আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘কমান্ড সেন্টার’ কাজ শুরু করেছে
Published: 9th, February 2025 GMT
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘কমান্ড সেন্টার’ আজ রোববার সন্ধ্যা থেকে কাজ শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কে কী কাজ করছে, সেটি ভালোভাবে সমন্বয় করতে এই কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টার কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যও তুলে ধরা হয় সংবাদ ব্রিফিংয়ে।
কমান্ড সেন্টারের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, গতকাল থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীও ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একটি কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা; যাতে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কে কী কাজ করছে, সেটি যাতে ভালোভাবে সমন্বয় করা যায়। আজ সন্ধ্যায় এটি কাজ শুরু করছে।
প্রেস সচিব বলেন, এখানে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত, যেমন পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাব আছে। তাদের বাইরে সশস্ত্র বাহিনীরও প্রতিনিধি এতে থাকবে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, এতে খুব দ্রুত সাড়া দেওয়া যাবে। কোনো জায়গায় যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হয়, সেখানে দ্রুত সাড়া দেবে তারা।
কমান্ড সেন্টার কার অধীনে চলবে বা কী প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন কমান্ড সেন্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয় করা হবে। প্রতিটি বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন এবং নিয়মিত মনিটরিং হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ন ড স ন ট র পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।