‘দালালরে টাকা দিয়ে সর্বশান্ত, এহন ভাইয়ের লাশটা ফেরত চাই’
Published: 4th, February 2025 GMT
দালালরে টাকা দিয়ে আমরা সর্বশান্ত, এখন ভাইয়ের লাশটা ফেরত চাই। ভাইয়ের শোক আমরা কীভাবে সইবো। এসব দালালের বিচার চাই। আর কত জীবন নিয়ে খেলা করবে এসব দালাল?
মঙ্গলবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন লিবিয়ায় গিয়ে নিহত আবুল বাসার আকনের ভাই বাচ্চু আকন। তার দাবি, সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌযান ডুবে লিবিয়া উপকূলে ভেসে আসা ২৩টি লাশের মধ্যে আবুল বাসার আকনের লাশও রয়েছে। আবুল বাসারের মৃত্যুর বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেন তার ভাই বাচ্চু আকন।
সম্প্রতি লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮–৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। গলিত লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও স্থানীয় সূত্রের বরাতে দূতাবাস বলছে, তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি।
এসব নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈরের ৬ জন বাসিন্দা রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
তারা বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে পহেলা জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুর গ্রামের আক্কাস আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ, শাখারপাড় গ্রামের ফারুক মোল্লার ছেলে সজিব মোল্লা, আড়াইপাড়া গ্রামের ইলিয়াস চৌধুরীর ছেলে আহাদ চৌধুরি এবং সদর উপজেলার ঘটমাঝি এলাকার মিরাজ ফরাজির ছেলে সুজন ফরাজী মারা গেছেন।
মাদারীপুরের রাজৈরের বাসিন্দা সুজন ফরাজীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে তার চাচা আকবর ফরাজী বলেন, আমার ভাতিজা ২৫ তারিখে নৌকাডুবিতে মারা গেছে। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল। দালালরা এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। এসব দালালের বিচার চাই।
নিহত টিটু হাওলাদারের বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, আমি সামান্য চা দোকানি। আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার ছেলেকে ইতালি নেয়ার জন্য টাকা নেয়। এখন শুনি ছেলে মারা গেছে। আমি দালালের বিচার চাই।
রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, খবরটি শুনেছি। নিহতদের লাশ দেশে আনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মশালমিছিলে মুখর সন্ধ্যার রাজপথ
‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে/ রুখে দাঁড়াও একসাথে’, ‘মাঠে ঘাটে বাসে ট্রেন/ নারীর স্থান সবখানে’, ‘পথেঘাটে দিনেরাতে/ চলতে চাই নিরাপদে’, ‘রাজপথে নারীর সাড়া/ জাগরণের নতুনধারা’ এমন সব স্লোগানে রাজপথ মুখর করে সন্ধ্যায় মশালমিছিল করলেন নারীরা।
আজ মঙ্গলবার ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ উপলক্ষে বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় মশালমিছিলের আয়োজন করে ৬১টি নারী সংগঠন। বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদের সামনে ড্রাম বাজিয়ে এই আয়োজনের সূচনা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর পরিচিতি তুলে ধরেন সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের মাহমুদা বেগম। এরপর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা দিয়ে মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারীর জন্য রাজনীতি করি, সহিংসতা রোধে একসাথে লড়ি’।
১৯৯৭ সাল থেকে দেশে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ দিবস’ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী সরকারবিরোধী মিরাবেল ভগ্নিত্রয়কে সেনাসদস্যরা ধর্ষণ ও হত্যা করেন। এ ঘটনার স্মরণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকার ও ক্যারিবীয় নারী সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে দিবসটির ইতিহাস তুলে ধরে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের রেহানা সামদানী। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর কিছু কিছু বিচরণ থাকলেও স্বাধীন ও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য। রাজনীতিতে নারীদের কেবল অলংকার বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে নারীর যোগ্যতা ও অধিকারকে সম্মান জানিয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই নারীর সপক্ষে সরকার গঠন এবং আইনকানুন তৈরি হবে।
ঘোষণাপত্রে নারী নির্যাতন বন্ধ ও রাজনীতিতে সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আট দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতা, হয়রানি ও ধর্মকে হাতিয়ার করে ভোটের রাজনীতিতে নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর প্রলোভন দেখিয়ে নারীকে গৃহবন্দী করার কূটকৌশল বন্ধ করতে হবে; প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে লিঙ্গসমতা, নারীকে সব সহিংসতা থেকে সুরক্ষার স্পষ্ট নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করতে হবে এবং জাতীয়, স্থানীয় ও দলীয় কাঠামোর প্রতি স্তরে নারীর অর্থবহ নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটির আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার সংসদ ভবনের সামনে