কক্সবাজারের সাবেক মেয়র মাহবুবুর দুদকের জালে
Published: 18th, March 2025 GMT
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
সূত্র জানায়, সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবুরের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেনকে গত রোববার অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় কক্সবাজার কার্যালয়ে। কমিশনের পক্ষে উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত গত ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে পাঠানো চিঠিতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষ করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে মাহবুবুর কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর পৌরসভায় নিজস্ব বলয় গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হন। ঘুষের বিনিময়ে পৌরসভায় কর্মচারী নিয়োগ, ডাম্পিং স্টেশনের জন্য জমি ক্রয়ের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, পৌর এলাকায় ড্রেন পরিষ্কারের নামে অর্থ আত্মসাৎ, নামে-বেনামে মিথ্যা কোটেশন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও বড় বাজারে পৌরসভার পক্ষ থেকে ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণধীন থাকা অবস্থায় দোকান দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার সব উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলেও গোপনে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেই ঠিকাদারি কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহবুবুর।
কক্সবাজার পৌরসভার একজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুদক নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান করলে মাহবুবুরের দৃশ্যমান সম্পদের চেয়ে নামে-বেনামে অদৃশ্য অবৈধ সম্পদ বেশি পাওয়া যাবে।
মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই কাজ শুরু করেছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হব ব র র র প রসভ প রসভ র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫