রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে কর্মসূচি পালনকালে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েক জন আহত হয়েছেন।

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দাবিতে বুধবার সকালে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি সংগঠন। অন্যদিকে, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একদল লোক পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি পালন করতে যায়।

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার কর্মসূচি ছিল পূর্বনির্ধারিত। স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টিও গতকাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে লোকজন এনসিটিবির সামনে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে মাঝে অবস্থান নেয়। তখন দুই পাশ থেকে দুই পক্ষ পরস্পরবিরোধী স্লোগান দেয়। বেলা ১টার কিছু সময় পর কিছু লোক সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন নারীও আছেন।

স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি অভিযোগ করেছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে। অন্যদিকে, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি। এরপর সরকার সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ সংস্করণ থেকে সেটি সরিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি সংযুক্ত করা হয়। তবে, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি আগের গ্রাফিতিটি সংযোজনের দায়ে রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদের অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করছে।

আজ এনসিটিবির সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার। দাবির মধ্যে আছে—অবাঙালিদের (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী) আদিবাসী সম্বোধন করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না, কোনো বইপুস্তক ছাপানো যাবে না, লেখালেখি করা যাবে না, কোনো নাটক-সিনেমা বা গল্প-কাহিনি রচনা করা যাবে না। বাঙালিদেরই বাংলাদেশের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের (অবাঙালি) ‘আদিবাসী’ বলা ও প্রচারণাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খিসা বলেছেন, “এটা ‘মব’ বাহিনীর হামলা। তারা আগে থেকেই সেখানে লাঠি নিয়ে অবস্থান করছিল। হামলায় আমাদের ১২ জন আহত হয়েছেন।” 

তিনি অবিলম্বে তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার করার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/সুকান্ত/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র জনত র

এছাড়াও পড়ুন:

পারটেক্স পিভিসি কিনে নিল নাবিল, নতুন করে যাত্রা শুরু

তিন বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর আবারও বাজারে আসছে পারটেক্স ব্র্যান্ডের পিভিসি ডোর (দরজা)। আগে এই পিভিসি ধরনের দরজা তৈরি করত পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। এখন সেই পণ্য উৎপাদন করবে নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এনজিআই)। পারটেক্স স্টার গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানসহ চারটি প্রতিষ্ঠান গত বছর অধিগ্রহণ বা কিনে নিয়েছে নাবিল গ্রুপ। এরপর নতুন করে আবারও প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে নাবিল গ্রুপ।

নাবিল গ্রুপ জানিয়েছে, পারটেক্স রকি, হিরো ও পপুলার—এই নামেই পুরোনো তিন মডেলের দরজা নতুন করে বাজারে এনেছে পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানির মালিকানা বদল হলেও আগের নামেই; অর্থাৎ পারটেক্স পিভিসি নামেই কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে।

রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে আজ সোমবার সকালে পারটেক্সের পিভিসি দরজার নতুন তিনটি মডেলের রিলঞ্চিং (পুনরায় কার্যক্রম শুরু) করা হয়। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক জাবিদ ইকবাল, প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা সৈয়দ কাইয়ুম হাসানসহ নাবিল গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পারটেক্স পিভিসি ডোরের পরিবেশকেরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে নতুন এই পণ্য নিয়ে পরিবেশকদের নানা বিষয়ে অভিযোগ ও পরামর্শ শোনেন নাবিল গ্রুপের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় সরাসরি প্রায় আট হাজার পরিবেশক যুক্ত রয়েছে। সরবরাহ শৃঙ্খল ও পরিবেশকের মাধ্যমে আমরা প্রতি মাসে কয়েক শ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করি। তাই আপনারা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা আপনাদের সহযোগী হতে চাই, নিয়ন্ত্রক নয়।’

মো. আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পারটেক্স একটি পরিচিত নাম। এটিও আমাদের একটি বড় শক্তি। আমরা এই মর্যাদাকে ধরে রাখতে চাই। নাবিল গ্রুপের মাধ্যমে পারটেক্স নামটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। এ ছাড়া পরিবেশকদের বার্ষিক প্রণোদনা ও মুনাফা বাড়াতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

পরে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে আমরা কোম্পানিটিতে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে। তাতে আগামী কয়েক বছরে আরও ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’

পণ্য বাজারজাতের কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারটেক্স পিভিসি ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক জাবিদ ইকবাল বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে পারটেক্স স্টার গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করে নাবিল গ্রুপ। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বন্ধ থাকা কয়েকটি ইউনিট পুনরায় চালু করা হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর বাজারের বাইরে থাকায় পারটেক্স পিভিসি ডোরের ব্র্যান্ড উপস্থিতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে এখন আমাদের নতুন উদ্যোগে ফিরে আসার লক্ষ্য রয়েছে।’

নাবিল গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, পারটেক্সের যে চারটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছে সেগুলো হলো, পারটেক্স ফার্নিচার, পারটেক্স পিভিসি ডোর, পারটেক্স পার্টিকেল বোর্ড ও পারটেক্স লেমিনেশন। তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে সূত্রটি জানায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ