বিএসএমএমইউতে প্রাণ গোপাল দত্তের মেয়ে চিকিৎসক অনিন্দিতাকে হেনস্তা করার চেষ্টা
Published: 16th, March 2025 GMT
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিন্দিতা দত্তকে আজ বোরবার দুপুরে একদল মানুষ হেনস্তা করার চেষ্টা করেছে। বিএসএমএমইউ প্রাঙ্গণে এ ঘটনার এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। অনিন্দিতা দত্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তের মেয়ে।
এ ঘটনার পেছনে বাবা প্রাণ গোপাল দত্তের নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার চান্দিনার একজন বাসিন্দার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনিন্দিতা দত্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনিন্দিতা দত্তকে নাজেহাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল, অনেকটা মবের মতো। অনিন্দিতা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের চিকিৎসক, শিক্ষক ও কর্মচারী–কর্মকর্তাদের সহাযোগিতায় তিনি ‘মবের’ হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে তাঁকে উদ্ধার করেছে।
ঘটনার বিবরণে অনিন্দিতা দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লক থেকে বি ব্লকের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনজন ব্যক্তি তাঁর পথ আগলে ধরেন এবং তাঁদের সঙ্গে যেতে বলেন। তাঁরা হুমকি দেন, তাঁদের সঙ্গে না গেলে তাঁকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা হবে। অনিন্দিতা তাঁদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটির পাশাপাশি মুঠোফোনে নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি নিজ বিভাগে চলে যান। এ সময়ের মধ্যে সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়। অনিন্দিতা বলেন, ‘এটা ছিল মব’।
অনিন্দিতা দত্ত প্রায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নিজ বিভাগেই ছিলেন। এরপর সেনাবাহিনী এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়।
এমন ঘটনা কেন ঘটল বা এর পেছনে কারা আছেন জানতে চাইলে অনিন্দিতা দত্ত বলেন, সজল কর নামের এক ব্যক্তি এবং একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সেগুনবাগিচা ও শাহবাগ থানার নেতারা ঘটনার পেছনে আছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে সজল কর তাঁদের পরিবারকে নানাভাবে নাজেহাল করার পাশাপাশি অর্থ দাবি করে আসছেন।
সজল কর পেশায় একজন আয়কর আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিংয়ে গিয়েছিলেন। অনিন্দিতা তাঁকে যেতে বলেছিলেন। যাওয়ার সময় সেগুনবাগিচা এলাকার একজনকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। তবে ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় সজল করের জানা নেই।
সজল করের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায়। ওই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন প্রাণ গোপাল দত্ত। সজল কর প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি প্রাণ গোপাল দত্তের নামে পাঁচটি মামলা করেছেন। কোনোটিতে অনিন্দিতা দত্তের নামও আছে। সমঝোতার ব্যাপারে কথা বলার জন্য অনিন্দিতা দত্ত তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেছিলেন। তবে মানুষ জড়ো করা বা মব তৈরির ব্যাপারে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
অনিন্দিতা দত্ত বলেন, সজল করকে তিনি কোনো দিন দেখেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথাও তাঁকে বলেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক অন ন দ ত ল কর র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ