অচিরেই সংঘাতময় নির্বাচন আসছে মিয়ানমারে
Published: 4th, February 2025 GMT
আদমশুমারি করতে গিয়ে হামলার শিকার- ২০২৪ সালে এমন পরিস্থিতিই দেখা গেছে মিয়ানমারে। গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বারংবার বিদ্রোহীদের কবলে পড়েন আদমশুমারি কর্মী এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মীরা। শেষমেশ এই আদমশুমারি অনেকাংশেই ব্যর্থ হয় বলে দাবি করেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি। তবে আদমশুমারির সাফল্য দাবিতে পঞ্চমুখ জান্তা সরকার।
বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য আদমশুমারি খুবই সাদামাটা একটি ঘটনা। রাষ্ট্র সচল রাখতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আদমশুমারি করতেই হয়, এর তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। কিন্তু বছরের পর বছর গৃহযুদ্ধে পর্যদুস্ত মিয়ানমারের জন্য এই আদমশুমারির অন্যরকম একটা গুরুত্ব রয়েছে। মূলত দেশে একটি নির্বাচন পরিচালনা করার আগের ধাপ হিসেবে এই আদমশুমারি করায় জান্তা সরকার। 
 চার বছর আগে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে জান্তা সরকার। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। জান্তা সরকারের বিরোধীপক্ষ আশঙ্কা করছে, আগামী এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করবে সামরিক জান্তা। 
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা, তাদের একাংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট। তাদের মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, "এই নির্বাচন হবে একটা প্রহসন, শুধুই লোক দেখানো।"
আল জাজিরাকে তিনি বলেন, "সেনাবাহিনী আশা করছে এই প্রহসনের নির্বাচন করে কিছু দেশের চোখে তারা বৈধতা পাবে।.                
      
				
নেই নির্ভরযোগ্য তথ্য
 মিয়ানমারের জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং বার বার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত শুক্রবারে আবারও জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়ে জুলাই ৩১ পর্যন্ত। সেনাবাহিনীর দাবি, দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার, তাই জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াচ্ছে তারা। 
শুধু তাই নয়, জান্তা সরকার দাবি করেছে ২০২০ সালে যে নির্বাচনের মাধ্যমে আগের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, সেই নির্বাচনের ভোটার তালিকা সঠিক ছিল না। ২০২৪ সালে আদমশুমারির মাধ্যমে তারা সঠি ভোটার তালিকা তৈরি করবে।
মিয়ানমারের গনতন্ত্র ও মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থা প্রগ্রেসিভ ভয়েজের প্রতিষ্ঠাতা খিন ওমার বলেন, "জান্তা কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়নি।... এই প্রহসনের আদমশুমারিতে বাদ গেছে বিপুল এলাকা, জনসংখ্যার বিশাল অংশ।"
বিশেষ করে বিদ্রোহীদের কব্জায় থাকা এলাকাগুলো আদমশুমারি থেকে পুরোই বাদ গেছে।
দেশটির অভিবাসন এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, মায়ানমারের মোট ৩৩০টি টাউনশিপের মাঝে মাত্র ১৪৫টি টাউনশিপের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার আদমশুমারি করা সম্ভব হয়েছে। এ থেকে ধারণা করে নেওয়া যায়, বর্তমানে দেশটির অর্ধেকেরও কম অংশ শাসন করছে জান্তা সরকার।
জান্তা সরকার দাবি করেছে আদমশুমারি সফল হয়েছে, দেশের মানুষ খুশিমনে এতে অংশ নিয়েছে, কিন্তু খিন ওমার বলেন, বাস্তব চিত্র পুরোই উল্টো। আদমশুমারি চলাকালীন কর্মীদের সাথে ছিল সশস্ত্র সেনা। অনেক সময়েই নাগরিকদের থেকে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত তথ্য আদায় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আল জাজিরাকে কোনো তথ্য দেয়নি মিয়ানমারের সেনা সরকার।
অভূতপূর্ব সংকটে সেনাবাহিনী
 জান্তা সরকার যতই গলাবাজি করুক না কেন, লাগাতার গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে এসেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ২০২৩ সালের শেষ থেকে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেনা সরকার। বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে ৯১টি শহর এবং ১৬৭টি সেনা ঘাঁটি। 
শুধু তাই নয়, বিপুল পরিমাণ সেনা মনোবল হারিয়ে বাহিনী ত্যাগ করেছে।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, মিয়ানমারের ইতিহাসে সেনাবাহিনী এখন সর্বোচ্চ দুর্বল অবস্থায় আছে।.... আমাদের প্রধান লক্ষ্য [২০২৫ সালে] হলো সেনাবাহিনীর একনায়কতন্ত্র নির্মূল করা।"
এমন অবস্থায় নির্বাচনের চিন্তাকে আকাশকুসুম স্বপ্ন মনে করছেন জান্তা সরকারের সমালোচকরা।
তবে এ সরকার নির্বাচন দিয়েই ছাড়বে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি মন্তব্য করেন। সরকারের ভেতর থেকেই ক্ষমতায় পটপরিবর্তনের চাপ আসছে। বর্তমান সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় চায় না কেউই।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রদবদল আসছে মিয়ানমারের সরকারেও, জানা গেছে দেশটির সংবাদ সংস্থা ইরাবতি সূত্রে। তিনজন মন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়েছে সম্প্রতিই। এছাড়া দপ্তর পাল্টেছেন আরও কয়েকজন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাঝেও রদবদল এসেছে। যেসব এলাকায় বিদ্রোহীরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি, এমন কিছু এলাকার সেন কর্মকর্তাদের হয়েছে পদোন্নতি। অর্থাৎ কর্মকর্তাদের খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং।
এছাড়া জান্তা সরকারের পৃষ্ঠপোষক, চীনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের চাপ আসছে।
"গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে চীনের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে তারা মিন অং হ্লাইংকে পছন্দ করে না। নির্বাচনের মাধ্যমে তার ক্ষমতার পরিধি কমে আসবে বলে আশা করছে চীন," হর্সি বলেন।
এই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ান। ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত এই সংস্থার মতে, ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে দেশটির মাথা ঘামানো ঠিক হচ্ছে না।
সংঘাতের সমূহ সম্ভাবনা
 মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, একটি সরকারের পতনের পর জরুরি অবস্থা দেওয়া যেতে পারে। তবে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। অন্যদিকে, সাধারনত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের নির্বাচন হয়। যেহেতু বর্তমানে জুলাই ৩১ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করার কথা বলা হয়েছে, এ বছরের নভেম্বরের নির্বাচন হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। 
তবে যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন, দেশের জনগণ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে, হর্সি মনে করেন। তার মতে, জান্তা সরকারের বৈধতা দেওয়ার এই নির্বাচনে প্রচুর সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। 
 এমনকি এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে দেখা হবে কিনা তা নিয়েও তিনি শঙ্কা ব্যক্ত করেন। 
নির্বাচন নিয়ে জান্তা সরকার সামনে অগ্রসর হলে নিঃসন্দেহে তাদের ওপর হামলা করবে বিদ্রোহী দল পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ), মনে করেন জ কিঅ। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কোনো হামলা হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে তানিনথারি অঞ্চলে পিডিএফের এক মুখপাত্র বো সি আল জাজিরাকে বলেন, যেসব বেসামরিক নাগরিক জান্তা সরকারকে সহায়তা করছে বলে সন্দেহ করা হয়, তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমে সাগাইং অঞ্চলে পিডিএফের মুখপাত্র কো অং কিঅ হেইন বলেন, যারা জান্তা সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আনা হবে।"
মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা মনে করছে নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর দিন শেষ হয়ে আসছে। এই নির্বাচন হলো তাদের খড়কুটো আঁকড়ে ভেসে থাকার শেষ প্রচেষ্টা।
"তাদের পতন কখন হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছি না। কাল হতে পারে। কয়েক মাস পর হতে পারে। এক বছরের মাথায় হতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর পতন অনিবার্য। কেউ এই পতন ঠেকাতে পারবে না," বলেন জ কিঅ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র ক ষমত য় সরক র র র জন য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, যা জানা দরকার
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের নাগরিকেরা আজ মঙ্গলবার তাঁদের মেয়র নির্বাচনে ভোট দেবেন। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক রাজ্যের ডেমোক্র্যাট সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার মধ্যে লড়াই হবে। এই নির্বাচন ইতিমধ্যেই পুরো বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
নিউইয়র্কে চার বছর পরপর মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ বছরের নির্বাচন বিশেষভাবে নজর কেড়েছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে। পৃথিবীর অন্যতম বড় এই নগরের নেতৃত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন প্রগতিশীল, ক্ষমতাসীন ও রক্ষণশীলরা।
নিউইয়র্ক নগর ও মেয়র নির্বাচন সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক—
নিউইয়র্ক কত বড়
নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১১ হাজার ৩১৪ জন করে। সে হিসাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরও বটে। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই নগর পাঁচটি বরো বা প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলো হলো ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটান, কুইন্স ও স্টেটেন আইল্যান্ড। এগুলো কাউন্টির সমতুল্য প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে কাজ করে।
ব্রঙ্কস
হিপ-হপ সংগীতের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস বরো। বিখ্যাত ইয়াঙ্কি স্টেডিয়ামও এখানেই অবস্থিত। এই ১১০ বর্গকিলোমিটার (৪২ বর্গমাইল) আয়তনের এই প্রশাসনিক অঞ্চলে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার পরিবারগুলোর বার্ষিক গড় আয় ২৮ হাজার ৬৬৪ ডলার। এখানে এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া গড়ে ২ হাজার ১০০ ডলার।
ব্রুকলিন
শিল্প, বৈচিত্র্যময় পাড়া-মহল্লা এবং বিখ্যাত ব্রুকলিন ব্রিজের জন্য পরিচিত ব্রুকলিন। এখানে প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। এটির আয়তন ১৮০ বর্গকিলোমিটার। পাঁচটি বরোর মধ্যে ব্রুকলিনের বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ—৪১ হাজার ১৭১ ডলার। এখানে এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া গড়ে ২ হাজার ৮০০ ডলার।
নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১১ হাজার ৩১৪ জন করে। সে হিসাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরও বটে। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এ শহর পাঁচটি বরো বা প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত।ম্যানহাটান
নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ম্যানহাটান। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট, ব্রডওয়ে ও সেন্ট্রাল পার্ক। এখানে প্রায় ১৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষের বসবাস। অঞ্চলটির আয়তন ৫৯ বর্গকিলোমিটার। নিউইয়র্কে ম্যানহাটানের বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় সর্বোচ্চ—৬১ হাজার ৪৩৯ ডলার। তবে এখানকার বাড়িভাড়াও অন্যান্য এলাকায় তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৪ হাজার ২০০ ডলার ব্যয় করতে হয়।
কুইন্স
পাঁচটি বরোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কুইন্স। এখানে নিউইয়র্কের প্রধান দুটি বিমানবন্দর জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দর অবস্থিত। ২৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বরোতে প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় ৪০ হাজার ৫৪৯ ডলার। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে প্রায় ২ হাজার ৭০০ ডলার।
স্টেটেন আইল্যান্ড
বিভিন্ন পার্ক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য পরিচিত স্টেটেন আইল্যান্ড। ১৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বরোতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। এখানকার বার্ষিক গড় পারিবারিক আয় ৪৭ হাজার ২১৮ ডলার। এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে প্রায় ২ হাজার ডলার।
এই পাঁচটি বরোর মোট আয়তন প্রায় ৭৭৮ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস, জার্মানির বার্লিন কিংবা সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান।
নিউইয়র্কের বাসিন্দা কারা
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২ বছর বয়সীদের মধ্যবয়স্ক ধরা হয়। নিউইয়র্কের ক্ষেত্রে মধ্যবয়স্ক ধরা হয় ৩৮ দশমিক ৮ বছর বয়সীদের। এর থেকে বোঝা যায়, এই শহরের জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে তরুণ।
নিউইয়র্কে ৩০-৩৪ বছর বয়সী মানুষ সবচেয়ে বেশি, যাঁরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ২ শতাংশ ২৫-২৯ বছর বয়সী এবং ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ ৩৫-৩৯ বছর বয়সী।
নিউইয়র্কে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কিছুটা বেশি। এখানে ৪২ লাখ ৯০ হাজার নারী এবং ৩৯ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ বসবাস করে।
নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরে সর্বশেষ মেয়র ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির রুডি জুলিয়ানি (১৯৯৩-২০০১)। এর পর থেকে শহরটি ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র বেছে নিয়েছে। ২০০২-১৩ মেয়াদে মাইকেল ব্লুমবার্গ, ২০১৪-২১ মেয়াদে বিল দে ব্লাসিও এবং ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত এরিক অ্যাডামস এই দল থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন।নিউইয়র্ক বিশ্বের অন্যতম বহুজাতিক ও বহুভাষিক শহর হিসেবে পরিচিত। এখানকার বাসিন্দারা ২০০টির বেশি ভাষায় কথা বলেন। শহরের ৩৭ শতাংশ বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৪৯ শতাংশ বাসিন্দা ঘরে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। এ ছাড়া শহরের প্রায় অর্ধেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অভিবাসীদের মালিকানাধীন।
বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় শহরগুলোর একটি নিউইয়র্ক। ২০২০ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, এই শহরের ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ শ্বেতাঙ্গ, ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসপানিক, ২০ দশমিক ২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ এবং ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ এশীয়।
মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী কারা
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোট আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান মেয়র ডেমোক্রেটিক পার্টির এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে আছেন। তবে এ বছর তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফেডারেল মামলার কারণে তিনি চাপের মুখে পড়েন। যদিও এপ্রিল মাসে আদালত সেই মামলা খারিজ করে দেয়।
নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরে সর্বশেষ মেয়র ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির রুডি জুলিয়ানি (১৯৯৩-২০০১)। এর পর থেকে শহরটি ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র বেছে নিয়েছে। ২০০২-১৩ মেয়াদে মাইকেল ব্লুমবার্গ, ২০১৪-২১ মেয়াদে বিল ডি ব্লাসিও ও ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত এরিক অ্যাডামস এই দল থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনজন প্রার্থী—জোহরান মামদানি (৩৪), অ্যান্ড্রু কুমো (৬৭) ও কার্টিস স্লিওয়া (৭১)।
জোহরান মামদানি
জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী। তিনি প্রগতিশীল, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টিও তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
জোহরান একজন মুসলিম অভিবাসী। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো নিউইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী করা। তাঁর ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে বাসাভাড়া স্থগিত করা, সবার জন্য বিনা মূল্যে শিশু পরিচর্যাসেবা এবং কম খরচের গণপরিবহন সেবা চালু করা।
জোহরান ২০২১ সাল থেকে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনী প্রচার এবং আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী। তিনি প্রগতিশীল ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টিও তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।অ্যান্ড্রু কুমো
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন অ্যান্ড্রু কুমো। তিনি ২০১১-২১ পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্নর ছিলেন। এর আগে তিনি ২০০৭-১০ সালে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল, ১৯৯৭-২০০১ সালে মার্কিন হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্টের সেক্রেটারি এবং ১৯৯৩-৯৭ সালে সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন।
কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্য সরকারে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে অ্যান্ড্রু কুমোর। তবে শেষবার নিউইয়র্কের গভর্নর থাকাকালে ১৩ জন নারী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এর ফলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন কুমো। কিন্তু দলের ভেতর প্রার্থী নির্বাচনের প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির কাছে তিনি হেরে যান। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেন।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে কুমোর বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। কিন্তু সব জরিপে জোহরান মামদানি তাঁর চেয়ে কমপক্ষে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।
ভোটকেন্দ্র কখন খোলা ও বন্ধ হবে
নিউইয়র্কে আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলা থাকবে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র খোলা হয় এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে বন্ধ হবে।
মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২ নভেম্বর শেষ হয়েছে। প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।