শেরপুরে বন্য প্রাণীর জন্য হচ্ছে ‘খাদ্যবাগান’
Published: 15th, December 2025 GMT
শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতিসহ বন্য প্রাণীর খাদ্যসংকট কমাতে পাহাড়ি টিলাজুড়ে ‘খাদ্যবাগান’ গড়ে তুলছে বন বিভাগ। এতে একদিকে বন্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ও আবাসস্থল তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে কমবে মানুষ ও বন্য হাতির দ্বন্দ্ব—এমনটাই আশা বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি সীমান্ত সড়ক থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে রাজাপাহাড়ের চূড়ায় ৩১ একর বনভূমি দখল করে সবজি চাষ করতেন কয়েকজন গ্রামবাসী। পরে বন বিভাগ জমিটি দখলমুক্ত করে সেখানে বন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর খাদ্য উপযোগী বাগান গড়ে তোলে।
রাজাপাহাড়ের ওই বাগানে ৬২ প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে চাপালিশ, বট, পাকুড়, জলপাই, কামরাঙা, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, বড়ই, করমচা, কলা, বেল, চালতা, আতাফল, বহেড়া, আমলকী ও হরীতকী।
বন বিভাগ জানায়, রাজাপাহাড়ের বাইরে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় মোট ২৬০ হেক্টর বনভূমিতে খাদ্যবাগান তৈরি করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শ্রীবরদীর রাজাপাহাড়, খ্রিষ্টানপাড়া, মালাকুচা ও ডুমুরতলায় ১৩৫ হেক্টর, ঝিনাইগাতীর তাওয়াখুচা, গজনী ও রাংটিয়ায় ৭০ হেক্টর এবং নালিতাবাড়ীর বাতকুচি ও পানিহাটায় ৫৫ হেক্টর জমিতে এসব বাগান গড়ে তোলা হয়। চলতি অর্থবছরে আগাম বাগান তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ৩ উপজেলায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনভূমি আছে। এসব এলাকায় সারা বছর শতাধিক বন্য হাতির দল বিচরণ করে। বোরো ও আমনের মৌসুমে ধান ও কাঁঠাল পাকলে হাতির পাল লোকালয়ে নেমে আসে। ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে গেলে প্রায়ই মানুষ ও হাতির প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
খাদ্যবাগান গড়ে তোলায় একদিকে বন্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ও আবাসস্থল তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে কমবে মানুষ ও বন্য হাতির দ্বন্দ্ব—এমনটাই আশা বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। সম্প্রতি শ্রীবরদীর রাজাপাহাড় থেকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র বন ব ভ গ বন য হ ত শ র বরদ
এছাড়াও পড়ুন:
স্কয়ারের কেনিয়ার কারখানা দুই বছরের মধ্যে মুনাফায়
বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর দুই বছরের মাথায় মুনাফায় ফিরেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কেনিয়ার কারখানাটি। স্কয়ার ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেনিয়ায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কারখানাটির। এটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কেনিয়া ইপিজেড নামে দেশটিতে নিবন্ধিত।
জানা গেছে, গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে স্কয়ারের কেনিয়ার কারখানাটি প্রায় ১০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালের মার্চে উৎপাদন শুরু করা এই কারখানা এই প্রথম মুনাফার দেখা পেল। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশের মাটিতে কারখানা করে দ্রুততম সময়ে সেটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে স্কয়ার।
স্বয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে স্কয়ার ফার্মা গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। তাতে কোম্পানিটির সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ইউনিটের আয়–ব্যয়ের পাশাপাশি লাভ–লোকসানের হিসাবও তুলে ধরা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে স্কয়ার ফার্মার কেনিয়ার কারখানারও আয়–ব্যয়ের তথ্য আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়। আর্থিক এই প্রতিবেদন থেকে স্কয়ার ফার্মার কেনিয়ার মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কেনিয়ার কারখানাটি কেনিয়ার মুদ্রা কেনিয়ান সিলিংয়ে প্রায় সাড়ে ৭৪ কোটির ব্যবসা করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি (প্রতি কেনিয়ান সিলিং বাংলাদেশের ৯৫ পয়সার সমান)। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কারখানাটির ব্যবসা বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকার বা ১৭৩ শতাংশের বেশি। তাতে লোকসানি কোম্পানিটি গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মুনাফার দেখা পেয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে কেনিয়ার কারখানাটির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি ২১ লাখ কেনিয়ান সিলিং, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বেশি। তার আগে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ২৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি লোকসান করেছিল। সেই লোকসান কাটিয়ে গত অর্থবছরে মুনাফায় ফেরে কোম্পানিটি।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কেনিয়ায় ওষুধ কারখানা করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কয়ার ফার্মার পরিচালনা পর্ষদ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ওই বছরের ১০ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্তের কথা শেয়ারধারীদের জানানো হয়। স্কয়ার ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বিদেশের মাটিতে নতুন এ কারখানা খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কেনিয়ায় নতুন এ কারখানা করতে কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে দুই কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যার বড় অংশ স্কয়ার ফার্মা নিজে জোগান দেয়। বাকি অর্থ ঋণ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে দেশীয় কোনো কোম্পানির বিদেশে মূলধন স্থানান্তরের সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে দেশীয় কোম্পানি বিদেশে মূলধন স্থানান্তর করতে পারে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ বেশ কিছু কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে বিদেশে কোম্পানি খোলা ও মূলধন স্থানান্তরের অনুমোদন দিয়েছে।
স্কয়ার ফার্মা সূত্রে জানা যায়, কেনিয়ার কারখানায় উৎপাদিত ওষুধের বড় অংশই দেশটির স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। এর বাইরে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিতে কিছু ওষুধ রপ্তানি করা হয়। কেনিয়ার কারখানাটিতে সব মিলিয়ে ২৫০ জনের কর্মসংস্থান রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি, বাকিরা কেনিয়ার নাগরিক।
জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেনিয়ার কারখানাটিতে নানা ধরনের প্রায় ২৭ রকমের ওষুধ উৎপাদিত হয়। এসব ওষুধ কেনিয়ার বাজারে বাজারজাতের পাশাপাশি আশপাশের কয়েকটি দেশেও আমরা রপ্তানি শুরু করেছি। ব্যবসা খুব দ্রুত বাড়ছে। তাতে দুই বছরের মাথায় বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে আমরা লাভের মুখ দেখলাম।’
এদিকে দেশ–বিদেশের সব ব্যবসা মিলিয়ে গত অর্থবছর শেষে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। তার আগে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ৩৭৬ কোটি টাকা বা প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের রেকর্ড লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ খাতের দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বা স্কয়ার ফার্মা।
কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করবে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি ১২০ শতাংশ নগদ বা ১২ টাকা করে লভ্যাংশ দেবে। নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমের অনুমোদনের পর ঘোষিত এই লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে।