১৯৭১ সালের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে যশোর, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিলেটসহ বিভিন্ন ফ্রন্টে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে সীমান্তবর্তী ঘাঁটিগুলো থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। যুদ্ধরেখায় এটি মুক্তিবাহিনীর বড় সাফল্য।

মুক্তিযুদ্ধের এই সাফল্য আকস্মিকভাবে আসেনি। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস থেকেই গেরিলাযোদ্ধারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তাঁদের অভিযানের মাত্রা বাড়াতে থাকেন। গেরিলারা পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানে অতর্কিতে হামলা; বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলসেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস এবং সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের মনোবলে চিড় ধরান।

দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাঁতারু মুক্তিবাহিনীর বীরত্বগাথাও ছিল অনন্য। পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম ও তেল সরবরাহের প্রধান পথ কর্ণফুলী নদীর ওপর চট্টগ্রাম বন্দর এবং পশুর নদের ওপর চালনা, মোংলা ও খুলনা বন্দরে কোস্টার, ট্যাংকার, ট্যাগ, বাজ ও জাহাজ ডুবিয়ে তাঁরা দখলদার বাহিনীকে দিশাহারা করে ফেলেন।

৩ ডিসেম্বর বিকেলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের অমৃতসর, পাঠানকোট, যোধপুর, শ্রীনগর, আগ্রাসহ সাতটি স্থানে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী অতর্কিতে বোমাবর্ষণ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর এই একতরফা আক্রমণ সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা করে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেদিন রাতেই মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী বাংলাদেশের পাকিস্তানি অবস্থানগুলো ঘিরে ফেলার জন্য সীমান্তের সাতটি এলাকায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে।

যৌথ বাহিনীর যুদ্ধকৌশল ছিল সম্ভাব্য সব দিক থেকে বহুমুখী আক্রমণের মধ্য দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ভূকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা শহরকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। প্রথম দুই দিনের আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী তাদের ২০টি যুদ্ধবিমানের সব কটিই হারায়। ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো উপর্যুপরি হামলা করে ঢাকার তেজগাঁওসহ বিভিন্ন বিমানঘাঁটি ও বন্দর অচল করে দেয়।

৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দুঃসাহসিক যুদ্ধ করে লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্ত করেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। একই দিন যৌথ বাহিনীর হাতে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লার দেবীদ্বার মুক্ত হয় এবং পাকিস্তানি সেনারা ময়নামতি সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন সেক্টরে যৌথ বাহিনী প্রধান প্রধান সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা–চট্টগ্রাম–সিলেটের, নাটোরের সঙ্গে ঢাকা–রংপুরের এবং যশোরের সঙ্গে ঢাকা–রাজশাহীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

৬ ডিসেম্বর সকালে ফেনী শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে দিশাহারা পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি যশোর ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়। এদিন বিকেলের আগে যৌথ বাহিনী যখন যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করে, তার আগেই পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে খুলনার দিকে পশ্চাদপসরণ করে। হবিগঞ্জ ও মেহেরপুর জেলাও দখলমুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর। লালমনিরহাট ও তিস্তা সেতুতে যুদ্ধজয়ের ফলে একই দিন লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের বিরাট এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।

৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে নোয়াখালী ও মাগুরা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। ৮ ডিসেম্বের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ শহরটি যৌথ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয়। এদিন চাঁদপুরে যৌথ বাহিনী বিজয় পায়। একই দিন ঝালকাঠি শত্রুমুক্ত হয়।

৯ ডিসেম্বর চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ঢাকা ঘিরে এগোতে থাকে। একটি দল এগোতে থাকে আশুগঞ্জ দিয়ে ভৈরব বাজার হয়ে। আরেকটি দল এগোতে থাকে দাউদকান্দির দিক দিয়ে। উত্তর দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এগোতে থাকেন জামালপুর হয়ে। একই দিন ঝিনাইদহকে পাশ কাটিয়ে যৌথ বাহিনী কুষ্টিয়ার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়।

১০ ডিসেম্বর নোয়াখালী শহর উদ্ধার করে যৌথ বাহিনীর একটি অংশ চট্টগ্রামের দিকে এগোতে থাকে। ময়মনসিংহে যৌথ বাহিনী আঘাত হানলে পাকিস্তানি বাহিনী টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। তুমুল যুদ্ধের পর এদিন গভীর রাতে জামালপুর শহর শত্রুমুক্ত হয়। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর মরণপণ যুদ্ধ শেষে আশুগঞ্জ মুক্ত হয়। মেঘনা নদী পেরিয়ে যৌথ বাহিনী ভৈরব বাজারের কাছে ঘাঁটি করে।

১১ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে বলা হয়, জামালপুর ও ময়মনসিংহের পতনের পর ঢাকার সংকট ঘনীভূত। উত্তর–পূর্ব দিকে যৌথ বাহিনী মেঘনা অতিক্রম করে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। অপেক্ষা এখন ঢাকা দখলের লড়াইয়ের। দুই দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদিন কুষ্টিয়াও শত্রুমুক্ত হয়। কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশের মধ্যে পড়ে অনেক ভারতীয় সেনা হতাহত হন। এদিন চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যবর্তী লাকসামে প্রায় ৪০০ পাকিস্তানি সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ করে। এ ছাড়া যশোর থেকে ঢাকা অভিমুখী যৌথ বাহিনী মাগুরা শহর পেরিয়ে মধুমতী নদীর তীরে পৌঁছে যায়।

এদিন বিকেলে টাঙ্গাইলে ভারতীয় বাহিনী এক ব্যাটালিয়ন ছত্রীসেনা নামায়। জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে পিছু হটা পাকিস্তানি সেনারা যাতে কোনো অবস্থাতেই ঢাকায় পৌঁছাতে না পারে এবং ঢাকার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সক্ষম না হয়, এ জন্য যৌথ বাহিনীর কাছে টাঙ্গাইলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াটা ছিল কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা দখলের লড়াই শুরু হয়। ভৈরব বাজার থেকে এদিন যৌথ বাহিনী ঢাকার মাত্র ৫২ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীতে এসে পৌঁছায়। ময়মনসিংহ থেকেও যৌথ বাহিনী ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। যৌথ বাহিনী খুলনার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। উত্তরাঞ্চল পাকিস্তানি বাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বগুড়ার পতনও আসন্ন। এদিনে চট্টগ্রামেও পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ।

১৩ ডিসেম্বর ঢাকার তিন দিক থেকে বেষ্টিত দখলদার পাকিস্তানি সেনারা যৌথ বাহিনীর কামানের আওতায় চলে আসে। নরসিংদী পেরিয়ে একটি দল ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। আরেকটি দল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে রওনা দিয়ে জয়দেবপুর মুক্ত করে ঢাকার কাছে পৌঁছে যায়। চাঁদপুরের দিক থেকে আসা যৌথ বাহিনী মেঘনা পেরিয়ে দাউদকান্দিতে পৌঁছে যায় এবং শীতলক্ষ্যা পেরোতে শুরু করে।

১৪ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর একটি বড় দল ফরিদপুর থেকে ঢাকার পথে মধুমতী নদী পার হয়। মানিকগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করে একটি দল সাভারের দিকে এগিয়ে আসে। আরেকটি দল ঢাকার উত্তর দিকে তুরাগ নদের পাড়ে পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পশ্চিম–উত্তর সীমান্ত বরাবর চন্দ্রা–সাভার–মিরপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে আরেকটি অংশ। এদিন যৌথ বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের পাঁচ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়।

১৫ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী ঢাকার দুই মাইলের মধ্যে বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ শুরু করে। দাউদকান্দি থেকে মেঘনা নদী পেরিয়ে চারদিক থেকে ঢাকা নগরীকে এঁটে ধরে। মুক্তিবাহিনী সাভার মুক্ত করলে পাকিস্তানি সেনারা মিরপুর সেতুতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঢাকায় প্রবেশে পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ প্রতিরোধ ভেঙে ফেলতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করে।

সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসার পথে যেসব সামরিক ও প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা ছিল, তার সব কটিই গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। অপর দিকে মালাক্কা প্রণালিতে অবস্থানরত পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বে মার্কিন সপ্তম নৌবহর এবং চীন থেকে সহযোগিতা আসার শেষ আশাটাও ফুরিয়ে যায়। ৯৩ হাজার সেনাসহ পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির আত্মসমর্পণ হয়ে উঠেছিল সময়ের প্রশ্নমাত্র।

তথ্যসূত্র:

১.

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: শত্রু ও মিত্রের কলমে, সম্পাদক: মতিউর রহমান, প্রথমা প্রকাশন

২. একাত্তরের দিনপঞ্জি: মুক্তিযুদ্ধের দৈনিক ঘটনালিপি, সম্পাদক: সাজ্জাদ শরিফ, প্রথমা প্রকাশন

৩. লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, অনন্যা প্রকাশন

৪. সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: একটি জাতির জন্ম, লে. জেনারেল জে এফ আর জেকব, ইউপিএল

৫. ‘পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত দিবস: দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহাসিক বিজয়ের সেই দিনগুলা’, বাসস, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ম ত রব হ ন ৬ ড স ম বর র ম ক ত কর একই দ ন অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন, আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা

ময়মনসিংহ নগরে নির্মাণাধীন ভবনের পাশে পাঁচতলা একটি ভবন হেলে পড়েছে। ওই অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দেন। এতে আশপাশের এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ রোববার সকালে বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে তাঁদের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।

হেলে পড়া ভবনটি ময়মনসিংহ নগরের গুলকিবাড়ি বাইলেন এলাকায় অবস্থিত। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভবনের প্রবেশমুখে কিছু জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। ভবনটি হেলে পেছনের ১৬ তলা একটি বহুতল ভবনের দিকে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচতলাবিশিষ্ট ‘শাকিল ম্যানসন’ নামের বাড়িটির মালিক লন্ডনপ্রবাসী এ এস এম রিয়াজুল আমিন। তবে বাড়ির দেখভাল করেন রিয়াজুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। পাঁচ শতক জমিতে ২০১১ সালে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে চারতলা সম্পন্ন হলেও সম্প্রতি পঞ্চম তলার কাজ শুরু হয়, যা সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। বাসার ১০টি ইউনিটের মধ্যে আটটি ইউনিটে ভাড়াটেরা বসবাস করতেন।

পাশে গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের ১৩ তলা ‘কাজীবাড়ি’ ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। প্রায় ছয় মাস ধরে পাইলিং শেষে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি সরানো হচ্ছিল। গতকাল ভবনের সামনে ও পাশের অংশে ফাটল দেখা দিলে আতঙ্ক শুরু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার জুলহাস উদ্দিন বলেন, পাইলিং শেষে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। এতে পাশের পাঁচতলা ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। ভবনটিতে অনেক বাসিন্দা থাকায় তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাসার মালিককে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীর সহযোগিতা নিতে। সিটি করপোরেশন যদি বলে, ভবন ব্যবহার করা যাবে এবং কোনো ঝুঁকি নেই, তবেই লোকজন ফিরে যেতে পারবেন। বাসার ভেতরে থাকা ভারী মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিং কোড মেনে যদি ভবন করা হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। আনন্দ মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শাহ মো. জুয়েল বলেন, ‘হঠাৎ গতকাল সন্ধ্যায় ফাটল দেখা দেওয়ায় জরুরি কাগজপত্র নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। রাতভর উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আজ বাসা থেকে মালামাল নিয়ে শ্বশুরবাড়ি রেখেছি, পরে নতুন বাসায় উঠব। হঠাৎ এই ভোগান্তি হলেও বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি, এটা স্বস্তির।’

হেলে পড়া ভবনের দেখভালকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল মাগরিবের নামাজের পর ফাটল বেশি লক্ষ করি। দুই দিন ধরে হালকা ফাটল দেখা যাচ্ছিল। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটায় এমন হয়েছে। বেশি ফাটল দেখে ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে জানাই। আমি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী তিন ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন করেছি, কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনটি কোনো জায়গা ছাড়ছিল না। আমার সীমানাপ্রাচীরও পাইলিং করার সময় ভেঙে ফেলেছে। সরকারের কাছে আবেদন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। এত সরু এলাকায় কীভাবে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া হলো, তা ভাবতে হয়। আমার ভবনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্মাণকাজ চলাকালে গতকাল সন্ধ্যায় পাশের ভবন হেলে পড়ায় আমাদের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছিল। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী চারপাশে জায়গা ছাড়ার কথা। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিল্ডিং কোড না মেনে কাজ করায় এমন হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, আজ দুপুরের পর হেলে পড়া ভবন পরিদর্শন করা হবে। সবকিছু যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেরপুরে নয়, হালুয়াঘাটে দুজনকে গ্রেপ্তার: পুলিশ
  • পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ করতে প্রচারপত্র ফেলছিল ভারতের বিমান
  • আমরা তোমাদের ভুলব না
  • ময়মনসিংহে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন, আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা
  • বিজয় যখন কড়া নাড়ছে
  • জেনারেল নিয়াজি তিন দিন আগেও বলেছিলেন, আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না
  • ত্রিশালে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন
  • পরীক্ষা রেখে শিক্ষকদের আন্দোলন করাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
  • তিন দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে