সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে গত বুধবার আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক বৈঠক। এর মধ্য দিয়ে আফগান তালেবান নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোয় নয়াদিল্লির অভিপ্রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।

তালেবানের সঙ্গে গত বছরের পুরোটা সময় ধাপে ধাপে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ভারত। তবে ওই দুই নেতা ও কর্মকর্তার সাম্প্রতিকতম বৈঠকটিকে এ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ের প্রথম যোগাযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে সহায়তা ও নির্মাণ খাতে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে আলোচনার যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য ও মানবিক সহযোগিতা, উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা নিয়ে মতৈক্য এবং আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ও শরণার্থী খাতে সমর্থন প্রদান।

মুম্বাইয়ে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নিয়োগ দিয়েছে তালেবান সরকার। তিনি একসময় ভারতে পড়ালেখা করেছেন। এখন ভারতে তালেবানের একজন কূটনীতিক তিনি। তালেবান দেশটিতে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার আগে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান, উজবেকিস্তানসহ অনেক রাষ্ট্র সেসব দেশে থাকা আফগান দূতাবাসে তালেবান প্রতিনিধিদের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এমন দেশের তালিকা ক্রমশ বড় হচ্ছে।

যাহোক, বিবৃতিতে একটি বিষয় অনুচ্চারিত রয়ে গেছে, যদিও তা বৈঠকের সময় ও আলোচ্যসূচি থেকে স্পষ্ট। আর তা হলো, এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত।

এই ইঙ্গিত পাওয়ার একটি কারণ, সম্প্রতি আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা চালানোর ঘটনায় ভারত নিন্দা জানিয়েছে এবং এর কয়েক দিন পরই ওই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। গত মাসের ওই হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বদলের ইঙ্গিত পাওয়ার আরেক কারণ, গত নভেম্বরে ভারতের মুম্বাইয়ে আফগান কনস্যুলেটে একজন ভারপ্রাপ্ত কনসাল নিয়োগ দিয়েছে তালেবান।

অন্য আরও প্রতিবেশীর মতো তালেবানও ভারতের জন্য এক বাস্তবতা। তাই আফগানিস্তান ও আফগান সরকারকে এড়িয়ে চলা কোনো বিকল্প সমাধান নয়।কবির তানিজা, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ও ফেলো

তালেবান সরকারের তরফে মুম্বাইয়ে এই প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ভারত সরকার কোনো মন্তব্য করেনি। অবশ্য এ নিয়োগ এমন এক সময়ে হলো, যখন সেই নভেম্বরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাবুল সফর করেন।

মুম্বাইয়ে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নিয়োগ দিয়েছে তালেবান সরকার। ইকরামুদ্দিন একসময় ভারতে পড়ালেখা করেছেন। এখন ভারতেই তিনি তালেবানের একজন কূটনীতিক। তালেবান ভারতে তাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করার আগে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান, উজবেকিস্তানসহ অনেক রাষ্ট্রই নিজ নিজ দেশে অবস্থিত আফগান দূতাবাসে তালেবান প্রতিনিধিদের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছে। এমন দেশের তালিকা ক্রমশ বড় হচ্ছে। ইতিপূর্বে ২০২২ সালে ভারতও কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করতে ছোট আকারে একটি কারিগরি দল পাঠিয়েছে।

কৌশলগত পরিবর্তন

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক এমন ঘটনাপ্রবাহ নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ও ফেলো কবির তানিজা বলেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি এক স্বাভাবিক অগ্রগতি। ২০২১ সালে কাবুলে তালেবান ক্ষমতায় এসেছে। ওই বাস্তবতা সামনে রেখে ভারতের সতর্ক ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন এটি।’

কবির তানিজা আরও বলেন, অন্য আরও প্রতিবেশীর মতো তালেবানও ভারতের জন্য এক বাস্তবতা। তাই আফগানিস্তান ও আফগান সরকারকে এড়িয়ে চলা কোনো বিকল্প সমাধান নয়।

নয়াদিল্লির জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী অধ্যাপক রাঘব শর্মা। তিনিও ওই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা আগেও তালেবানের সঙ্গে কোনো না কোনো পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। বর্তমান পদক্ষেপ অতীতের ওই যোগাযোগ রক্ষার নীতির একটি ধারাবাহিকতা। কিন্তু এখন তালেবানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের যে গভীরতা, সেটি আমরা সত্যিই স্বীকার করতে চাই না।’

শর্মা বলেন, ‘তালেবানের সঙ্গে যখন কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রসঙ্গ আসে, তখন আমরা বাইরের সীমাতেই রয়ে গেছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটি তালেবানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক খতিয়ে দেখেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পথে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে কাতার, চীন, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ। পাকিস্তান আছে পাঁচ নম্বরে। শর্মা বলেন, ‘ভারত এ তালিকায় নেই।’

প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির (ডানে) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল ভারত। তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালান তিনি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন