পিন্ডি জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কিউই বধে নামবে বাংলাদেশ
Published: 24th, February 2025 GMT
রাওয়ালপিন্ডির মাটিতে পাকিস্তানকে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টে ধবলধোলাই করে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। সেই মাঠেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার লাল সবুজের দলের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় কিউইদের বিপক্ষে শুরু হবে বাংলাদেশের বাঁচা মরার লড়াই। এই মাঠে কী পিন্ডি জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে দেবে? রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন উঠতেই যেন আশার সঞ্চার করলেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স।
ফিল সিমন্স বলেন, “আশা করি কাজ করবে। পাকিস্তানে এসে পাকিস্তানকে হারানো কোনো সহজ কাজ নয়। এটা তাদের (বাংলাদেশ ক্রিকেট দল) অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। আশা করি, এই মাঠ নিয়ে তাদের চিন্তার জগতে বিষয়টি প্রভাব রাখবে।”
আরো পড়ুন:
ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ওসি, আ.
মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ঐতিহাসিক সেই সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নামে তলানিতে। ভারত সফর থেকে শুরু করে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা, আরব আমিরাতে আফগানিস্তান আর উইন্ডিজের মাটিতে ওয়ানডেতে ধবলধোলাই।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে বড় হারে শুরু। দুবাই আর পিন্ডির উইকেটে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পিন্ডির রানের ফোয়ারায় ছোটা উইকেটে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারানো নিউ জিল্যান্ড যেন দিচ্ছে চোখ রাঙানি।
সিমন্স অতীত ভুলে তাকাতে চান নতুন দিনে, বাংলাদেশ কোচের প্রত্যাশা যেন শিষ্যরা শুরুটা ভালো করতে পারে। তিনি বলেন, “আমি তাদের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত নই। যে রকম খেলছি, প্রথম ১০ ওভারে সেটার চেয়ে ভালো করতে হবে। মিডল আর লোয়ার অর্ডার খুব ভালো করছে। টপ অর্ডারের ব্যাটারদের জ্বলে উঠতে হবে এখন। বিশেষ করে প্রথম ১০-১৫ ওভার পর্যন্ত।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড মুখোমুখি হয় একবার। শেষ হাসি হাসে তারাই। সব মিলিয়ে একুশ দেখায় লাল সবুজের জয় মাত্র তিনটিতে। এবার বাঁচা-মরার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে চায় না বাংলাদেশ।
“এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি ম্যাচই চাপের। বিশ্বের শীর্ষ আটটি দল খেলে এখানে এবং প্রতিটি ম্যাচই কঠিন হবে। হ্যাঁ, তারা (নিউ জিল্যান্ড) ভালো খেলেছে, তাই আমরা নিশ্চিত করব তারা যেন আগের মতো ভালো খেলতে না পারে” যোগ করেন সিমন্স।
বাংলাদেশ একাদশে আসতে পারে কয়েকটি পরিবর্তন। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশে ফিরলে তার জায়গায় কে বাদ যাবেন সেটাই এখন দেখার। এ ছাড়া পেস আক্রমণে আসতে পারে এক পরিবর্তন। মোস্তাফিজুর রহমান-তানজীম হাসান সাকিবের মধ্য থেকে বাদ পড়তে পারেন যে কেউই। একাদশে আসতে পারেন নাহিদ রানা।
এদিকে, জয় দিয়ে এক পা সেমিতে রাখা নিউ জিল্যান্ড মাঠে নামছে আটঘাট বেঁধেই। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার বলেন, “হ্যাঁ, বাংলাদেশের জন্য আমাদের কয়েকটি পরিকল্পনা আছে, কিন্তু আমি মনে করি আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে উইকেট কী করে। যদি এটি বেশ ফ্ল্যাট হয় তবে, আমি মনে করি, করাচিতে যা করেছি এখানেও তা করতে হবে।”
ঢাকা/রিয়াদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।