উন্নয়নের কারণে গাছ কাটতেই হবে, এটিই যেন এ দেশের নিয়ম হয়ে গেছে। গাছ না কেটে বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে কীভাবে উন্নয়ন করতে হবে, সেই বিবেচনাবোধ কখন আমাদের নীতিনির্ধারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ করবে, আমরা জানি না। দুই বছর ধরে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গাছ কাটা নিয়ে বেশ শোরগোল উঠেছিল। কিন্তু কোনো প্রতিবাদই দিন শেষে কাজে আসছে না। যার কারণে আমরা দেখছি বান্দরবানে একটি সড়ক সম্প্রসারণের কাজে কেটে ফেলা হচ্ছে হাজারেরও বেশি গাছ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
বান্দরবান সদর উপজেলার বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়ক থেকে শুরু হয়ে রেইচা-গোয়ালিয়াখোলা হয়ে কেয়ামলং ও গুংগুরু সংযোগ সড়কে গিয়ে মিলেছে এ সড়ক। দুই বছর আগেও সাত কিলোমিটারের সড়কটির দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহে সবুজ বেষ্টনী মোড়ানো ছিল। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এসব গাছ কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সড়ক সম্প্রসারণের কথা বলে সড়কের দুপাশের পাঁচ শতাধিক গাছ ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে। কিছু গাছের গুঁড়ি এক্সকাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে, যেন গাছ কাটার কোনো চিহ্ন পাওয়া না যায়। এ নিয়ে ডেইলি স্টার বাংলা অনলাইন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
২০১৮ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নোমানের সই করা নিলাম ও গাছ কাটার অনুমতিপত্র অনুযায়ী সড়কটির সম্প্রসারণের জন্য ৬৬৬টি মেহগনিগাছ, ৩৩৪টি শিশুগাছসহ মোট এক হাজার গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। ঠিকাদার ২৮০টি গাছ কেটে ফেলার পর সে কাজে বাধা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, এলজিইডি ও বন বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
বান্দরবান সদর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদের বক্তব্য, রাস্তাটি স্থানীয় প্রশাসনের অধীন। বন বিভাগ এটার অংশীজন নয়। রাস্তার দুই পাশে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলমান। সে মামলায় বন বিভাগও আসামি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেনের বক্তব্য, বান্দরবান এলজিইডি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাস্তাটি সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ এলজিইডি করবে না এবং তারা কাউকে গাছ কাটা কিংবা পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সুপারিশ বা অনুমতি দেয় না।
রাস্তার দুই পাশে গাছ কাটা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান, আবার গাছ কাটার অনুমতিও এলজিইডি দেয় না; তাহলে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছগুলো কীভাবে কাটা হচ্ছে? কারা ঠিকাদারকে এ গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে? ওই সড়কে ৭০–৮০ বছর থেকে শতবর্ষী অনেক গাছ আছে। এসব গাছ কোনোভাবেই কাটার সুযোগ নেই। গাছ কেটে এভাবে সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তাও যাচাই করা হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার নিন্দা জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই নির্মম দৃশ্য জাহেলিয়াতের লোমহর্ষক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতাকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশবিক এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘৯ জুলাই বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো. সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মাথায় পাথর মেরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যা করে তারা শুধু সোহাগকে উলঙ্গই করেনি, তাঁর লাশের ওপর নৃত্য করে আনন্দ–উল্লাসও করেছে।’
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এসেছে, চকবাজার থানা যুবদলের কয়েকজন নেতা নিহত সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে যুবদলের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেশবাসীর প্রশ্ন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের লালনপালনকারী দলের নেতারা যে রাজনীতির কথা বলে বেড়ান, সেই দলের হাতে জনগণের জানমাল কতটা নিরাপদ? এই দলের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না।
এ ঘটনায় আবার সেই পতিত ফ্যাসিবাদেরই পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরকারকে এই সব দুর্বৃত্তদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে এবং দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গোলাম পরওয়ার।
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি
এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দলটি। এক বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। অথচ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত সারা দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে আবারও গণ–অভ্যুত্থানপূর্ববর্তী পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, ‘দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রশাসন কোথাও অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। রাজধানীসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারা অপরাধ করছে, রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে সরকারকে আবারও নতুন করে জনরোষের মুখোমুখি হতে হবে।’
অবিলম্বে সারা দেশে কম্বাইন্ড (সমন্বিত) অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান নেতারা।
আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন নৃশংসতার রাজনীতি চলতে পারে না২ ঘণ্টা আগেগণ অধিকার পরিষদের নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিপুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। অবিলম্বে এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নয়, মানবতা, আইন, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত। জনসমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে একজন মানুষকে হত্যা করা কেবল নৃশংসতাই নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্ট করে তুলেছে যে দেশের নাগরিক নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।’