সুদানে গৃহযুদ্ধের আড়ালে আসলে কী হচ্ছে, কেনই-বা এ রক্তক্ষয়ী সংঘাত
Published: 15th, December 2025 GMT
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় বাংলাদেশের ছয় সেনাসদস্য নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে সুদানে চলা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখ লাখ। প্রায় দুই কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৬০ লাখের মতো মানুষ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
আফ্রিকার সোনা ও জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশ সুদানে ২০২৩ সালে নতুন করে এ গৃহযুদ্ধের শুরু। সরকারি বাহিনী সুদানিজ আর্মড ফোর্সেস (এসএএফ) ও বিদ্রোহী আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়েই মূলত এ যুদ্ধ।
আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা, জাতিগত হত্যা এবং নারী ও শিশুদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ ও এসএএফের পক্ষে-বিপক্ষে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশ। জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সুদানে এ মুহূর্তে বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয় চলছে।
বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এসএএফপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফের প্রধান জেনারেল হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে বেশি পরিচিত। সফল অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারে প্রেসিডেন্ট হন বুরহান। হেমেদতি বুরহানের ডেপুটি। একটা সময় পর দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে এবং বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে বুরহান ও হেমেদতির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।কেন এ গৃহযুদ্ধসুদানে সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সংঘাতের শুরুটা সেই ২০১৯ সালে। তখন এক সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির দীর্ঘদিনের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতন হয়। তবে এ সামরিক অভ্যুত্থানের আগে থেকে বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসন অবসানের দাবিতে সুদানে বিক্ষোভ হচ্ছিল। বশিরের পতনের পরও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সুদানে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ চলতে থাকে।
বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এসএএফপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফের প্রধান জেনারেল হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে বেশি পরিচিত। সফল সামরিক অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারে প্রেসিডেন্ট হন বুরহান। হেমেদতি হন বুরহানের ডেপুটি।
আরএসএফ একসময় সেনাবাহিনীর মিত্র ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব রহ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে রক্তক্ষয়ী হামলা–সহিংসতায় জড়িত আরএসএফপ্রধান কে এই হেমেদতি
মোহামেদ হামদান দাগালো, ‘হেমেদতি’ নামেই পরিচিত। সুদানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। তাঁর আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এখন দেশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরএসএফ গত মাসে এল-ফাশের শহর দখল করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। কারণ, এটি ছিল সুদানের সেনাবাহিনী ও তাঁদের স্থানীয় মিত্রদের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরে থাকা শেষ ঘাঁটি।
হেমেদতির জন্ম ১৯৭৪, মতান্তরে ১৯৭৫ সালে। গ্রামের মানুষের মতো তাঁরও জন্মের সঠিক তারিখ ও স্থান নিবন্ধন করা হয়নি। তিনি সাধারণ এক পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর পরিবার মহারিয়া শাখার রিজেইগাত সম্প্রদায়ের, যারা ঐতিহ্যগতভাবে চাদ ও দারফুরে উট পালন করে জীবিকা নির্বাহ করত।
হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।
সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের অবহেলার কারণে দারফুর এক দরিদ্র ও আইনের শাসনবিহীন এলাকায় পরিণত হয়। এ কারণে সে সময় দারফুর সুদানের ‘বন্য পশ্চিম’ এলাকা হিসেবে পরিচিতি পায়।
এর মধ্যে জানজাবিদ নামে পরিচিত আরব মিলিশিয়ারা ফুর সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে আক্রমণ করেন। এতে জুমা দাগালোর নেতৃত্বে একটি বাহিনীও যোগ দেয়।
সহিংসতার এ চক্র ২০০৩ সালে সরকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর বিদ্রোহে রূপ নেয়। এ সময় ফুর যোদ্ধাদের সঙ্গে মাসালিত, জাগাওয়া ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ, সুদানের উচ্চবর্ণের আরবরা তাঁদের অবহেলা করছেন।
আরএসএফ একসময় সেনাবাহিনীর মিত্র ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়