ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

অমর একুশে বইমেলায় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ।

কথাসাহিত্যিক ও রম্য লেখক এবং রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান, গ্রন্থটির প্রকাশক ও অনার্য পাবলিকেশন্সের সত্ত্বাধিকারী শফিক রহমান, লেখক ও সাংবাদিক হাসান মাহামুদ, কথাসাহিত্যিক সাইফ বরকতুল্লাহ।

আরো পড়ুন:

স্মরণীয় একটি উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখি: মাসউদ আহমাদ

বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ১৩ নতুন বই প্রকাশিত

বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, “বই হচ্ছে একজন লেখকের কাছে সন্তানের মতো। প্রথম সন্তানের জন্মদানের যে আনন্দ, উত্তেজনা, শিহরণ, রোমাঞ্চ, সেটি তুলনাহীন। এই অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছিলাম ১৯৮২ সালে, অনেক আগে, যখন ছাত্র ছিলাম। এই অভিজ্ঞতা ওনার (এস এম জাহিদ হাসানের) হয়েছে আরো পরে, এজন্য ওনার রোমাঞ্চ, আনন্দ আরো বেশি থাকবে।”

হাসান হাফিজ বলেন, “এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে, উনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর লিখেছেন। উনি (‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক) অনেক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মধ্যে আছে, ‘দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপরে, একটি শিশিরবিন্দু’। বইটির পাঠক প্রিয়তা আশা করছি।”

 বক্তব্য রাখেন ‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক এস এম জাহিদ হাসান

এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের পরিচয়। সংস্কৃতি, ঐতিহ্যই বলে দেয় আমরা কে, কোথায় ছিলাম, কোন দিকে যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। বড় হয়ে বই পড়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান, স্থাপনা ও গুণী ব্যক্তিদের আরো বিশদে জানার চেষ্টা করেছি। যত জেনেছি তাদের প্রতি তত ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্মেছে। চলার পথে যেখানেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের খোঁজ পেয়েছি, সেখানেই ছুটে গিয়েছি দেখার জন্য। এসব স্থাপনার সৌন্দর্য, গাম্ভীর্য আমাকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু যখন দেখেছি অনেক স্থাপনা সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। ব্যক্তিগত ভালোলাগা, দায়বোধ আর পাঠককে জানানোর ইচ্ছা থেকে এসব স্থাপনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতিধন্য স্থান সম্পর্কে লিখেছি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য, স্থাপনা সম্পর্কে আমাদের দেখা সৌন্দর্য আর অনুভূতির আলোটুকু পাঠকের মনে ছড়িয়ে পড়ুক, এইটুকুই প্রত্যাশা।’’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক নেতা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, সাংবাদিক নুরুজ্জামান তানিম, নাজমুল হোসেন ফারুক, আসাদ আল মাহমুদ প্রমুখ।

‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ

‘চলতি পথের বাঁকে’ গ্রন্থে উঠে এসেছে বাংলার সংস্কৃতি, গৌরবময় ঐতিহ্য আর বিশেষ ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিধন্য সব স্থানের সর্বশেষ পরিস্থিতি। জাহ্নবী চৌধুরানীর সন্তোষ ভাসানীর গল্প বলে, আশি দুয়ারী বাড়িতে একজন মানুষও নেই!, বাড়ির নাম ‘উত্তর তরফ’, দিগন্ত বিস্তৃত মিঠামইন, এগারোসিন্দুর পাড়ে, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, চিত্র পাড়ে সুলতানের নাও-সহ মোট ২৮টি ভ্রমণগদ্য। 

প্রকাশক: অনার্য
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
মূল্য: ৩০০ টাকা
স্টল নম্বর: ৩০৪-৩০৭ 

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম বইম ল অন ষ ঠ ন পথ র ব

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে