নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ বা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড, যেটিকে প্রায়ই বাংলাদেশের ‘প্রবাল দ্বীপ’ নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, আজ এক ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র। কয়েক দশকের সরকারি অবহেলা, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন এবং পর্যটনের এই দ্বীপকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। ব্যাপক বিশ্বাসের বিপরীতে বলা দরকার, প্রাকৃতিকভাবে এটি কোনো প্রবাল দ্বীপ নয়, এটি একটি প্রবাল বহনকারী বাস্তুতন্ত্র। অনন্য ভূতত্ত্ব ও জীববৈচিত্র্য দ্বীপটিকে একটি জাতীয় রত্ন করে তুলেছে। তবে সেই রত্ন এখন পদদলিত, যার বেশির ভাগ ক্ষতি এড়ানো সম্ভব ছিল।

১৯৮০ সালে যখন আমি প্রথমবারের মতো গবেষণার জন্য দ্বীপটিতে যাই, তখন সেখানে ছিল মাত্র তিন হাজার বাসিন্দা, একটি জরাজীর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং কয়েক শ শীতকালীন দর্শনার্থী। ছোট্ট একটি নৌকাঘাটে ছিল গুটিকয় দোকান নিয়ে একটি বাজার। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন তখন ছিল সাবরাং ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড, এখন পুরোদস্তুর একটি ইউনিয়ন।

ডিম পাড়তে আসা জলপাইরঙা কাছিম.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নামাজে মনোযোগ আনতে কি চোখ বন্ধ রাখা যায়

নামাজে আল্লাহর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো এবং সর্বোচ্চ একাগ্রতার সঙ্গে ইবাদত করা জরুরি। এর জন্য অনেক মুসল্লি বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। কেউ কেউ চোখ বন্ধ রেখে মনোযোগ আনতে চান। নামাজে চোখ খোলা রাখা হবে, নাকি বন্ধ করা হবে—এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং এটি নির্ভর করে মূলত মুসল্লির অবস্থার ওপর।

এই বিষয়ে কায়রোর জয়নাবি মসজিদের শায়খ ইবরাহিম জালহুম যে সারসংক্ষেপ করেছেন, তা থেকে ইসলামি ফিকহের নির্দেশনা তুলে ধরা হল

নামাজে একাগ্রতা রক্ষা করা

একজন মুমিন নামাজে দণ্ডায়মান হওয়ার সময় আল্লাহর সামনে বিনয়ী ও একাগ্রচিত্ত হবেন, এটাই হল নামাজের মূল দাবি। ইবাদতের ক্ষেত্রে এটিই প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। শায়খ ইবরাহিম জালহুম এই মূলনীতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, “হে মুসলিম, জেনে রাখো যে, নামাজে তোমার রবের সামনে দণ্ডায়মান অবস্থায় তোমার অবশ্যই খুশু বা বিনয়ী থাকতে হবে।” (আহকামুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫, মাকতাবাতুল ফিকহি, কায়রো, ২০১০)

নামাজে চোখ বন্ধ করা বা খোলা রাখা—এই দুটির মধ্যে যে কাজটি খুশু বা একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, সেই কাজটিই উত্তম।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

নামাজে চোখ খোলা রাখা উত্তম

ফিকহশাস্ত্রের মূলনীতি অনুসারে, নামাজে চোখ খোলা রাখাই উত্তম এবং এটিই নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ। কারণ, রাসুল (সা.) নামাজের সময় সিজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। (সুনান বায়হাকি, হাদিস: ৩০৮০)

চোখ খোলা রাখলে নামাজের সমস্ত রোকন (অংশ) সঠিকভাবে আদায় করা হয় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির থাকে।

যদি মুসল্লি চোখ খোলা রেখেও তার একাগ্রতা ও মনোযোগ পুরোপুরি ধরে রাখতে পারেন এবং আশেপাশের দৃশ্য বা কারুকার্য তার হৃদয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে, তবে এই অবস্থাই হলো সবচেয়ে উত্তম। শায়খ জালহুম এ বিষয়ে বলেন, “যদি নামাজে চোখ খোলা রাখলে তোমার খুশুর (একাগ্রতার) কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, তবে চোখ খোলা রাখাই বন্ধ করার চেয়ে উত্তম।” (আহকামুস সালাত, পৃষ্ঠা ০৬, মাকতাবাতুল ফিকহি, কায়রো, ২০১০)

মূলত, অধিকাংশ আলেম চোখ খোলা রাখাকে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) বলেছেন, কারণ এটি নবীজির আমল।

বিশেষ অবস্থায় চোখ বন্ধ করা

কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি রয়েছে, যখন চোখ বন্ধ করা শুধু জায়েয নয়, বরং তা উত্তম হওয়ার কাছাকাছি চলে আসে। এটি নির্ভর করে মুসল্লির পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর।

মনোযোগ ধরে রাখার জন্য: যদি কোনো ব্যক্তির জন্য চোখ বন্ধ করা তার মনকে বিক্ষিপ্ততা থেকে রক্ষা করতে, দুশ্চিন্তা দূর করতে এবং নামাজে তাড়াতাড়ি আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে সহায়ক হয়—এমনকি যদি তার সামান্য তন্দ্রা বা ঘুমও না আসে যা তার পড়া বা কাজকে প্রভাবিত করে—তবে তিনি চোখ বন্ধ করতে পারেন। এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করা তার জন্য অধিক উপযোগী এবং খুশু সহকারে ইবাদত পালনে সহায়ক।

শায়খ জালহুম এটিকে অবস্থার সঙ্গে মানানসই বলে উল্লেখ করেছেন, “যদি তোমার চোখ বন্ধ করা তোমার সকল মনোযোগ ও চিন্তাকে একত্র করে এবং এর দ্বারা তুমি তোমার নামাজে আল্লাহর প্রতি আরও বেশি বিনয়ী হতে পারো—তবে চোখ বন্ধ করো। এটিই তোমার অবস্থার সঙ্গে অধিক মানানসই এবং সর্বশক্তিমান রবের জন্য খুশুসহ ইবাদত আদায়ে তোমাকে সাহায্য করবে।” (আহকামুস সালাত, পৃষ্ঠা ০৫, মাকতাবাতুল ফিকহি, কায়রো, ২০১০)

আরও পড়ুননামাজে মোবাইল বেজে উঠলে কী করবেন০৮ অক্টোবর ২০২৫

দৃষ্টিতে বিভ্রান্তিকর কিছু থাকলে: নামাজ আদায়ের স্থানে যদি এমন কোনো জিনিস, নকশা, ছবি বা কারুকার্য থাকে, যা মুসল্লির মনোযোগে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে—যেমন:

মনোযোগ বিঘ্নকারী চিত্র বা কারুকার্য।

মুসল্লিকে বিভ্রান্ত করে এমন দৃষ্টিনন্দন জিনিস।

এমন পরিবেশ, যেখানে চোখ খোলা রাখলে তার রুকুনের সংখ্যা বা কিরাত ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে নামাজ আদায় করা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) নয়, বরং এটিই পছন্দনীয় হতে পারে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওযি (রহ.) এই বিষয়ে বলেন, “যদি চোখ খোলা রাখলে খুশুতে ব্যাঘাত ঘটে, তবে এমন অবস্থায় চোখ বন্ধ করা অপছন্দনীয় বলার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং এমন পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করার পক্ষে বলাটি শরিয়তের মূলনীতি ও উদ্দেশ্যের অধিক নিকটবর্তী, অপছন্দনীয় বলার চেয়ে।” (আল-হাদী আল-নাবাওয়ী, ১/৩০৫, দারুল ফিকরি, বৈরুত, ২০০১)

অর্থাৎ, যেখানে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন, সেখানে খুশু রক্ষার স্বার্থে চোখ বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো হৃদয়ের একাগ্রতা।

মুসল্লির ইচ্ছাশক্তি ও পরিবেশের বিবেচনা

নামাজে চোখ বন্ধ করার বিধানটি হল ‘মুস্তাহাবকে খুশুর কারণে ব্যতিক্রম হিসেবে বৈধ’ বলার উদাহরণ। সাধারণ বিধান হল নামাজে চোখ খোলা রাখা এবং সিজদার স্থানের দিকে তাকানো সুন্নাহ ও উত্তম।

তবে যদি চোখ খোলা রাখার কারণে খুশু বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে, অথবা নামাজের স্থানে মনোযোগ নষ্টকারী চিত্র বা কারুকার্য থাকে, তবে খুশু রক্ষার স্বার্থে চোখ বন্ধ করা শুধু বৈধ নয়, বরং উত্তম বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, চোখ বন্ধ করার ফলে যেন তন্দ্রা বা অলসতা না আসে।

সুতরাং, নামাজে চোখ বন্ধ করা তখনই উত্তম, যখন তা বান্দাকে আল্লাহর সামনে আরও বেশি বিনয়ী ও একাগ্রচিত্ত হতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ