Samakal:
2025-06-15@23:49:52 GMT

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

Published: 14th, February 2025 GMT

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

শীতের রুক্ষতা শেষে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। কোকিলের ডাকে মাতোয়ারা চারপাশ। উচাটন মন আর ঘরে থাকে না। বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জনের হাত ধরে উৎসব বিহারে। কারণ বসন্ত এসে গেছে ভালোবাসার পসরা নিয়ে। 

এক সময় পাশাপাশি দুই দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হতো। তবে পঞ্জিকা সংশোধনে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও প্রকৃতির উৎসব দুটো একই দিন উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার দিবস দুটি শুক্রবারে পড়ায় উৎসবপ্রিয় জাতির কাছে এ যেন মধুচন্দ্রিমা।

বসন্ত প্রেমের ঋতু। ফাল্গুনে শুরু হয় ভালোবাসার গুনগুনানি। শুধু প্রকৃতি নয়, মানব মনও রঙিন হয়ে ওঠে। খুলে যায় দখিনা দুয়ার। কী নেই বসন্তের! রং, রূপ,  রস ও লাবণ্য– সব রয়েছে। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। পাহাড়, বন, নগর, বন্দর– সব রঙিন হয়ে উঠবে বসন্তের আগমনে। রঙিন প্রজাপতির ডানায় প্রেমের বারতা। ডালে ডালে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়াদের মিছিল। কবিগুরু ভাষায় ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ তারপরও হুট করে বিষণ্ন দুপুরে কোকিলের কুহু ডাকে মন কেমন করে ওঠে। যেন দূরের কোনো বেদনা মনে উঁকি দেয়। কবি নজরুলের কবিতার মতো ‘এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে/ অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে/ জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।’

প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছে। খ্রিষ্টের জন্মের বেশ কয়েকশ বছর আগে মানুষ বসন্ত উৎসব পালন করত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরে খোদাই করা বসন্ত উৎসবের নমুনা পাওয়া গেছে। সব জাতির পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাতে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলাদেশে ঘটা করে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। পহেলা ফাল্গুন দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন্স ডে দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ভালোবাসার যুগল কাব্যে ভরে ওঠে পথপ্রান্তর। যেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ শুধু কি যুগল ভালোবাসা? না। এখন ভালোবাসা দিবস হয়ে গেছে সর্বজনীন। আবালবৃদ্ধবণিতার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে চারপাশ। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠেছে আরও রঙিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলতে হয়, ‘আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে– দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
ভালোবাসার এই দিনে বাংলাদেশের রয়েছে দ্রোহের ইতিহাস। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি  স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হতে যাচ্ছে বসন্ত ও ভালোবাসার উৎসব। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেভাবে জেগে ‍ওঠে, রক্তস্নাত বিপ্লবের পর এবারের বসন্ত নতুন রূপে ধরা দিক জাতির কাছে। দেশ হয়ে উঠুক সাম্য ও ভালোবাসার, দায় ও দরদের। বসন্তের দোলা লাগুক সবার হৃদয়ে। ভালোবাসার ভ্রমর গান গেয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণে। জীবন উদ্ভাসিত হোক উৎসবে উচ্ছ্বাসে। ফের ফিরে যেতে হয় কবিগুরুর কাছে, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপন হারা প্রাণ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/ তোমার অশোকে কিংশুকে অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে…।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব উৎসব প ল বসন ত র উদয প

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার