উইন্ডোজ ১০–এর সমর্থন শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর এই অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আর কোনো সফটওয়্যার হালনাগাদ, নিরাপত্তা সংশোধনী বা কারিগরি সহায়তা দেবে না মাইক্রোসফট। তাই ব্যবহারকারীদের দ্রুত উইন্ডোজ ১১–তে হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীদের সতর্ক করতে একটি ই–মেইল পাঠিয়েছে মাইক্রোসফট। এতে জানানো হয়েছে, যাঁদের কম্পিউটার উইন্ডোজ ১১ চালানোর উপযোগী নয়, তাদের নতুন হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। অন্যথায় নিরাপত্তাহীন একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের ঝুঁকি নিতে হবে।

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে উইন্ডোজ ১০-এর জন্য আর কোনো বিনা মূল্যের সফটওয়্যার হালনাগাদ, কারিগরি সহায়তা বা নিরাপত্তা সংশোধনী পাওয়া যাবে না। তবে এর অর্থ এই নয়, ওই সময়ের পর কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যাবে। উইন্ডোজ ১০ চালু থাকবে, কিন্তু মাইক্রোসফটের কোনো ধরনের নিরাপত্তা সুরক্ষা আর পাওয়া যাবে না। ফলে সাইবার আক্রমণসহ অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকির শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। যাঁদের কম্পিউটার উইন্ডোজ ১১ সমর্থন করে না, তাঁদের জন্য মাইক্রোসফট পুরোনো কম্পিউটার হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া নতুন কম্পিউটার কেনার কথাও বলা হয়েছে।

উইন্ডোজ ১১ সম্পর্কে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে নিরাপদ উইন্ডোজ সংস্করণ। এতে আধুনিক অ্যান্টিভাইরাস, ফায়ারওয়াল ও উন্নত ইন্টারনেট নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুরক্ষাব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যাঁরা আপাতত উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে চান, তাঁদের জন্য ফাইল ব্যাকআপ রাখার পরামর্শ দিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় ফাইল ‘ওনড্রাইভ’-এ ব্যাকআপ রাখা উচিত। ফলে বিভিন্ন যন্ত্র থেকে সহজেই সেগুলো ব্যবহার করা যায়। নিরাপত্তাঝুঁকি কমাতে এক বছর মেয়াদি নিরাপত্তা হালনাগাদ কেনার সুযোগ রেখেছে মাইক্রোসফট। এই হালনাগাদ পেতে ৩০ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালের আগে তৈরি বেশির ভাগ কম্পিউটারে উইন্ডোজ ১১ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ‘টিপিএম ২.

০’ মডিউল নেই। ফলে এসব ডিভাইসে সরাসরি উইন্ডোজ ১১-এ হালনাগাদ করা সম্ভব নয়। অলাভজনক সংস্থা ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট রিসার্চ গ্রুপ’ (পিআইআরজি) জানিয়েছে, উইন্ডোজ ১০-এর সমর্থন শেষ হলে প্রায় ১০০ কোটি কম্পিউটার পুরোনো অপারেটিং সিস্টেমে আটকে পড়বে। এ অবস্থায় ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নিরাপত্তাঝুঁকি মোকাবিলা করা। বিশ্বব্যাপী এখনো বেশির ভাগ ব্যবহারকারী উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত স্ট্যাট কাউন্টারের তথ্যানুসারে, বিশ্ববাজারে উইন্ডোজ ১০-এর বাজার দখল এখনো ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে উইন্ডোজ ১১-এর বাজার শেয়ার ৩২ শতাংশ।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র র পর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • উইন্ডোজের দুটি ‘জিরো ডে’ নিরাপত্তাত্রুটির সমাধান করল মাইক্রোসফট
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স, ক্লাস শুক্র ও শনিবার
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৩ জুন ২০২৫)
  • ইলিশের অভয়াশ্রম ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে জেনে নিন বিস্তারিত