আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা হচ্ছে না নেইমারের
Published: 15th, March 2025 GMT
ব্রাজিল জাতীয় দলে ফিরতে এবং আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে নিজের ইচ্ছের কথা ব্যক্ত করেন নেইমার জুনিয়র। সেই তাগিদ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শৈশবের ক্লান সান্তোসে ফিরে আসেন এই ৩৩ বছর বয়সী তারকা। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির হয়ে ছন্দে ও ফিরছিলেন ধীরে-ধীরে। ফলে প্রায় ১৭ মাস পরে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে।
তবে সান্তোসে ফিরে ছন্দে ফিরলেও, অনিয়ন্ত্রিত জীবন থেকে ফিরে আসতে পারেননি নেইমার। ফলশ্রুতিতে আবারও চোটে পড়েছেন দল ঘোষণার পরে। স্বাভাবিকভাবেই ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের ব্রাজিল দলে বহু প্রতিক্ষিত প্রত্যাবর্তনটা অন্তত এখন আর হচ্ছে না। তার পরিবর্তে দলে ঢুকেছেন রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ স্ট্রাইকার এন্দ্রিক।
নেইমার ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে খেলার সময় হাঁটুর চোট পান। এরপর থেকে জাতীয় দলে ব্রাত্য ছিলেন এই ফরোয়ার্ড। সান্তসে ফিরে এসে ৭ ম্যাচে ৩ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করেছিলেন। সেই সুবাদে সেলেয়াও দলে ডাকও পেয়েছিলেন। তবে কদিন আগে হালকা চোটে পড়ার পরে বিশ্রাম না নিয়ে কার্নিভালে যান। এরপর সেই চোট আরও গুরুতর হয়।
আরো পড়ুন:
আর্জেন্টিনার বিপক্ষের ম্যাচের আগে ব্রাজিলের দুশ্চিন্তা, নিষেধাজ্ঞা শঙ্কায় নেইমারসহ ১০ তারকা
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন রোনাল্ডো নাজারিও
স্বাভাবিকভাবে এই মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বাকপ বাছাই পর্বের মহা গুরুতেপূর্ণ ম্যাচ দুটিতে খেলতে পারবেন না তিনি। ২১ ও ২৬ মার্চ যথাক্রমে ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
ফিরে আসার দ্বারপ্রান্তে এসে আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজেকে দুর্ভাগা ভাবছেন এই ব্রাজিলিয়ান। নেইমার নিজের ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “ফিরে আসার সময়টা অনেক কাছে মনে হচ্ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জার্সি পরতে পারব না।”
তবে এই ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড কোন ঝুকে নিতে চান না। সবার সাথে আলোচনা করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, “আমরা অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছি এবং সবাই জানে আমার ফিরে আসার ইচ্ছা কতটা তীব্র। কিন্তু আমরা একমত হয়েছি যে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে এই চোট পুরোপুরি সেরে ওঠা সবচেয়ে ভালো।”
ব্রাজিলের হতে কাফু ১৪২ ম্যাচ খেলেছিলেন। যা সেলেসাওদের জার্সিতে সর্বোচ্চ। এরপর ১২৮ ম্যাচ নয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নেইমার। তবে নেইমার তার দেশের সর্বকালের সেরা গোলদাতা। ৭৯ গোলের করেছেন এই ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড, যা পেলের চেয়ে দুইটি গোল বেশি। সেলেসাওদের হয়ে ৫৯টি অ্যাসিস্টও আছে তার।
এদিকে নেইমারের পরিবর্তে দলে আসা ১৮ বছর বয়সী এন্দ্রিক, এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২৮টি ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন ৬টি। এই তরুণ স্ট্রাইকার ব্রাজিলের হয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন এবং জালের দেখা পেয়েছেন তিন বার।
অন্যদিকে ব্রাজিলের কোচ ডোরিভাল জুনিয়র চোটের কারণে ম্যানচেস্টার সিটির গোলরক্ষক এডারসন ও ফ্লামেঙ্গো ফুলব্যাক ড্যানিলোকেও দল থেকে বাধ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। এদের পরিবর্তে দলে এসেছেন অলেম্পিক লিও গোলকিপার লুকাস পেরি ও ফ্লামেঙ্গো ডিফেন্ডার আলেক্স সান্দ্রো।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল জ ত য় দল ফর য় র ড
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।