অচিরেই সংঘাতময় নির্বাচন আসছে মিয়ানমারে
Published: 4th, February 2025 GMT
আদমশুমারি করতে গিয়ে হামলার শিকার- ২০২৪ সালে এমন পরিস্থিতিই দেখা গেছে মিয়ানমারে। গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বারংবার বিদ্রোহীদের কবলে পড়েন আদমশুমারি কর্মী এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মীরা। শেষমেশ এই আদমশুমারি অনেকাংশেই ব্যর্থ হয় বলে দাবি করেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি। তবে আদমশুমারির সাফল্য দাবিতে পঞ্চমুখ জান্তা সরকার।
বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য আদমশুমারি খুবই সাদামাটা একটি ঘটনা। রাষ্ট্র সচল রাখতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আদমশুমারি করতেই হয়, এর তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। কিন্তু বছরের পর বছর গৃহযুদ্ধে পর্যদুস্ত মিয়ানমারের জন্য এই আদমশুমারির অন্যরকম একটা গুরুত্ব রয়েছে। মূলত দেশে একটি নির্বাচন পরিচালনা করার আগের ধাপ হিসেবে এই আদমশুমারি করায় জান্তা সরকার।
চার বছর আগে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে জান্তা সরকার। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। জান্তা সরকারের বিরোধীপক্ষ আশঙ্কা করছে, আগামী এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করবে সামরিক জান্তা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা, তাদের একাংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট। তাদের মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, "এই নির্বাচন হবে একটা প্রহসন, শুধুই লোক দেখানো।"
আল জাজিরাকে তিনি বলেন, "সেনাবাহিনী আশা করছে এই প্রহসনের নির্বাচন করে কিছু দেশের চোখে তারা বৈধতা পাবে।.
নেই নির্ভরযোগ্য তথ্য
মিয়ানমারের জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং বার বার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত শুক্রবারে আবারও জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়ে জুলাই ৩১ পর্যন্ত। সেনাবাহিনীর দাবি, দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার, তাই জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াচ্ছে তারা।
শুধু তাই নয়, জান্তা সরকার দাবি করেছে ২০২০ সালে যে নির্বাচনের মাধ্যমে আগের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, সেই নির্বাচনের ভোটার তালিকা সঠিক ছিল না। ২০২৪ সালে আদমশুমারির মাধ্যমে তারা সঠি ভোটার তালিকা তৈরি করবে।
মিয়ানমারের গনতন্ত্র ও মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থা প্রগ্রেসিভ ভয়েজের প্রতিষ্ঠাতা খিন ওমার বলেন, "জান্তা কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়নি।... এই প্রহসনের আদমশুমারিতে বাদ গেছে বিপুল এলাকা, জনসংখ্যার বিশাল অংশ।"
বিশেষ করে বিদ্রোহীদের কব্জায় থাকা এলাকাগুলো আদমশুমারি থেকে পুরোই বাদ গেছে।
দেশটির অভিবাসন এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, মায়ানমারের মোট ৩৩০টি টাউনশিপের মাঝে মাত্র ১৪৫টি টাউনশিপের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার আদমশুমারি করা সম্ভব হয়েছে। এ থেকে ধারণা করে নেওয়া যায়, বর্তমানে দেশটির অর্ধেকেরও কম অংশ শাসন করছে জান্তা সরকার।
জান্তা সরকার দাবি করেছে আদমশুমারি সফল হয়েছে, দেশের মানুষ খুশিমনে এতে অংশ নিয়েছে, কিন্তু খিন ওমার বলেন, বাস্তব চিত্র পুরোই উল্টো। আদমশুমারি চলাকালীন কর্মীদের সাথে ছিল সশস্ত্র সেনা। অনেক সময়েই নাগরিকদের থেকে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত তথ্য আদায় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আল জাজিরাকে কোনো তথ্য দেয়নি মিয়ানমারের সেনা সরকার।
অভূতপূর্ব সংকটে সেনাবাহিনী
জান্তা সরকার যতই গলাবাজি করুক না কেন, লাগাতার গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে এসেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ২০২৩ সালের শেষ থেকে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেনা সরকার। বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে ৯১টি শহর এবং ১৬৭টি সেনা ঘাঁটি।
শুধু তাই নয়, বিপুল পরিমাণ সেনা মনোবল হারিয়ে বাহিনী ত্যাগ করেছে।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, মিয়ানমারের ইতিহাসে সেনাবাহিনী এখন সর্বোচ্চ দুর্বল অবস্থায় আছে।.... আমাদের প্রধান লক্ষ্য [২০২৫ সালে] হলো সেনাবাহিনীর একনায়কতন্ত্র নির্মূল করা।"
এমন অবস্থায় নির্বাচনের চিন্তাকে আকাশকুসুম স্বপ্ন মনে করছেন জান্তা সরকারের সমালোচকরা।
তবে এ সরকার নির্বাচন দিয়েই ছাড়বে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি মন্তব্য করেন। সরকারের ভেতর থেকেই ক্ষমতায় পটপরিবর্তনের চাপ আসছে। বর্তমান সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় চায় না কেউই।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রদবদল আসছে মিয়ানমারের সরকারেও, জানা গেছে দেশটির সংবাদ সংস্থা ইরাবতি সূত্রে। তিনজন মন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়েছে সম্প্রতিই। এছাড়া দপ্তর পাল্টেছেন আরও কয়েকজন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাঝেও রদবদল এসেছে। যেসব এলাকায় বিদ্রোহীরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি, এমন কিছু এলাকার সেন কর্মকর্তাদের হয়েছে পদোন্নতি। অর্থাৎ কর্মকর্তাদের খুশি রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং।
এছাড়া জান্তা সরকারের পৃষ্ঠপোষক, চীনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের চাপ আসছে।
"গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে চীনের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে তারা মিন অং হ্লাইংকে পছন্দ করে না। নির্বাচনের মাধ্যমে তার ক্ষমতার পরিধি কমে আসবে বলে আশা করছে চীন," হর্সি বলেন।
এই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ান। ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত এই সংস্থার মতে, ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে দেশটির মাথা ঘামানো ঠিক হচ্ছে না।
সংঘাতের সমূহ সম্ভাবনা
মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, একটি সরকারের পতনের পর জরুরি অবস্থা দেওয়া যেতে পারে। তবে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। অন্যদিকে, সাধারনত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের নির্বাচন হয়। যেহেতু বর্তমানে জুলাই ৩১ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করার কথা বলা হয়েছে, এ বছরের নভেম্বরের নির্বাচন হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন, দেশের জনগণ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে, হর্সি মনে করেন। তার মতে, জান্তা সরকারের বৈধতা দেওয়ার এই নির্বাচনে প্রচুর সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
এমনকি এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে দেখা হবে কিনা তা নিয়েও তিনি শঙ্কা ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন নিয়ে জান্তা সরকার সামনে অগ্রসর হলে নিঃসন্দেহে তাদের ওপর হামলা করবে বিদ্রোহী দল পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ), মনে করেন জ কিঅ। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কোনো হামলা হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে তানিনথারি অঞ্চলে পিডিএফের এক মুখপাত্র বো সি আল জাজিরাকে বলেন, যেসব বেসামরিক নাগরিক জান্তা সরকারকে সহায়তা করছে বলে সন্দেহ করা হয়, তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমে সাগাইং অঞ্চলে পিডিএফের মুখপাত্র কো অং কিঅ হেইন বলেন, যারা জান্তা সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আনা হবে।"
মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা মনে করছে নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর দিন শেষ হয়ে আসছে। এই নির্বাচন হলো তাদের খড়কুটো আঁকড়ে ভেসে থাকার শেষ প্রচেষ্টা।
"তাদের পতন কখন হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছি না। কাল হতে পারে। কয়েক মাস পর হতে পারে। এক বছরের মাথায় হতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর পতন অনিবার্য। কেউ এই পতন ঠেকাতে পারবে না," বলেন জ কিঅ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র ক ষমত য় সরক র র র জন য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।
অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরো পড়ুন:
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।
‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’
তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।
‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।
‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’
একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’
জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’
তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’
বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারা//