নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বতর্মান আহবায়ক কমিটির সদস্য সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, বিএনপিতে ‘গণতন্ত্র’ নাই। কেন্দ্র নেতা দেয় আমরা দাসত্ব করি। টাকা হলে নমিনেশন পাওয়া যায়।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, বহিস্কার হতে পারি, আই ডোন্ট কেয়ার. আমি কেয়ার করি না। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

এদিকে দলের পদে থেকে দলের বিরুদ্ধে বিষদাগার করায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুবদলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

(গিয়াসউদ্দিনের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন)

গত বুধবার ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির একাংশের উদ্যাগে আয়োজিত নৌ-বিহারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন এসব কথা বলেন। 

তার সেই বক্তব্যের ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বলেছেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে কি বলে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এইদল গঠন হবে, পরিচালিত হবে। সেটা কি চলে? একদম স্পস্ট না। যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দল চলতো। তাহলে যেই নেতাকর্মীরা হতাশ, যারা দু:খ বেদনা বুকে জ¦ালা নিয়ে বক্তব্য দেয় সেটা থাকতো না।

কারণ আপনার নেতাকে নির্বাচিত করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকতো আপনার ভোটে যদি সর্বস্তরে নেতৃত্ব তৈরী হতো আপনাকে মর্যাদা দিতে নেতা বাধ্য হতো। নেতা ইচ্ছা মতো দলকে পরিচালনা করতে পারতো না। নেতা ইচ্ছে করলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে পারতো না।

এই গণতন্ত্রটা নাই বলে আজকে প্রকৃত নেতার কোন মূল্য নাই। এবং নেতা যারা হয় তারা হয়ে যায় শাসকের মতোই স্বৈরতান্ত্রিক। আমার যা ইচ্ছা তাই করবো, জবাবদিহীতা করার তো কোন জায়গা নাই। সেই জন্য যা-ইচ্ছা তাই করে। দলের ভেতর গণতন্ত্র থাকবে না, আর সারাদিন চিৎকার করবো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র চাই। এই চাইলেই হয়ে যাবে? এই চাওয়াটাও তো অন্যায়।

তিনি আরও বলেন, নিজের দলে গণতন্ত্র নাই আর রাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র চাই। এটা হতে পারে না। গঠনতন্ত্র তৈরী হয়েছে দল পরিচালনা করার জন্য। সেখানে লেখা হয়েছে সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে। কাউন্সিলারের ভোটের মাধ্যমে। এই যে অধিকার আমাদেরকে না দিয়ে অ্যাপয়েন্টেড নেতাকর্মী বানানো হয়। কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেনো আমরা চাকরী করি। কারো গোলামী করি। দাসত্ব করি।

নিয়োগ দেয়া হলে ওই বাড়িতে ফুল দিয়ে ভরে যায়। কারণ সে তো অ্যাপয়েন্টেড হয়েছে তার বাড়িতে ফুল নিয়ে  যাবে, সে যেনো আবার কোন একটা পদ অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পারে। নিলজ্জ বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জুনিয়ারের কাছে গিয়ে ফুল দিতে হয়। তোষামোদি করতে হয়। এই অবস্থা চলতে পারে না একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে।

আজকে আপনাদর সামনে আমি খোলাখুলি আলাপ করছি এজন্য আমি বহিস্কার হতে পারি- ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমি এটাকে কেয়ার করি না। আমি একজন মুক্তিযাদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি।

এই রাজনীতি কারো কাছে শৃখলাবদ্ধ করার জন্য না, কারো কাছে মালিকানাস্বত্ত্ব দেয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্বে তখনি প্রতিষ্ঠিত হবে যখন কর্মীরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পারবে। 


মনোনয়ন প্রসঙ্গে জলা বিএনপির সাবেক এই সভাপতি বলন, দলের মনোনয়ন নিয়ে কি হয় আপনারা জানেন? মনোনয়ন বিক্রি হয়। কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বিক্রি হয়। এই দেশ এজন্য আমরা স্বাধীন করেছি? এজন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি? নিশ্চই না।

ভালো মানুষের কোন অভাব নেই বিএনপি বা অন্য দলে। কিন্ত টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ কি টাকার গাট্টি নিয়ে দিতে হবে। বিক্রি হয় নমিনশন। এমন রাজনীতি যদি থাকে তাহলে বাংলাদশের আকাশে কখনো নতুন সূর্য উদয় হবে না।  

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নিজ দলের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিনের এমন কড়া সমালাচনা করায় বিএনপি শিবিরে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কারণ বিলুপ্ত হওয়া জেলা বিএনপির কমিটিতে সভাপতি পদে গিয়াসউদ্দিন নিজেও ভোটে নির্বাচিত হননি।

সম্মলনের আয়াজন করলেও কাউন্সিলররা ভোট দিতে পারেননি। সভাপতি পদে গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকনের নাম সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা ঘোষণা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। গিয়াস উদ্দিনের মেয়াদকালে বিভিন্ন উপজেলা, থানা ও পরে কমিটিগুলাতেও নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্র কোন ভোট হয়নি।

নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কমিটি সাজিয়েছিলেন। ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে  গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধেও। তাছাড়া তিনি  নারায়নগঞ্জে দলছুট  নেতা হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত। 

ওদিকে দলের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিনের এমন বিষদাগারকে ঘিরে চরম ক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ দলের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন এমন বক্তব্য দেয়ায় তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। 

তিনি বলেন, বিএনপির সাবেক এই এমপি বলেছেন বিএনপিতে নাকি ‘গণতন্ত্র’ নাই, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হল বিএনপি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল। তিনি ছিলেন এদেশের বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। আমাদের আদর্শের জননী হল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

উনি এদেশের গণতন্ত্রকে পূর্ণ উদ্ধার করার জন্য ৮০ বছর বয়সেও কিন্তু জেল খাটতে হয়েছে। আমরা কিন্তু তার মুক্তির জন্য কাঁধে কাঁধ রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপনাকে যখন জেলা বিএনপির দায়িত্ব দেওয়া হল তখন কিন্তু আপনি এই কথা বলেননি আপনাকে যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি করা হয়েছিল তখনও আপনি কিছু বলেননি।

কি উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি এই কথা বলেছেন আপনাকে অবশ্যই দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দলীয় সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। দলকে নিয়ে খেলা করার কারো অধিকার নাই। আমি হই কিংবা যেই হোক। শুক্রবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব এনায়েতনগরে মহানগর যুবদলের এক কর্মী সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, তিনি (গিয়াসউদ্দিন)  যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী। সে দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাপত্রের মাধ্যমে জেনেছেন। দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারকরাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ গণতন ত র দল র ব র দ ধ ন ত কর ম দ র গ য় সউদ দ ন গণতন ত র ব এনপ র বল ছ ন র জন য আপন র আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।

শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি