ভারত মহাকাশে মানবহীন মহাকাশযানের ডকিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে এই সাফল্য অর্জন করেছে ভারত। এই অর্জন ভবিষ্যতে ভারতের মহাকাশ স্টেশন তৈরির পথ প্রশস্ত করবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এক্স পোস্টে জানায়, ‘মহাকাশযান ডকিং সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে! একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।”
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা তাদের স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট (স্পাডেক্স) নামের মিশনে প্রায় ২২০ কিলোগ্রাম ওজনের দুটি ছোট মহাকাশযানকে নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে স্থাপন করেছে। টার্গেট এবং চেজার নামের দুটি মহাকাশযান গত ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ভারতীয় তৈরি একটি পিএসএলভি রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
মাঙ্কিপক্স: দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম মৃত্যু
ভারতের চন্দ্র অভিযানের নেপথ্যে যত ‘রকেট নারী’
স্পাডেক্স মিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির মহাকাশমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছিলেন, “ভারতের স্পাডেক্স মিশন মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যা ভারতের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রদর্শন করে।”
ইসরোর তথ্যানুসারে, ভারত যদি একজন ভারতীয় নাগরিককে চাঁদে পাঠানোর, একটি স্বদেশী মহাকাশ স্টেশন তৈরি করার এবং চন্দ্রের নমুনা ফেরত দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে দেশীয়ভাবে উন্নত ডকিং প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মহাকাশমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং গত ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রযুক্তি ভারতকে একটি উপগ্রহ বা মহাকাশযান থেকে অন্য উপগ্রহে (যেমন পেলোড), চন্দ্রের নমুনা পৃথিবীতে আনা এবং মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর সুযোগ করে দেবে।”
মিশনের অংশ হিসেবে, ডক করা মহাকাশযানটি সংযুক্ত হওয়ার পরে তাদের মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তি ট্রান্সফার করা যাবে। ভবিষ্যতের মিশনের সময় মহাকাশে রোবোটিক্স, মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণ এবং পেলোড অপারেশন পরিচালনার জন্য এটি অপরিহার্য।
ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো এর আগে গত ৭ এবং ৯ জানুয়ারি দুইবার ডকিংয়ের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে দুইবার পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। এই আবহে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এই অভিযানে হয়তো লক্ষ্য পূরণের আগেই ইসরো হাল ছেড়ে দেবে এবং ডকিংয়ের চেষ্টা করা হবে না। তবে গত রবিবার এ সংক্রান্ত পরীক্ষায় সফলতা পায় ভারত। এরপর আজ ১৬ জানুয়ারি মহাকাশে দুটি মহাকাশযান সংযুক্ত করলো ইসরো।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, এর আগে ২০২৩ সালে চন্দ্র অভিযানে নতুন রেকর্ড গড়েছিল ভারত। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার নামিয়েছিল। চন্দ্রযান-৩ নামের ওই মিশনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করায়।
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ভারত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশে প্রথম ক্রু মিশন পাঠাবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে একজন নভোচারী পাঠাবে। চাঁদে নভোচারী পাঠানো একমাত্র দেশ এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরির লক্ষ্যও স্থির করেছে, যেটির নাম হবে “ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন’। ২০২৮ সালে শুক্র গ্রহের প্রথম কক্ষপথ অভিযান চালাবে ভারত। চলমান চন্দ্রায়ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৭ সালে চাঁদের নমুনা পৃথিবীতে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে ভারতের।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে