছাড়াই তিনি লিখেছেন, ‘আমরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছি। সে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বদলে বাংলাদেশের তরুণেরা ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাকে “হেজিমন” হিসেবে সমালোচনা করছেন।’
আশিষ সিং আরও লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ যে একসময় ভারতের শৌর্যের সুফল ভোগ করেছে, সে এখন সেই শৌর্যের প্রতি আপত্তি জানাচ্ছে। তারা এখন বাণিজ্যঘাটতির মতো বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
আরেক ভারতীয় বিশ্লেষক কর্নেল অভয় বালকৃষ্ণান পট্টবর্ধন অর্গানাইজার সাময়িকীতে আরও সরাসরি তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়ে লিখেছেন, যারা এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, তাদের ভারতের প্রতি বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। অথচ ভারতের বিপুল আর্থিক ও সামরিক সমর্থন ছাড়া সে স্বাধীনতা কিছুতেই অর্জিত হতো না। এমন অকৃতজ্ঞতা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সেই সব না-বলা কথা০১ জুলাই ২০২৫অন্য কথায়, হাসিনার পতন মানে শুধু ভারতের নিকটতম বন্ধুর পতন নয়, এটি একাত্তরের চেতনারও পতন। একাত্তরের জন্য তাদের এই ‘নস্টালজিয়া’ মোটেই বিস্ময়কর নয়; এই মুক্তিযুদ্ধে তারা তিন হাজারের বেশি সেনাসদস্যকে হারিয়েছে; কিন্তু যা বিস্ময়কর তা হলো, একাত্তরের স্বাধীনতার লড়াইকে ভারতীয়রা মূলত একটি ‘ট্রানজাকশনাল’ বা দেনা-পাওনার সম্পর্ক হিসেবে বিচার করছেন। ‘তোমাদের যুদ্ধে আমরা অনেক ক্ষতি স্বীকার করেছি, এবার তোমরা তার বদলা দাও।’
অন্য কথায়, বাংলাদেশ একাত্তর পেরিয়ে ২০২৫-এ পৌঁছালেও তার এই প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ভারত এখনো একাত্তরেই আটকে আছে। যে নবীন প্রজন্মের নেতৃত্বে গণ–অভ্যুত্থান, তাদের কাছে হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নন; বরং তিনি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের নারকীয় লঙ্ঘনের প্রতীক।
ভারতীয় ‘প্লে-বুক’ অনুসারে, হাসিনা অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদবিরোধী—মুক্তিযুদ্ধের এই দুই প্রধান চেতনা তিনি সংহত করেছিলেন। সে কারণেই তাঁর প্রতি ভারতীয় আগ্রহ ও স্নেহ। ‘ইউনূসের হাতে বাংলাদেশ এখন মৌলবাদীদের আখড়া, সেখানে পাকিস্তানের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এই সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে,’ এই অভিযোগ করেছেন একাধিক ভারতীয় কৌশলবিদ।
এই মনোভাবে যুক্তির চেয়ে আবেগই বেশি এবং সেই আবেগের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশকে একটি ‘ক্লায়েন্ট’ হিসেবে দেখার পুরোনো প্রবণতা। ভারতীয় লেখক সন্দ্বীপ রায় লিখেছেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছি, একাত্তরের কারণে বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসে, অথচ সে নস্টালজিয়া অনেক আগেই মিইয়ে গেছে।’
ক্লায়েন্ট স্টেট নয়ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে যদি একটি বাস্তবসম্মত, সুষম ও সমমর্যাদাপূর্ণ স্তরে উন্নীত করতে হয়, তাহলে ভারতকে এই বিগত ‘মনোভাবনা’ থেকে সরে আসতে হবে। বাংলাদেশকে একটি ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ নয়, সার্বভৌম এক প্রতিবেশী মানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে অসংখ্য বিবাদের মূল কারণ, ভারত এখনো তার প্রতিবেশীদের সমসার্বভৌম হিসেবে মেনে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।
এসব কথা শুধু আমরা নই, কোনো কোনো ভারতীয় বিশেষজ্ঞও বলা শুরু করেছেন। জওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাপিমন জ্যাকব লিখেছেন, ভারতের জন্য সমস্যা হলো, সে তার ক্ষুদ্রতর প্রতিবেশীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়; কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা শুধু একটি ইল্যুশন বা মায়া।
ভারত নিজেকে ‘বড় ভাই’ ভাবলেও সব সময় যে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করেনি, এ কথাও অনেক ভারতীয় স্বীকার করেছেন। নদীর পানির হিস্যা নিয়ে এই দুই দেশের দীর্ঘদিনের পুরোনো বিবাদ এর একটি উদাহরণ।
আরও পড়ুনদক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যেভাবে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়াচ্ছে০২ ডিসেম্বর ২০২৫ভারতের সাবেক বৈদেশিক সচিব নিরুপমা রায় স্বীকার করেছেন, তিস্তা নদীর হিস্যা না পাওয়ায় বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট। তাঁর কথায়, এটা কেবল একটা নদী নয়, এর ভেতর দিয়ে প্রতিবেশীর প্রতি ভারতের আন্তরিকতার প্রকাশও বটে।
একই কথা অসম বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে। সুপরিচিত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সিং কিছুটা পরিহাসের সুরে মন্তব্য করেছেন, ভারত নিজেকে বাংলাদেশের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বলতে অজ্ঞান, অথচ তাদের রপ্তানির ওপর সে একের পর এক অশুল্ক (নন-ট্যারিফ) বাধা তৈরি করেছে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘বন্ধুত্ব শুধু আবেগঘন একটা কথা নয়, এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত।’
হাসান ফেরদৌস সাংবাদিক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক র কর ছ সরক র র প মন ভ ব প রক শ এই দ ই কর ছ ন র জন ত বড় ভ ই র জন য ভ রতক র বদল ক ষমত ত এখন র একট র ওপর র পতন ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
রদ্রিগো চাইলে এমবাপ্পেকে বলতে পারেন, ‘একটা গোল হবে ভাই’
একটা গোল হবে ভাই—রদ্রিগো চাইলে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে এই আকুতি জানাতে পারেন। রাজার রত্নভান্ডার থেকে এক টুকরা সোনা দিলে যেমন সম্পদ কমে না, একইভাবে এমবাপ্পে যদি এখন রদ্রিগোকে দু–একটি গোল দিয়েও দেন, তাতে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়তো হবে না। কিন্তু ফুটবলে এই নিয়ম নেই। তাই চাইলেও এমবাপ্পের পক্ষে রদ্রিগোকে গোল দেওয়া সম্ভব নয়। ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে দুর্দশা মেনে নিয়ে তাই আপাতত গোলের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে।
রদ্রিগোর গোলখরার ৯ মাস পূর্ণ হলো আজ। মার্চের ৪ তারিখ চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় সর্বশেষ আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। সেটি ছিল রিয়ালের জার্সিতে তাঁর ৬৮তম গোল।
এর পর থেকে গোলের জন্য প্রহর গুনে চলেছেন তিনি। কিন্তু সোনার হরিণ হয়ে ওঠা গোল যেন ধরাই দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে রদ্রিগো গোলহীন আছেন ৩১ ম্যাচ ও ১ হাজার ৩৫১ মিনিট। যেখানে তাঁর ৩১ ম্যাচে গোলহীন থাকার ঘটনা ভুলে যাওয়ার মতো একটি রেকর্ডও বটে, রিয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড হিসেবে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোলহীন থাকার রেকর্ড।
আরও পড়ুনচলছে এমবাপ্পে-জাদু, জয়ে ফিরল রিয়াল৬ ঘণ্টা আগেএর আগে জিরোনার বিপক্ষে গোলশূন্য থেকে রদ্রিগো স্পর্শ করেছিলেন মারিয়ানো দিয়াসের ৩০ ম্যাচে গোলহীন থাকার রেকর্ডকে। গতকাল রাতে বিলবাওয়ের বিপক্ষে সেটি ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
৩১ ম্যাচ ধরে গোল পান না রদ্রিগো