ভারতে হামলার ছক, দুই বাংলাদেশিসহ ৫ জেএমবি সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদ
Published: 4th, December 2025 GMT
বাংলাদেশভিত্তিক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচজন সদস্যকে ভারতজুড়ে বোমা বিস্ফোরণ ও অন্যান্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে কলকাতার একটি আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। খবর ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসর।
তিনজন দোষী সাব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের বাসিন্দা হলেও, দুজন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা হলেন- বাংলাদেশের জামালপুরের আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে এনাম (৩৮) এবং মোহাম্মদ রুবেল ওরফে রফিক (২৬); বর্ধমানের মাওলানা ইউসুফ শেখ ওরফে শেখ ইউসুফ ওরফে আবু বক্কর ওরফে সুলেমান শেখ (৩১), আসামের বোরবেতার মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম ওরফে সামিম ওরফে আসরাফুল আলম ওরফে নির্মল ওরফে সূর্য সামিম (২২) এবং জাবিরুল ইসলাম (৩০)।
আরো পড়ুন:
বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা
পুতিন দিল্লি পৌঁছানোর আগেই ভারত-রাশিয়ার সামরিক চুক্তি অনুমোদন
২০১৪ সালের খাগড়াগড় (বর্ধমান) বোমা বিস্ফোরণ মামলায়ও মোহাম্মদ রুবেল এবং জাবিরুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
২০১৬ সালে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) গ্রেপ্তার করেছিল এই জঙ্গিদের। মামলা চলাকালীন আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেয় অভিযুক্তরা। ৯ বছর ধরে চলা মামলায় বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এই রায় দেওয়া হয়। কলকাতার সিটি সেশনস কোর্টের এনডিপিএস কোর্টের বিশেষ বিচারক রোহান সিনহা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
১২১এ ধারা (ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, চেষ্টা, অথবা যুদ্ধে প্ররোচনা দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র) এর অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য মাওলানা ইউসুফকে অতিরিক্ত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশি আইনের ১৪ ধারার অধীনেও দণ্ডিত করা হয়েছে।
তদন্তের সাথে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, “গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা গেছে, সন্ত্রাসী মডিউল সদস্যরা তাদের ভারতীয় সহযোগীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য ছিল উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলোর কিছু অংশ এবং দেশের অন্যান্য অংশে বোমা বিস্ফোরণের মতো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো।”
তিনি আরো বলেন, “এই গোষ্ঠীর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামি আইন (শরিয়া) বাস্তবায়ন, বৃহত্তর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা ও কাশ্মীরি জনগণের ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ নেওয়া। এই দলটি তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ভারতকে একটি বড় বাধা বলে মনে করে।”
এই পাঁচজনকে এসটিএফ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বনগাঁও, বসিরহাট, কোচবিহার এবং আসাম থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক, আইইডি উপাদান, ভারতে বিস্ফোরণের পরিকল্পনার বিবরণী, সাংগঠনিক বই, নগদ অর্থ, একটি ল্যাপটপ এবং একটি এসডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছিল।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রথমে এসটিএফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল কিন্তু খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণ মামলায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তাদের হেফাজতেও নিয়েছিল। অভিযুক্ত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই সব সাক্ষ্য ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে ওই পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেন আদালত।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে, কমেছে শিল্পে
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান আবার বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে দেশে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। ৬ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজারে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদানও বেড়েছে। ২০১৬ সালে মোট কর্মসংস্থানে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়।
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়লেও কমেছে শিল্প খাতে। ২০১৬ সালে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ মানুষের। ২০২২ সালে তা কমে ১ কোটি ১৯ লাখে নেমে এসেছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলনকক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটি তৈরি করেন বিআইডিএসের ফেলো এম এ সাত্তার মণ্ডল, গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো আজরীন করিম, গবেষক তাজনুরে সামিনা খানম ও রিজোয়ানা ইসলাম। তবে সেমিনারে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাত। ২০১৪ সালের পর থেকে কৃষি প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকলেও কর্মসংস্থান বাড়ছিল। আর কৃষির সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন, খাদ্য সেবা নিয়ে জিডিপিতে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশে।
প্রবন্ধে কৃষিজমির ব্যবহার নিয়ে বলা হয়, দেশের কৃষিজমির প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়। তবে গত ১০ বছরে পাট, দানাজাতীয় শস্য এবং ফল চাষের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। একই সময়ে মসলাজাতীয় ফসল এবং সবজির উৎপাদন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
ফসলের উৎপাদনশীলতা নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। অথচ দেশে মোট ধানের ৬০ শতাংশই আসে বোরো মৌসুমে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে বোরো ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, বিশ্বে মোট চাল ও গম উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাই কোনো কারণে উৎপাদন কমলে বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করা যায় না। যেমনটা ২০০৭-০৮ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন টাকা দিয়েও বিশ্ববাজার থেকে চাল ক্রয় করা যাচ্ছিল না।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষিশ্রমিকের আয় কমেছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে চালের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে আড়াই শতাংশ। আর গমের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে সাড়ে ৩ শতাংশ। ডাল–জাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা কমতে পারে ৪ শতাংশের বেশি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এম এ সাত্তার মণ্ডল। সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাকিল আকতার বলেন, খামারবাড়িতে ১৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও কৃষকের উন্নতি জন্য প্রকল্প কয়টি? প্রকল্প পরিচালক ও অন্যদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। রাজস্ব বরাদ্দ থেকে বেতন আর প্রকল্প থেকে গাড়ি কেনা হয়। কিন্তু গবেষণায় কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, নতুন কৃষক শ্রেণি যুক্ত হচ্ছে। তারা জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করছে। তবে ধান থেকে ভিন্ন ফসলের চাষ বাড়লে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, স্বাধীনতার পর আমাদের দৈনিক গড় ভাত গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৪৫০ গ্রাম, এখন তা ৩১৫ গ্রামে নেমে এসেছে।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় বলা হয়, দেশের ৫০ শতাংশ কৃষিজমিই এক একরের চেয়ে বড় নয়। অর্থাৎ নিজের খাওয়ার জন্য খোরপোশ কৃষি চাষাবাদ চলে দেশে।