মুর্শিদাবাদের প্রভাবশালী নেতা হুমায়ুনকে দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল
Published: 4th, December 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রভাবশালী এমএলএ হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বাংলাদেশ-লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি বাবরি মসজিদ গড়ার কাজ শুরু করবেন।
১৯৯২ সালে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনো নেতা এই মসজিদ নতুন করে নির্মাণের কথা বললেন এবং তিনি সেটা বললেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে।
হুমায়ুনের এই মন্তব্য নিয়ে রাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন এমএলএর এই ধরনের মন্তব্য হিন্দু ভোটকে এক জায়গায় নিয়ে এসে বিজেপির সুবিধা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ করার অভিযোগে হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।
ফিরহাদ বলেন, ‘আমরা তিনবার হুমায়ুনকে সাবধান করেছি। কিন্তু তিনি তাঁর কাজ করে চলেছেন। এ কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হলো। দল তাঁর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।’
তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, হুমায়ুন কবীরের এ ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা। মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যেখানে ২২টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এর প্রায় সব কটিই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে।
তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, মুর্শিদাবাদে উত্তেজনা ছড়ানোর পরে সেই উত্তেজনাকে নির্বাচনের আগে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের মাধ্যমে বাড়তি হিন্দু ভোট টানাই বিজেপির লক্ষ্য। এ কাজে বিজেপিকে ভেতর থেকে সাহায্য করছিলেন হুমায়ুন। সেটা রুখতেই তাঁকে দ্রুত দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল কংগ্রেস।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিরহাদ হাকিম বলেন, হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গে কেন বাবরি মসজিদ বানানো হবে, তা কেউই জানেন না। কিন্তু এ ধরনের একটা মন্তব্য করে দলকে রাতারাতি চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন হুমায়ুন। তাই তাঁকে বহিষ্কার করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, বিজেপির সঙ্গে কথাবার্তা বলেই এ কাজ করেছেন হুমায়ুন কবীর; যদিও এ বিষয়ে বিজেপি কোনো মন্তব্য এখনো করেনি।
হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ মুর্শিদাবাদের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দলে থেকে বহিষ্কার হওয়ার লক্ষ্যেই এ ধরনের প্রচার চালাচ্ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁর কাজকর্মে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কয়েক বছর ধরেই অখুশি। ফলে হুমায়ুন জানতেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
ওই নেতা বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে একধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হুমায়ুন কবীর শুরু করেছেন, যাতে বিজেপির সুবিধা হতে পারে। এর উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে, ভবিষ্যতে তিনি বিজেপি থেকে মনোনয়ন পেতে চাইছেন।
তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব হুমায়ুনকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিনের ভারত সফর, কী থাকছে অর্থনীতিতে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে আজ ভারতে এসেছেন। এই সফরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্বও আছে।
বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক বিরোধ তুঙ্গে, সেই সময় ভারতের পরীক্ষিত মিত্র রাশিয়া তার পাশে কতটা দাঁড়াতে পারে, বিশ্লেষকেরা তা দেখার অপেক্ষায় আছেন। এই সফরে অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন কিছু চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি যেখানে বছরে প্রায় ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি ডলার, সেখানে রাশিয়ায় তার রপ্তানি মাত্র ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ৪৮৮ কোটি ডলার। গত পাঁচ বছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়লেও সেই বাণিজ্য মূলত রাশিয়ার দিকেই হেলে আছে। সেই সঙ্গে ভারত সম্প্রতি রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতে আসছেন। খবর ইকোনমিক টাইমস ও দ্য হিন্দুর
গত অর্থবছরে, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালে ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। সেখানে রাশিয়ার রপ্তানি ছিল ৬৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই বাস্তবতায় ভারতের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানো একপ্রকার অসম্ভব। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে এত দিন অনড় থাকলেও সম্প্রতি ট্রাম্পের কথামতো রাশিয়ার তেল কেনা কমিয়েছে ভারত। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশটি। ২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় তারা।
যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন রাশিয়া ভারতকে আশ্বস্ত করে, তারা ভারত থেকে আরও পণ্য কিনবে। ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই সে কথা বলেছিলেন। ভারত চায় রাশিয়ায় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, খাদ্য ও ওষুধ সামগ্রীর রপ্তানি বাড়াতে। অন্যদিকে রাশিয়া চায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে তাদের রপ্তানি বাড়াতে।
এই বাস্তবতায় রুশ প্রেসিডেন্টের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে বলা হয়, এই সফরে পুতিন ও মোদি রাশিয়া-ভারতের বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। রাজনীতি, বাণিজ্য, অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে বিশেষ ও অগ্রাধিকারমূলক কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় কি না, সেটাই এই সফরের লক্ষ্য।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই সফরে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়েও বেশ কিছু চুক্তি হতে পারে।
ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অতিথি ফেলো আলেক্সিই জাকারভ বলেন, এই শীর্ষ বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির পথ খোঁজা। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য যেন একতরফা রাশিয়ার দিকে হেলে না থাকে, সেই ব্যবস্থা করা।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার বহুমুখীকরণরাশিয়া ভারতের মূল অস্ত্র সরবরাহকারী, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র আমদানি কমিয়েছে। মূলত রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনার কারণেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য একতরফাভাবে রাশিয়ার দিকে হেলে আছে।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহুমুখীকরণের কথা ভাবছে দুই দেশ। গবেষণা সংস্থা চ্যাটহ্যাম হাউসের তথ্যানুসারে, পুতিনের এই সফরে শ্রমিক সরবরাহের লক্ষ্য চুক্তি হতে পারে। অর্থাৎ ভারতের শ্রমিকেরা যেমন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নত দেশে যাচ্ছেন, এই চুক্তি হলে দক্ষ ভারতীয় শ্রমিকেরা রাশিয়াও যেতে পারবেন। এই চুক্তির তাৎপর্য বোঝা কঠিন নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সেটা হলো, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো।
গ্রাফিকস: প্রথম আলো