স্যাম কনস্টাসকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অনেকেই। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির শেষ দুই টেস্টে সাহসী ক্রিকেটের জন্য তিনি এখন বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। মেলবোর্নে অভিষেক টেস্টেই যেভাবে যশপ্রীত বুমরার ওপর তিনি চড়াও হয়েছেন, সেটি তো এখনো আলোচনার বিষয়। তবে এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং বললেন, কনস্টাসের কৌশলই কাল হতে পারে তাঁর জন্য।

কনস্টাস টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৪ ইনিংস। তবে তাঁকে ঘিরে বেশি আলোচনা অভিষেকে ৬০ রানের ইনিংসকে ঘিরে। আলোচনার অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। কী হয়েছিল সেই ইনিংসে, সেটা আরেক দফা মনে করিয়ে দিলে আরও বাড়াবাড়ি মনে হবে না। সেদিন এমিসিজেতে ইনিংসের শুরুতে বুমরার করা প্রথম ওভার মেডেন দিয়েই শুরু করেছিলেন কনস্টাস। দ্বিতীয় ওভারে নিয়েছিলেন ২ রান।

এরপর বুমরার করা তৃতীয় ওভারেও মেডেন দেন কনস্টাস। বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসারের সামনে অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের এমন হাঁসফাঁস দশা মোটেও অস্বাভাবিক মনে হয়নি। বুমরার প্রথম ১৮ বলে কনস্টাস করতে পারেন মাত্র ২ রান।

ফিফটির পর স্যাম কনস্টাস.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যাকে চিনি না, তাকেই কেন এত আপন মনে হয়

কোনো কারণ ছাড়াই ‘তোমায় আমি চিনি না, আবার বোধ হয় চিনি’ অনুরণিত হচ্ছে। আর মনে পড়ছে কমলদার কথা। ছোটবেলায় আমাদের পাড়ায় কমল ঘোষরা থাকতেন। তাঁদের ঘরে ঢুকলেই মনে হতো ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেছি। দেয়ালজুড়ে পোস্টার—রবিন হুড থেকে অঞ্জন দত্ত। টাইটানিক জাহাজে হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, গিটার হাতে জন লেলন। কমলদা মাঝেমধ্যে সেই পোস্টারের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতেন। লিওনার্দোর জন্মদিনে কেক কাটতেন, লেলন-অঞ্জনের গানে চোখ বন্ধ করে এমনভাবে দুলতেন, যেন বণিকপাড়ার মন্দির চত্বরে অঞ্জন গাইছে ‘পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব’।

আমরা তখন ছোট। হাসাহাসি করতাম। ভাবতাম, হয়তো কমলদা একটু পাগল। যাকে কখনো দেখা যাবে না, যার সঙ্গে বাস্তবে কোনো সংযোগ নেই, তার জন্য এত আবেগের বিচ্ছুরণ।

কিন্তু আজ, পঁচিশ বছর পরে, যখন দেখলাম কেমব্রিজ ডিকশনারি ২০২৫ সালের সেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘প্যারাসোশ্যাল’, হঠাৎ মনে হলো—কমল ঘোষ পাগল ছিলেন না। তিনি কেবল সেই একপক্ষীয় সংযোগের জগতে বসবাস করতেন, যাকে আজ আমরা প্যারাসোশ্যাল সম্পর্ক হিসেবে আবিষ্কার করছি।

প্যারাসোশ্যাল। শব্দটি শুনতে অদ্ভুত। তবে এর অনুভূতিটা কমল ঘোষদের পথ ধরে আমি সহজে বুঝতে পারছি। প্যারাসোশ্যালের সহজ বাংলা—একপক্ষীয় প্রেম বা বন্ধুত্ব। এমন কোনো মানুষের সঙ্গে গভীর মানসিক সংযোগ, যাকে আপনি ভালোবাসেন, চেনেন, অনুভব করেন, অথচ সে আপনাকে চেনে না। আপনার অস্তিত্বের কথাও জানে না। ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞানীরা যখন প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, তখন তাঁরা টেলিভিশন আর রেডিওর দর্শকদের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু এক শ বছর পর, শব্দটি মানুষের নিঃসঙ্গতার এক বড় আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু আজ, পঁচিশ বছর পরে, যখন দেখলাম কেমব্রিজ ডিকশনারি ২০২৫ সালের সেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘প্যারাসোশ্যাল’, হঠাৎ মনে হলো—কমল ঘোষ পাগল ছিলেন না। তিনি কেবল সেই একপক্ষীয় সংযোগের জগতে বসবাস করতেন, যাকে আজ আমরা প্যারাসোশ্যাল সম্পর্ক হিসেবে আবিষ্কার করছি।

আমাদের অতীতটা ছিল দূরত্বের। কিংবা সুদূরের। সেই সময়ের তারকারা আকাশের নক্ষত্রের মতো আমাদের থেকে দূরে ছিলেন। সালমান শাহর মৃত্যুতে যে কিশোরী ভাত খাওয়া বন্ধ করেছিল বা হুমায়ুন ফরীদিকে দেখে যে ছেলেটি ভিলেন হওয়ার স্বপ্ন দেখত—তাদের ভালোবাসা ছিল পবিত্র, নীরব, ব্যক্তিগত। সে সময় লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারের ভিড় ছিল না। ভিউ দিয়ে কোনো কিছুর মান নির্ধারিত হতো না। ছিল শুধু অনুভব। কিন্তু সেই অনুভবের তীব্রতা এতটা গভীর ছিল যে সালমান শাহর ট্র্যাজিক মৃত্যুর পরে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ভক্ত আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছিলেন। এই একপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা, যেখানে মানুষ তাদের নিজের জীবনের বাস্তবতা বিসর্জন দিয়ে এক স্ক্রিনের চরিত্রের সঙ্গে গভীর একপক্ষীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অতীতের উদাহরণগুলো আমার চোখে এখনো স্পষ্ট।

কিন্তু আজকের পরিস্থিতি আরও জটিল। জেন–জি প্রজন্ম—সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, রিল, কে–পপ তারকা—এরা প্রতিদিন একই ধরনের একপক্ষীয় সংযোগ তৈরি করছে। ভিডিওতে চোখে চোখ রেখে সময়ের তারকারা বলছে, ‘তোমরা আমার ফ্যামিলি।’ এবং আমরা বিশ্বাস করছি। মনে হয় আমরা তাদের ড্রয়িংরুমে বসে আছি। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। এই একপক্ষীয় সংযোগ এখন মানুষের জীবনের এমন জায়গায় প্রবেশ করেছে, যেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে, মা–বাবা, ভাই-বোনের সঙ্গে সংযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ ঘর ছাড়ছে, পরিবার-পরিজনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নিজের ভার্চ্যুয়াল পরিচয়ের সন্ধান করছে।

এটি শুধু চরমতম নিঃসঙ্গতার প্রতিফলন নয়, এটি মানুষের প্রতি মানুষের সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। প্রাণ-প্রকৃতি–প্রতিবেশের প্রতি দায়বোধ থেকে মানুষ নিজেকে মুক্ত মনে করছে। আমাদের চারপাশ, প্রকৃতির ক্ষতি—সবকিছুকে আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা এমন এক জগতে বসবাস করছি, যেখানে প্রতিবেশীর চেয়ে স্ক্রিনের চরিত্র আমাদের কাছে বেশি প্রিয়। আমরা আমাদের মা–বাবা, সহকর্মীর সঙ্গেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাই, অথচ বাস্তব সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।

প্যারাসোশ্যাল পুঁজিকে নতুন বাস্তবতায় পুষ্ট করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ