ঢাবিতে প্রামাণ্য আলোকচিত্র ও দলিলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ ছাত্র ইউনিয়নের
Published: 14th, December 2025 GMT
প্রামাণ্য আলোকচিত্র ও দলিলের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শুরু হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। ‘রক্তের দলিল’ শিরোনামে চার দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সবুজ চত্বরে আয়োজিত এ প্রদর্শনী চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আয়োজকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে যে বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই এ উদ্যোগ। টিএসসির এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্রিকা ও নথিপত্র উপস্থাপনার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের ইতিহাস, গণহত্যার সাক্ষ্য এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রদর্শনীর একটি অংশে ‘গণহত্যার সম্মতি উৎপাদন’ শিরোনামে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত গোলাম আযমের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে একাত্তরে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা প্রামাণ্য দলিলের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।
গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া প্রদনর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ জুন মুসলিম বিশ্বের প্রতি মাওলানা মওদুদীর পাঠানো একটি স্মারকলিপি। সেখানে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানের পর বিদেশে প্রচার চালানো হচ্ছে যে সেনাবাহিনী নিরাপরাধ বাঙালি মুসলমানদের হত্যা করছে। এমন অভিযোগকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের প্রচারণা’ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ২০ জুন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান গোলাম আযমের আরেকটি বক্তব্যও প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রদর্শনীর অন্যান্য অংশের মধ্যে রয়েছে ‘অপূর্ণ গণযুদ্ধ’, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে জনগণের চলমান সংগ্রামের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘যাঁরা ছিলেন, যাঁরা আছেন’ অংশে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ‘গণহত্যার সাক্ষ্য’ অংশে পাকিস্তানি বাহিনীর পরিচালিত গণহত্যার দলিল এবং মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও তাঁদের প্রতিরোধের ইতিহাস প্রামাণ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আয়োজনের বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের বয়ানকে একদলীয়করণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গণযুদ্ধের অঙ্গীকারটি সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া হয়েছিল। সেটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মেঘমল্লার বসু বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি রাজাকার, আলবদর, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রসংঘের উত্তরসূরি ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে সংখ্যা ও মাহাত্ম্যের দিক থেকে খাটো করার জন্য অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা কখনো বলছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা হাজার, আবার কখনো বলছে বিহারিরাই মূলত গণহত্যার শিকার হয়েছিল।
মেঘমল্লার বসু আরও বলেন, ‘মূলত সেই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ গড়ার জায়গা থেকেই আমরা এ আয়োজনটি করেছি। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার মাধ্যমে গণযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ সামনে এনেছি। একই সঙ্গে গণহত্যার বিষয়টি এবং রাজাকারদের গণহত্যার পক্ষে সম্মতি আদায়ও সামনে এনেছি।’
শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) একদিকে স্বীকৃত রাজাকারদের বেকসুর খালাস দিচ্ছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরগুলোকে অবহেলায় ফেলে রেখেছে। সেই জায়গা থেকে আমরা এ সময়টাকে যেমন সংকট হিসেবে দেখি আবার দেখি অপার সম্ভাবনার সুযোগ হিসেবে।
মাঈন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা এ সময়টাকে সংকট ও সম্ভাবনা—দুভাবেই দেখি। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কুক্ষিগত করা ন্যারেটিভ (বয়ান) থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বের করে আনা এবং জামায়াত-শিবিরগোষ্ঠীর মিথ্যাচারের সমুচিত জবাব দিয়ে জনযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সামনে আনতেই বিজয়ের মাসে আমাদের এই আয়োজন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে বুদ্ধিজীবী হত্যা
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে দুপুরে খেতে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁর মা আফিয়া বেগম। দরজার কাছে একদল লোক এসে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে একটু যেতে হবে।’ তিনি আর ফিরে আসেননি। একই দিনে আড়াই মাসের সন্তান কোলে নিয়ে বসে ছিলেন তরুণ বিজ্ঞানী মো. আমিনউদ্দিন। তিনি বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁকে নেওয়া হলো তাঁরই গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে। আমিনউদ্দিনও আর ফেরেননি। সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদকেও এভাবেই তুলে নেওয়া হয়েছিল সন্তানদের সামনে থেকে। রশীদ হায়দার সম্পাদিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত স্মৃতি: ১৯৭১ বইয়ে জানা যায় তাঁদের মতো আরও বহু শহীদ বুদ্ধিজীবীর শেষ সময়ের ঘটনার স্মৃতি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বজনদের লেখায় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত
বিজয়ের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় বেদনাময় স্মৃতির আরেক ইতিহাস।
বুদ্ধিজীবীদের যে বেছে বেছে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পাকিস্তানিরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তা জানা গিয়েছিল বিজয় অর্জনের পরপরই। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় ছিলেন মার্কিন সাংবাদিক পিটার আর কান। তাঁর সে সময়ের দিনপঞ্জি পরে ছাপা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায়। তাতে ১৮ ডিসেম্বর পিটার লিখেছিলেন, ‘আজকের দিনের প্রথম ভাগে মুক্তিরা বিখ্যাত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গণকবর খুঁজে পান, যাঁদের স্থানীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জিম্মি করেছিল এবং গত দিনের আগের রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি রক্তরঞ্জিত সমাজ, যেটি সদ্যই ৯ মাসের রক্তগঙ্গার মধ্য দিয়ে গেছে।’
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত বহু বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে এভাবে আমরা হারিয়েছি। বহুল পরিচিতদের মধ্যে আছেন গোবিন্দচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, আবুল খায়ের, আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ। তাঁদের বাইরেও আছেন অনেকে। বুদ্ধিজীবীদের এই হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে আলবদর বাহিনীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী একটি গোষ্ঠী।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিজয় যখন আসন্ন, তখন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস ধরেই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।
দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞপিরোজপুরে সাঈফ মীজানুর রহমানকে জিপের পেছনে বেঁধে গোটা পিরোজপুর শহর ঘুরিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা। পরে তাঁকে গুলি করে বলেশ্বর নদে ফেলে দেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রেজারি কর্মকর্তা সাঈফ ট্রেজারি থেকে টাকা আর অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। ছাত্র অবস্থায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক ছাত্র সংসদের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক।
সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক ছিলেন সৈয়দ সিরাজুল আব্দাল। তাঁর শরীর থেকে রক্ত টেনে বের করে নেওয়া হয়েছিল। এর সাক্ষী ছিলেন সিলেটের পুরোনো পত্রিকা যুগভেরীর সম্পাদক আমিনূর রশীদ চৌধুরী। সিরাজুল আব্দালের পরিবার ফেরত পেয়েছিল একটি কঙ্কাল। আবদাল পাকিস্তানি সেনাদের কাছে প্রথম রোষে পড়েছিলেন বাংলা বর্ণমালার ছোট্ট একটা বই ছাপার সূত্র ধরে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মীর আবদুল কাইয়্যুমের বাড়িতে কিছু লোক এসে বলেছিল, ‘স্যার, একটু বাইরে আসবেন?’ স্ত্রী মাসতুরা খানমের নিষেধ অমান্য করে তিনি দরজার বাইরে গিয়েছিলেন। আর ফিরে আসেননি।
এভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাসজুড়ে। প্রথমা প্রকাশনের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী: স্মৃতি জীবন যুদ্ধ বইয়ে সংকলিত হয়েছে ৩৫৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিচিতি ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথা। এই সংকলন থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে ঢাকার বাইরেও সমানভাবে চলেছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁসহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রাণহারানো বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা অনেক।
দেশব্যাপী পরিচালিত ৯ মাসের গণহত্যায় অগণিত মানুষের প্রাণদানের সীমাহীন ট্র্যাজেডিতে ভয়াবহ মাত্রা যোগ করেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। এর কোনো সামরিক কার্যকারণ ছিল না, ছিল বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে প্রবল আক্রোশ। যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের হত্যা করে দেশটির ভবিষ্যৎকে মেধাশূন্য করে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা।
তাঁরা কতজনমুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত চার পর্বে ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করেছে। প্রথম দফায় ১৯১, দ্বিতীয় তালিকায় ১৪৩, তৃতীয় দফায় ১০৮ জন এবং চতুর্থ দফায় ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের গেজেট প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে গবেষকেরা বলেন, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। গত বছরের মার্চে চতুর্থ দফার পর আর কোনো তালিকা প্রকাশিত হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কতজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন, তার সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায় না। তালিকায় যাঁদের নাম জানা যায়, তাঁদের অধিকাংশই শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মানুষ।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মামলায় জবানবন্দিতে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন, ‘একাত্তরের আগস্টে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ডিসেম্বরে আলবদর বাহিনী এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে শুরু করে। প্রকাশিত তথ্যমতে, মঈনুদ্দীন এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে এবং আশরাফুজ্জামান এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।’
এ প্রসঙ্গে বারবার উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান জেনারেল রাও ফরমান আলীর একটি তালিকার কথা। স্বাধীনতার পর বঙ্গভবন থেকে রাও ফরমান আলীর যে ডায়েরি পাওয়া যায়, তাতে নিহত ও জীবিত বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা ছিল। স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সংগ্রামের নোটবুক’-এর একটি অনলাইন পেজের ছবিতে দেখা যায়, রাও ফরমান আলীর হাতে লেখা বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকায় আছে মুনীর চৌধুরীসহ আরও বহু বুদ্ধিজীবীর নাম।
তাঁদের অবদানআনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত উপন্যাস, মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক কিংবা আলতাফ মাহমুদের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুর বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রটির সঙ্গে মিলেমিশে আছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী: স্মৃতি জীবন যুদ্ধ বইয়ের ভূমিকায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন মেধাবী। মেধার চেয়েও বড় আরেকটা বিপজ্জনক অস্ত্র তাঁদের ছিল: বিবেক। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তাঁরা। নিজেরাই হয়ে উঠেছিলেন জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর। তাঁরা অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যমুক্ত আধুনিক প্রগতিশীল দেশ চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন মানুষের অধিকারের প্রতিষ্ঠা।’
সেই যে আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষদের আমরা হারালাম, সেই ক্ষতি আজও পোহাতে হচ্ছে জাতিকে। এ ক্ষতি কোনো দিন পূরণ হবে না, হবেও না।
তথ্যসূত্র
১. স্মৃতি: ১৯৭১ (প্রথম খণ্ড), সম্পাদক: রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমি, ২০১৭
২. ‘মার্কিন সাংবাদিকের মুক্তিযুদ্ধের ঢাকা ডায়েরি’, প্রথম আলো, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
৩. মুক্তিযুদ্ধের ১০টি তারিখ, সম্পাদক: সাজ্জাদ শরিফ, প্রথমা প্রকাশন, ২০২০
৪. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী: স্মৃতি জীবন যুদ্ধ, সম্পাদক: আনিসুল হক, প্রথমা প্রকাশন, ২০২৪
৫. ‘বাবাকে ওরা তুলে নিয়ে গেল’, মেজর (অব.) সৈয়দ জামিল আব্দাল, প্রথম আলো, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
৬. ‘স্যার, একটু বাইরে আসবেন’, মাহবুবা কানিজ, দ্য ডেইলি স্টার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০