অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার অভ্যাস বদলাতে হবে
Published: 14th, December 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দীর্ঘ স্বৈরশাসনের সময় বহু মানুষকে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি দেখা গেছে। অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি তখন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
রোববার রাতে বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে তিনি এই সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। এই সভায় বিভিন্ন পেশার শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সভায় পেশাজীবীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, যারা আগামী দিনে সরকার গঠন করবে, তাদের সবার আগে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বশক্তি দিয়ে এটি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে অনেক কিছু ঘটার যে সম্ভাবনা, সেটি কমে আসবে।
ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে এবং এটি জাতিকে প্রতিদিন পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী দিনে সরকারকে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। যানজট সয়ে গেলে চলবে না, এর সমাধান বের করতে হবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে বিএনপির নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য শক্তিশালী ‘ম্যান্ডেট’ (জনরায়) লাগবে বলেও সভায় উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আগামী সরকারকে শক্তিশালী ম্যান্ডেটের ওপর দাঁড়াতে হবে। যদি ম্যান্ডেট দুর্বল হয়, তাহলে হয়তো অনেক কাজ করা সম্ভব হবে না।
এই সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। ক্ষমতায় যেতে পারলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশকে আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে বিএনপি।
নৈতিক অবকাঠামো পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নিসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান। প্রবন্ধে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হলেও রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনে কিংবা সমাজের নৈতিক অবকাঠামো পুনরুদ্ধারে বিগত ১৬ মাসে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি গত ১৬ মাসে সংস্কারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও আস্থাহীনতা নিরসনে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি; বরং বেশ কিছু রাজনৈতিক শক্তি ও সুযোগসন্ধানী মহল জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ক্ষুদ্র দলীয় ও গোষ্ঠীস্বার্থে দ্বন্দ্ব ও আস্থাহীনতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র কোন পথে চালিত হবে, আগামী নির্বাচন সেটি নির্ধারণ করবে উল্লেখ করে এই প্রবন্ধে বলা হয়, এটি কেবল নতুন সরকার গঠন নয়, বরং এটি সবাইকে নিয়ে গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার এক অগ্নিপরীক্ষা। স্পর্শকাতর এই সময়ে জনপ্রত্যাশা পূরণে যথেষ্ট সচেষ্ট না হলে জাতির জীবনে ভয়াবহ ও অনিশ্চিত রাজনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
‘নির্বাচন ভন্ডুল করতে গুপ্তহত্যা’মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির ওপর আক্রমণ ভারত-আশ্রিত ফ্যাসিস্টদের আক্রমণ।
দেশে এখন ক্ষমতার ভারসাম্য নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, কিছু মানুষ অতিমাত্রায় ক্ষমতাবান, আর সাধারণ মানুষ ক্ষমতাহীন। এই বৈষম্য দূর না হলে সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, অতীতে ক্ষমতায় থেকে বিএনপি যেসব ভুল করেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। পছন্দের মানুষকে নয়, যোগ্য মানুষকে সংসদে নিতে হবে।
‘দেশ যাতে ডান বা উগ্র ডানপন্থার দিকে না যায়’বিএনপি আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, জনগণের একটি বড় অংশ চায় বাংলাদেশ মধ্যপন্থী ধারায় থাকবে। এটা খুব জরুরি। অনেক মানুষই চায় বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবে ডান এবং উগ্র ডানপন্থার দিকে চলে না যায়।
সভায় আরও বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।
এই সভার সঞ্চালক ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ত র ক রহম ন র জন ত ক ব এনপ র প রবন ধ উদ দ ন র জন য সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের তামাশা
মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তানিরা আশা করেছিল, চীন হয়তো তাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের চীন সফরে মধ্যস্থতা করে তাদের সেই আশা আরও প্রবল হয়েছিল। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য ও শেষ পর্যন্ত প্রবল আশা ছিল, যা তারা প্রকাশ্যে দেখাচ্ছিল, তা হলো চীন শেষ পর্যন্ত তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এটি ছিল একটি তামাশা। কারণ, চীনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা সামরিকভাবে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না। সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দেবে।
রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক আলোচনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই মন্তব্য করেন।
ডেইলি স্টার ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় ও ব্যক্তির অবদান তুলে ধরতে ‘ইতিহাস আড্ডা’ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার আয়োজন করেছে। এটি ছিল সপ্তম আয়োজন। কবি ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ। অসুস্থতার কারণে আরেক আলোচক গবেষক–সাংবাদিক মঈদুল হাসান আসতে পারেননি।
চীনের তামাশা, যুক্তরাষ্ট্রের নাটকঅধ্যাপক রেহমান সোবহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে যে তামাশা করছিল, সেই নাটক সাজিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যেন তারা যুদ্ধে যোগ দেয়। চীন যখন যুদ্ধে আসছিল না, তখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর হুমকি দেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নৌবহরকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি লক্ষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সপ্তম নৌবহর আর আসেনি। এর পরিণতিতেই নিয়াজির চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান।
‘মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক ইতিহাস’ শীর্ষক ইতিহাস আড্ডায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান। রোববার দ্য ডেইলি স্টার মিলনায়তনে