বিশ্বে প্রথম এক ডোজের ডেঙ্গুর টিকা অনুমোদন দিয়েছে ব্রাজিল। স্থানীয় সময় বুধবার ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষ এই টিকার অনুমোদন দিয়ে একে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ অভিহিত করেছেন। উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে মশাবাহিত এই প্রাণঘাতী রোগ বাড়তে থাকার মধ্যে টিকার ব্যবহার শুরু করছে ব্রাজিল।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এনভিসা ১২ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের শরীরে বুটানটান–ডিভি নামের টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এই টিকা তৈরি করেছে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান বুটানটান ইনস্টিটিউট।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে শুধু টিএকে–০০৩ নামে ডেঙ্গুর একটি টিকা আছে। এই টিকার দুই ডোজ নিতে হয় তিন মাসের ব্যবধানে।

ব্রাজিলজুড়ে আট মাস ধরে পরীক্ষা চালানোর পর এক ডোজের এই টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন দ্রুততার সঙ্গে সহজে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া যাবে।

সাও পাওলোয় এক সংবাদ সম্মেলনে বুটানটান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এসপার কালাস বলেন, ‘ব্রাজিলে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য এটা একটি ঐতিহাসিক অর্জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে যে রোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে রেখেছে, তার বিরুদ্ধে এখন খুব শক্তিশালী একটি অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে।’

এই টিকা উৎপাদনের জন্য চীনের কোম্পানি উসিবায়োলোজিক্স–এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ব্রাজিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় তিন কোটি ডোজ টিকা তৈরি করে দেবে চীনা কোম্পানিটি।

টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার আগে ব্রাজিলে ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তাতে গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা পাওয়া গেছে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ।

এডিস এজিপ্টি মশার মাধ্যমে মানুষের দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। গত বিশ্বে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৬ লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এতে প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য।

গত বছর ডেঙ্গুতে এসব মৃত্যুর অর্ধেকই হয়েছে ব্রাজিলে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এ বছর যত ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে, তার ১৯ শতাংশের জন্য দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

টি–টোয়েন্টিতে এ কেমন ব্যাটিং বাংলাদেশের

পারভেজ হোসেন অনেকটুকু উল্টো দৌড়ে দুর্দান্ত একটা ক্যাচ নিলেন কার্টিস ক্যাম্ফারের। অবিশ্বাসে তখন মাথায় হাত তাঁর পাশেই দাঁড়ানো সাইফ হাসানের—এভাবেও ক্যাচ নেওয়া যায়!

ম্যাচের পরের অংশে তাঁর মতো অবিশ্বাসে মাথায় হাত দর্শকদের পড়েছে অনেকবারই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংটাকে যে অবিশ্বাস্য বাজেই মনে হচ্ছিল! ম্যাচ শেষে নিজেদের ব্যাটিংয়ের ভিডিও নিজেরা দেখে থাকলে হয়তো ব্যাটসম্যানরাও বিশ্বাস করতে পারেননি, কতটা বাজে ব্যাটিং করেছেন তাঁরা। এর ব্যাখ্যা হয়তো তাঁদের কাছেও নেই।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে আজ প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৮২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ২–০–তে টেস্ট সিরিজ হারা আয়ারল্যান্ড। তারা ১৮১ রান করে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে।

কিন্তু সেই একই উইকেটে কিনা ৫.৩ ওভারে ১৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ! শুধু তা–ই নয়, পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করেও অলআউট না হয়ে এবং তাওহিদ হৃদয়ের ৫০ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসের পরও বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ১৪২ রান।

শুরুর ওই ধাক্কার পর বাংলাদেশ যে বেশি দূর যেতে পারবে না, তা অনুমেয়ই ছিল। মাঝে ৩৪ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়ে হৃদয় ও জাকের আলী দলকে সম্মানজনক একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও ৯ উইকেট হারানো বাংলাদেশ হেরেছে ৩৯ রানে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের শুরু প্রথম ওভারেই। ম্যাথু হামফ্রিজের বলে তানজিদ হাসান ফিরে যান ক্যাচ দিয়ে। ৫ বলে ২ রানে তাঁর বিদায়ের পর বাংলাদেশের পরের তিন ব্যাটসম্যানের স্কোরই ইনিংসের সারাংশটা করে দিতে পারে।

আগের দিন দল নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কথার উত্তাপ ছড়িয়ে দেওয়া অধিনায়ক লিটন ৩ বলে ১, পারভেজ হোসেন ৬ বলে ১ আর সাইফ ১৩ বলে করেছেন ৬ রান। পাওয়ারপ্লের মধ্যে আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যানের সবাই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ফিল্ডারদের হাতে। ম্যাচ জেতার আশা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল তখনই।

বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের গত কয়েক ম্যাচ ধরেই ভঙ্গুর দশা। কাল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর তাঁদের ওপর চাপটা বেড়ে গিয়েছিল আরও। ম্যাচ জয়ের আশা বাদ দিয়ে হারের ব্যবধান কমানোটাই আশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের কাছে।

জাকেরকে নিয়ে সেই চেষ্টাটাই করেছেন হৃদয়। কিন্তু জাকের ১৬ বলে ২০ রান করে ফিরে যাওয়ার পর সেটাও থেমে যায়। পরের যাত্রাটা হৃদয়ের একার। ১৩ বলে ১২ রান করে তাতে কিছুক্ষণের জন্য সঙ্গী হয়েছিলেন কেবল শরীফুল ইসলাম। জাকের–হৃদয়ের বাইরে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত সংগ্রহটা দুই অঙ্কে (১৩ বলে ১২) নিতে পেরেছেন তিনিই।

আয়ারল্যান্ডকে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দুই ভাই টিম ও হ্যারি টেক্টর। ওপেনিংয়ে স্টার্লিংয়ের সঙ্গে ২৬ বলে ৪০ রানের জুটি গড়া টিম ১৯ বলে ৩২ রান করে আউট হয়েছেন।

তবে হ্যারি ইনিংসটাকে টেনে নিয়ে যান। শেষ ওভারে তানজিম হাসানকে দুই ছক্কা মেরে ১৭ রান নেন, আয়ারল্যান্ডের রানটা আরও শক্ত ভিত পেয়ে যায়। ৪৩ বলে ৫ ছক্কা আর ১ চারের ইনিংসে ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন হ্যারি টেক্টর।

এরপর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই বাকি গল্পটা লিখে দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধবলধোলাইয়ের ধাক্কা সামলে বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস জোগানোর মঞ্চ এই সিরিজ। তার শুরুটাও হলো হারের ধাক্কায়। চট্টগ্রামেই সিরিজের পরের দুই ম্যাচ ২৯ নভেম্বর এবং আগামী ২ ডিসেম্বর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ