প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম খাতের সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ
Published: 15th, December 2025 GMT
প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম খাতের সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, গত এক বছরে ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এক লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এবং বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতির দুর্বলতা এই শিল্পকে আরো জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তাই প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রমকে সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণ করা এখন সময়ের দাবি।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এএফডাব্লিউএ) ‘প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতিতে করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন এএফডাব্লিউএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান।
সংলাপে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিস আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের সিনিয়র আউটরিচ অফিসার আমানুল্লাহ, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস, সেফটি অ্যান্ড রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সিকান্দার আলী মিনা, গার্মেন্টস লেবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার, গ্রোইং টুগেদার ওপিসি’র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এম আনোয়ার, এএফডাব্লিউএ’র বাংলাদেশ কমিটির সদস্য সচিব সুলতানা বেগম ও নারী কমিটির সভাপতি রাসিদা খাতুন।
সংলাপের ধারণাপত্র পাঠ করেন এএফডাব্লিউএ’র জেন্ডার জাস্টিস প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমরিন হোসাইন এ্যানি। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে সৃষ্ট মোট মুনাফা ও শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির মধ্যে স্পষ্ট বৈষম্য বিদ্যমান। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও শ্রমিকদের মজুরি এখনো জীবনযাত্রা উপযোগী পর্যায়ে পৌঁছেনি। উৎপাদন ব্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ প্রায়ই শ্রমিকদের ওপর স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে প্রায় ৪ মিলিয়ন শ্রমিক এই খাতে কর্মরত, যাদের ৬০ শতাংশের বেশি নারী। নারী শ্রমিকদের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় অর্জন হলেও নিরাপদ কর্মসংস্থান, জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিবেশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থার সংকট, রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা-সব মিলিয়ে শিল্পটি বর্তমানে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় পোশাক খাতের সংকট নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অস্থিরতা কমাতে মানবিক জীবনযাপন উপযোগী জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনো শ্রমিকের মজুরি যেন দারিদ্রসীমার থেকে কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব খাতের শ্রমিকদের জন্য রেশন প্রদান, ট্রেনিং সেন্টার এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে। শ্রমিকদের ঐক্য গড়ে তুলতে সকল শ্রমিক সংগঠনকে এক প্লাটফর্ম আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম বাস্তবতা একদিকে বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সঠিক কৌশল ও শ্রমিক-কেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আরও মানবিক, টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। তাই গার্মেন্টস শিল্পের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে মালিক-শ্রমিক ও সরকারসহ সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কম মজুরি ও মজুরি বৈষম্য নিরসন করতে হবে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন করে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র ম ন টস শ সমন ব ত গ রহণ জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাদ দেওয়াসহ আইনঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাদ দেওয়াসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বহুল প্রত্যাশিত সংস্কার-প্রক্রিয়াকে কীভাবে আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা, এমনকি অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে জিম্মি করা হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসেবে অধ্যাদেশ প্রণয়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ববাদি চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য। যা সংস্কারবিরোধী আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ুন:
প্রতিটি আইন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি
জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে বিশেষজ্ঞ সদস্য চায় টিআইবি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করার ফলে সরকারি প্রভাবের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে টিআইবি।
সংস্থাটির টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশের পর টিআইবিসহ সব অংশীজন এতে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও আশান্বিত হয়েছিল যে, আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা কাটিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জনপ্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ঠিক একমাসের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর যে বাছাই কমিটি এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মূলভিত্তি হতে পারতো, সেই কমিটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন বস্তুত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মানবাধিকার কমিশনসহ বাংলাদেশের অন্য সব কমিশনের অকার্যকরতার পেছনে যেভাবে সরকারি প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকা রেখেছে, সেই একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তমাত্র, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”
বাছাই কমিটির ওপর এ আমলাতান্ত্রিক জবরদখল ও সরকারের তা মেনে নেওয়া চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে প্রশংসনীয় বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে তার এবং সার্বিকভাবে এ আইনের ভিত্তিতে গঠিতব্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকরতার সব সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করার জন্য শুধুমাত্র বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট।”
“তাছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ‘অবহিত করা যাইবে’ প্রতিস্থাপন করার মতো আরো কিছু বিধান সংযোজন করার ফলে অধ্যাদেশটির মাধ্যমে প্রত্যাশিত সব ইতিবাচক সম্ভাবনা পদদলিত করা হয়েছে,” বলে মন্তব্য করেন ড. জামান।
অনতিবিলম্বে আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতমূলক সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের বিব্রতকর অবস্থান থেকে সরে এসে অধ্যাদেশটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিধান, বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন্য ৬২ নম্বর অধ্যাদেশ, যা ৯ নভেম্বর ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তার অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত বাছাই কমিটিতে আমলাতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলো না, যা মানবাধিকার কমিশনের অকার্যকরতার দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরকারসহ সব অংশীজনের স্বীকৃতির পরিচায়ক। অথচ, পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বরের গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশ ৭৪-এ বাছাই কমিটিতে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি