নড়াইল সদর উপজেলায় ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে উপজেলার তুলারামপুর এলাকায় যশোর-নড়াইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম তামিম মোল্লা (২২)। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের দাউদ মোল্লার ছেলে। তিনি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিয়ে করেন।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, তামিম পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঢাকায় কাজ শেষে ছুটি কাটাতে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি চাঁচড়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পথে ঘন কুয়াশা দেখা দেয়। পথে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হন তামিম। পরে পথচারী ও স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করছেন নড়াইলের তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহমেদ। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিবাচক অগ্রগতি, পর্যালোচনা প্রয়োজন

ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহারই গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভিন্নমত দমন, নির্যাতনসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় কারণ, সেটা কেউই অস্বীকার করবে না। এ বাস্তবতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইন করেই জবাবদিহির বাইরে রাখা কিংবা দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল। ফলে মানবাধিকারের ধারণাটি সর্বজনীন না হয়ে সেটা হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার অধীন। এ রকম বাস্তবতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে নখদন্তহীন সংস্থা হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

বিগত সরকারের আমলে বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেভাবে সীমা ছাড়িয়েছিল, তাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এতটা বিস্তৃত ও বহুমুখী ছিল যে দেশের অধিকার সংগঠনের সঙ্গে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে। অথচ বিদ্যমান আইনে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুযোগ ছিল না।

অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের যে খসড়া প্রণয়ন করেছে, সেখানে সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলেই আমরা মনে করি। বিদ্যমান আইনে মানবাধিকার কমিশন কোনো আদেশ দিতে পারত না, সংস্থাটি সরকারের কাছে কেবল সুপারিশ দিতে পারত। ফলে দেড় দশকের বেশি সময় আগে যাত্রা শুরু করা সংস্থাটির কোনো দক্ষতা কিংবা কার্যকারিতা গড়ে উঠতে পারেনি। খসড়ায় কমিশনকে মানবাধিকার প্রসঙ্গে যুক্তিসংগত আদেশ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এটিও উল্লেখ করার মতো একটি অগ্রগতি। কমিশনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়েছে, সেটাও প্রশংসনীয়।

আমরা মনে করি, খসড়া অধ্যাদেশটি যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। খসড়ায় বিদ্যমান আইনের মতোই কমিশনের সরল বিশ্বাসে করা কাজের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলে বিধান রাখা হয়েছে। এ ধরনের বিধান অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহিহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধানের যে অপপ্রয়োগ হয়, তারও অসংখ্য নজির আছে।

এটা সত্যি যে আইন যতই শক্তিশালী কিংবা ভালো হোক না কেন, তার প্রয়োগ কতটা হচ্ছে, তার ওপরই এর ফলাফল নির্ভর করে। মানবাধিকার ধারণাটি সর্বজনীন। সুতরাং এর প্রয়োগও রাজনৈতিক প্রভাব ও পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রভাবশালী যারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপর নখদন্ত বসানোর ক্ষমতা অবশ্যই এই প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে।

গত সরকারের আমলে বিস্তৃত পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা, তার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সরকার আমলেও মব সহিংসতা, বিনা বিচারে আটক, মাজারে হামলার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। ১১ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও নতুন কমিশন গঠন না করা দুঃখজনকই। কমিশনের আইন সংশোধন জরুরি, কিন্তু তাই বলে সংস্থাটি কেন অকার্যকর অবস্থায় থাকবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। এতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। কেননা মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতি করতে গেলে আমাদের আরও বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ