বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা
Published: 5th, December 2025 GMT
একাত্তরে ফরাসি পত্রিকায় বাঙালিদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বর্ণনা প্রকাশিত হতো। সেই সব সংবাদ ব্যথিত করেছিলো ২৮ বছর বয়সী ফরাসি যুবক জঁ ক্যাকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু করার উপায় খুঁজতে গিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। জঁ ক্যাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো আন্দ্রে মালরোর বাংলাদেশ নিয়ে লেখা ও বক্তৃতা।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে জঁ ক্যা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামে বোয়িং-৭২০বি বিমানটি ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো বিমানে ওষুধ আর চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে যুদ্ধাহত ও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি নিতে পাইলট বিমানটি চালু করেছেন। জঁ ক্যা দাঁড়িয়ে গেলেন। এবং পকেট থেকে পিস্তল বের করে পাইলটকে ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। আর হুমকি দিলেন তার নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে থাকা বোমা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেবেন। বিমানের ওয়্যারলেসটি কেড়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন জঁ ক্যা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জঁ নির্দেশ দিলেন, ‘বিমানটিতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী তুলে দিতে হবে’।
আরো পড়ুন:
‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে…’
আজ খোকসা মুক্ত দিবস
দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন। এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা মুহূর্তে পুরো ফ্রান্স ছাড়িয়ে ইউরোপসহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। জঁ ক্যাকে দেখতে বিমানবন্দরে মানুষ জড়ো হতে শুরু করলো। কিন্তু বিমানটিকে মুক্ত করতে ফরাসি সরকার নতুন এক ফাঁদ পাতল। আর তাতেই ধরা দিতে হলো জঁ ক্যাকে।
রেডক্রস আরেক ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অর্দে দ্য মানতে’র সহায়তায় বিমানবন্দরে দুটি ওষুধভর্তি গাড়ি নিয়ে হাজির হলো ঠিকই।ওই গাড়ির চালক ও স্বেচ্ছাসেবকের পোশাক পরে বিমানটিতে প্রবেশ করলেন ফরাসি পুলিশের বিশেষ শাখার চারজন সদস্য। তারা ওষুধের বাক্সে পেনিসিলিন রয়েছে বলে সেগুলো বিমানের ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখতে থাকেন। একপর্যায়ে বাক্স নামাতে সহায়তার নাম করে জঁ ক্যার হাতে একটি বাক্স তুলে দেন। এরপরই তার ওপর আক্রমণ শুরু করেন পুলিশের সদস্যরা।
ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রাত ৮টায় জঁ পুলিশের হাতে আটক হন।
আন্দ্রে মালরো শেষে এই ‘খ্যাপাটে অনুরাগী’কে মুক্ত করতে সব চেষ্টা করেন। মালরোর আইনজীবী বন্ধু বিনা পারিশ্রমিকে জঁ ক্যার পক্ষে লড়াইয়ে নামেন। তিনি ছিনতাই হওয়া ওই পাকিস্তানি বিমানের সব যাত্রী ও ক্রুদের সাক্ষ্য নেন। তারা সবাই একবাক্যে বলেন, জঁ ক্যা তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি, এমনকি কারও দিকে সরাসরি পিস্তল তাক করেননি। তিনি উলটো বলেন, ‘‘তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাহত শিশু ও শরণার্থীদের ওষুধ পাঠানোর জন্য বিমানটি ছিনতাই করেছেন— তারা যেন সহযোগিতা করেন’’।
এরপরও জঁ শেষ রক্ষা পাননি। ফরাসি আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন।আইনি লড়াইয়ের পর তার শাস্তির মেয়াদ তিন বছর কমানো হয়। জঁ ক্যা ১৯৭৩ সালে মুক্তি পান।
ফরাসি পত্রিকার তথ্য অনুসারে, ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন জঁ।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই ব ম নট
এছাড়াও পড়ুন:
ভাই খুন করার পর মৃত প্রেমিককে বিয়ে করলেন তরুণী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজনের পরিচয়। এরপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা। পরে মন দেওয়া–নেওয়া। একপর্যায়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেষ সাতপাকে বাঁধা হলো না। ভিন্ন জাতের কারণে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়। অভিযোগ প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে দমে যাননি প্রেমিকা। প্রেমিকের মরদেহকে বিয়ে করে তাঁর বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তরুণীর নাম আঁচল মামিদওয়ার (২১)। তাঁর প্রেমিকের নাম সক্ষম তাতে (২০)। মৃত প্রেমিককে বিয়ে করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
আঁচল বলেন, তাঁরা বিয়ে করলে মেনে নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি। আমার ভাইয়েরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরাই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবেন; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
সক্ষমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান আঁচল। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (পরিবারের সদস্যরা) সক্ষমের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন, একসঙ্গে খেতেন। তাঁরা সক্ষমকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ভাবতে পারিনি যে এমন কিছু ঘটবে।’
পুলিশের উসকানি
আঁচল অভিযোগ করেন, ধীরাজ কোমলওয়ার ও মহিত আসারওয়ার নামের দুজন পুলিশ সদস্য এ কাজে তাঁর ভাইদের উসকানি দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড ছিল বলে জানা গেছে।
আঁচল বলেন, ‘সক্ষমকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন বেলা ১১টার দিকে আমার ছোট ভাই আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সক্ষমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিতে বলে, যা ছিল মিথ্যা। আমি তাতে রাজি হইনি।’
মহারাষ্ট্রের এই তরুণী বলেন, ‘তখন পুলিশ আমার ভাইকে বলে, “তুমি তো মানুষ খুন করার পরেও এখানে আসো। তোমার বোন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেন, তাঁকে মেরে ফেলো না কেন?”’
আঁচল বলেন, ‘পুলিশের কথার জবাবে আমার ভাই বলে, “ঠিক আছে, সন্ধ্যার মধ্যেই তাকে মেরে আপনাদের কাছে হাজির হব।”’
সক্ষমকে যেভাবে হত্যা করা হয়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সক্ষম। তখন আচঁলের ভাই হিমেশ মামিদওয়ারের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়, যা শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নেয়। হিমেশ একপর্যায়ে ২০ বছর বয়সী সক্ষমকে গুলি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গুলিটি তাঁর পাঁজরে লাগে। এরপর হিমেশ তাঁর মাথায় টাইলস দিয়ে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই তাঁকে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনায় হিমেশ, তাঁর ভাই সহিল, তাঁদের বাবা গজনান মামিদওয়ার এবং আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
শেষকৃত্য রূপ নেয় বিয়েতে
পরদিন সন্ধ্যায় শুক্রবার সক্ষমের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছিল। আঁচল তখন সক্ষমের বাড়িতে গিয়ে সিঁদুর পরে সক্ষমের মরদেহকে ‘বিয়ে’ করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে সক্ষমের সঙ্গে প্রেম করেছি। কিন্তু জাতপাতের পার্থক্যের কারণে আমার বাবা এ সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন। আমার পরিবার প্রায়ই সক্ষমকে হত্যার হুমকি দিত। আর এখন আমার ভাই ও বাবা সেটাই করে ফেলেছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।’
আঁচল বলেন, এখন থেকে তিনি সক্ষমের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন।
‘জাতপাতের কারণে হত্যা’
আঁচল জানিয়েছেন, পরিবার বলে দিয়েছে তাঁর জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতপাতের কারণে। আমার বাবা ও ভাইয়েরা বলতেন, “আমরা গ্যাংস্টার, সক্ষম তা জানে। সে কীভাবে আমাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়?”’
আঁচল বলেন, সক্ষমের পরিবার তাঁকে মেনে নিয়েছে। তিনি আজীবন তাদের সঙ্গেই থাকবেন। তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এই তরুণী বলেন, ‘অনেক মানুষ আমার পাশে রয়েছে। জাতের কারণে কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।’