সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদে সমাবেশ ও স্মারকলিপি
Published: 20th, November 2025 GMT
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদে সমাবেশ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করে সচিবালয়ের গেটে যান জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের নেতারা। পরে তাঁদের প্রতিনিধিরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এই দাবিতে শনিবার বিকেল চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে দেশের অন্যতম ২৩টি সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শিক্ষক, ছাত্র ও শিশুসংগঠনের জোট ‘জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলন’ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে। এ সময় জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ মহলের চাপে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের গেজেটকৃত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।’
মাহমুদ সেলিম আরও বলেন, ‘শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি ও শরীরচর্চার যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা বিশ্বের সব শিক্ষাবিদ ও মনস্তত্ত্ববিদ দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। আমরা অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই। একই সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবি করছি।’
কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবু সাঈদ বলেন, ‘যথেষ্ট যৌক্তিক কারণেই চলতি বছরের গত ২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার প্রজ্ঞাপনের শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ২ নভেম্বর সেই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়। এটি একটি আত্মঘাতী ও পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ–সবল জাতি গঠনে অন্তরায়। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত একটি মনন-বোধ-বিবেক-বুদ্ধিহীন রোবট প্রজন্ম গড়ার ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করারই শামিল।’
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘উচ্চতর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যেসব শিশু সৃজনশীল কাজের সুযোগ পায়, তারা মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষা বন্ধের দাবি করে একটি মেধাহীন, বোধহীন প্রজন্ম গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ তিনি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই সংগীত, চারুকলা ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে নেতাদের মধ্যে মাহমুদ সেলিম, আবু সাঈদ ও মকবুল হোসেন সচিবালয়ে প্রবেশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। পরে তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, উপদেষ্টা এ বিষয়ে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, নজরুলসংগীত শিল্পী পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, নবান্ন উৎসব উদ্যাপন পরিষদ, বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ, রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র, শিল্পকলা বিদ্যালয় ঐক্যজোট, বাংলাদেশ বাউল ও লোক শিল্পী সংস্থা, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ভয়েস অব আর্টিস্ট, প্রাচ্যনাট, বিশ্ববীণা, আনন্দন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই স দ ধ ন ত স ম রকল প উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে জামাল ভূঁইয়ার হাত ধরে ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল উৎসবের উদ্বোধন
চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম নতুন সাজে সেজে উঠেছে তৃতীয় ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। রঙিন বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত স্টেডিয়ামের ভিতর-বাহির। ভেতরে ‘গোল…গোল…গোল’ থিম সংয়ের তালে তালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, স্লোগান আর আনন্দঘন পরিবেশে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো চত্বর।
এমন উৎসবের আবহেই আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসর। উদ্বোধনী ম্যাচে সমর্থকদের উল্লাসের পাশাপাশি হারের আক্ষেপ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তেজনা মিলিয়ে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের চট্টগ্রাম পর্ব পেয়েছে বর্ণিল সূচনা।
সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন পরিণত হয়েছিল তারার মেলায়। ঢাকা থেকে এসে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক চার অধিনায়ক—টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ইমতিয়াজ সুলতান জনি, চট্টগ্রামের সন্তান মামুনুল ইসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। তাঁদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের উৎসবমুখর পরিবেশে যোগ হয় বাড়তি উচ্ছ্বাস। জামালকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সেলফি তোলা তোলার হিড়িক পড়ে। জাতীয় দলের অধিনায়ককে কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছিলেন আপ্লুত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানি, ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা শাকির ইস্পাহানি, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যসচিব ও জেলা ক্রীড়া অফিসার আবদুল বারী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জামাল ভূঁইয়া।
ইস্পাহানির পতাকা উত্তোলন করেন মির্জা সালমান ইস্পাহানি। টুর্নামেন্টের পতাকা, প্রথম আলোর পতাকা ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে এসে নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে নিজের খেলার স্মৃতিচারণা করেন তিনি। এই মাঠে শেখ কামাল টুর্নামেন্টে খেলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে। জামাল বলেন, ‘এই মাঠে আছে আমার অনেক ভালো স্মৃতি। ইস্পাহানি-প্রথম আলোকে ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সামনে এমন একটি মঞ্চ পেতে দেওয়ার জন্য।’
অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেন তিনি, ‘ইস্পহানি-প্রথম আলো তোমাদের সামনে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। মনের আনন্দের খেল, উপভোগ কর, নিজেকে মেলে ধর।’
নকআউটভিত্তিক টুর্নামেন্টের প্রথম দিনের প্রথম ম্যাচটা হয়েছে বেশ নাটকীয়। প্রথম ম্যাচেই পাওয়া গেছে টাইব্রেকারে উত্তাপ। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম পিছিয়ে পড়েও খেলায় ফিরে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে। খালেদ বিন সেলিম এগিয়ে নেন বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রামকে ম্যাচে ফেরান অধিনায়ক অন্তিম হোসেন সৈকত। এরপর টাইব্রেকারে জেতে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন জয়ী দলের অন্তিম হোসেন সৈকত। তাঁর হাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার তুলে দেন জামাল ভূঁইয়া, মির্জা সালমান ইস্পাহানি ও আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। গত বছরও প্রথম ম্যাচে টাইব্রেকারে জিতেছিল ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে এবার ঢাকার ২৮টি, চট্টগ্রামের ১০টি, খুলনা ও রাজশাহীর ৪টি করে মোট ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে। চট্টগ্রামে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ঢাকায়।
২৩ নভেম্বর রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে ও ২৫ নভেম্বর খুলনা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা মাঠে ওই দুটি অঞ্চলের খেলা হবে। এরপর ২৮ নভেম্বর ঢাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে শুরু হবে ঢাকার আঞ্চলিক পর্বের খেলা।