২০৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, রিফাত রশীদের পদত্যাগ
Published: 27th, February 2025 GMT
নতুন ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’-এর আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে ২০৫ সদস্যের। এই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নামের এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতার নাম প্রকাশ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করে অন্য সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের, সদস্যসচিব মহির আলম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইম আবেদীনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বুধবার এই কমিটি ঘোষণার সময় পদ পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তখন পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও অন্তত দুই দফায় মারধরের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা পরিকল্পিত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবু বাকের মজুমদার বলেন, আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মারামারির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরীকে প্রধান করে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ সিয়াম ও জ্যেষ্ঠ সংগঠক নাঈম আবেদীনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবারের বিক্ষোভকারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত রশীদকে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়েছিল।
আজ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন রিফাত রশীদ। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এই কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমার থেকে কনফারমেশন (অনুমতি) নেওয়া হয়নি। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলত অনুমতি ব্যতীত আমার নাম কমিটিতে রাখায় আমি এই পদ থেকে সরে এসেছি।’
রিফাত রশীদের জায়গায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মাশনূনকে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়েছে এবং বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীনকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক করা হয়েছে বলে আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার জানান।
যেমন হবে এই ছাত্রসংগঠন
সংবাদ সম্মেলনে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ কোথাও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চায় না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমাদের এই ছাত্রসংগঠন কখনো লেজুড়বৃত্তি করবে না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক উপায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সর্বোচ্চ বয়স ২৮ বছর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিগুলোতে ভর্তি হওয়া থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের মধ্যে নেতৃত্বে আসতে পারবে। এ ছাড়া আমাদের সংগঠন থেকে নারীদের জন্য কমফোর্ট জোনের (স্বস্তিদায়ক পরিবেশ) ব্যবস্থা করা হবে।’
আবু বাকের মজুমদার আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করছি। এটা যেহেতু আহ্বায়ক কমিটি। এখানে হাজার লোক রাখা সম্ভব নয়। আহ্বায়ক কমিটি শুধু কমিটি আহ্বান করবে, ইউনিটভিত্তিক কমিটি প্রস্তুত করবে। পরবর্তী কাউন্সিলের ভিত্তিতে কমিটি প্রস্তুত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নতুন ছাত্রসংগঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভাজন করা হয়নি; বরং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংগঠনের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেটে কিংবা মাদ্রাসায় কে পড়ে, এটা নিয়ে আমরা বিভাজন জুলাইয়ে করিনি। ফলে আমরা ছাত্রসংগঠনেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভাজন করিনি।’
আরও যাঁরা পদ পেলেন
আহ্বায়ক কমিটিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক পদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরুল গণি সগীর ও খান তালাত মাহমুদ (রাফি), ঢাকা কলেজের জুবায়ের হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল করিম ও নুরনবী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেদী সজিব, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারাবী জিসান, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার তুহিন আহমেদকে রাখা হয়েছে। আর যুগ্ম সদস্যসচিব পদ পেয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার, সানজানা আফিফা অদিতি, আজিজুল হক এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার আবরার কাউসার। এ ছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারদিন হাসানকে সহমুখপাত্র করা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জ্যেষ্ঠ সংগঠক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম আবেদীন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে এমন ভুল বুঝিয়ে বুধবার তাঁদের মধুর ক্যানটিনের সামনে আনা হয়েছিল। ভুল–বোঝাবুঝির কারণে ‘মব’ তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জনকে কমিটিতে রাখার বিষয়টি তাঁদের জানানো হলে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন।
বুধবারের মারামারির ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে যে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকালের (বুধবারের) ঘটনাটি যেহেতু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল–বোঝাবুঝি) ছিল, তাই আমরা যে কর্মসূচিগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো সাময়িকভাবে তুলে নিয়েছি। তবে আহতদের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী সময়ে কেমন কর্মসূচি দেব, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য গ ম সদস যসচ ব ব সরক র স গঠন র পরবর ত কম ট ত হয় ছ ল ক কম ট স গঠক গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।