পাঁচটি সংস্কার কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। কমিশনগুলো স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। নতুন সময় অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করার সময় পাবে এসব সংস্কার কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ সময় বাড়ানোর কথা জানানো হয়। এর মধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। আর স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি সংস্কার কমিশন এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। মার্চ মাস পর্যন্ত এসব কমিশনের সময় রয়েছে। এখন তা আরও বাড়ল।

এর আগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যোগ্যদের মধ্যে ১৯% ভাতা সুবিধা পান

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। পাঁচটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা আছে—এমন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ এ সুবিধা পান।

এক গবেষণার ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। সেখানে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল কৌশলগত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সেটি করা হয়নি। সরকারের অঙ্গীকার ছিল সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন করা, সেটিও করা হয়নি। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো রাজিয়া সুলতানা। তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুন থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ গবেষণার কাজ চলে। সমতল থেকে ২২টি ও পাহাড় থেকে ৭টিসহ মোট ২৯টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। এসব সম্প্রদায় হলো চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, গঞ্জু, বাগদু, পাত্র, খাসিয়া, ওঁরাও, রাখাইন, গোরাইত, ম্রো, বম, কোচ, মুন্ডা, মাহাতো, মালপাহাড়ি, রাজোয়ার, ভূমিজ, সাঁওতাল, হুদি, বর্মন, কুরমি মাহাতো, মাহালি, কোরা, মণিপুরি ও বেদিয়া মাহাতো।

গবেষণায় বলা হয়, আদিবাসী অধ্যুষিত ১০টি ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ১ হাজার ৬৭৬ জন। এঁদের মধ্যে এ সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩৫৫ জন। শতাংশের হিসাবে যা এটি ২১ দশমিক ২ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮টি ইউনিয়নে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ৪৯৮ জন। কিন্তু এ সুবিধার আওতায় আছেন মাত্র ৬০ জন। শতাংশের হিসাবে যা ১২ শতাংশ। ৭টি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তির যোগ্য ছিলেন ৫৮৩ জন। কিন্তু দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জনকে, যা ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। ছয়টি ইউনিয়নে মা ও শিশুসহায়তা ভাতার জন্য যোগ্য ৫৯৪ জন। এ সুবিধা পাচ্ছেন ১২৮ জন। শতাংশের হিসাবে এটি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। চারটি ইউনিয়নে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) যোগ্য পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৩৮ জন; কিন্তু এ সুবিধা পাচ্ছেন ১৬৬ জন। শতাংশে এটি ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০১০ সালের খানা ব্যয় জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে গবেষণায় বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, যেখানে জাতীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তির এ হার ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

প্রচার-প্রচারণার না থাকায় এসব সুবিধার কথা অনেক আদিবাসী জানতে পারেন না বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে অনেকে আবেদন করতে পারেন না। আবার যাঁরা আবেদন করেন, আবেদনপ্রক্রিয়ায় হয়রানি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব ও যাচাই-বাছাই এবং নির্বাচনে অনিয়মের কারণে তাঁদের অনেকে বাদ পড়েন বলে গবেষণায় তথ্য দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের একটি খানা আয়-ব্যয় জরিপের ফলাফল তুলে ধরে গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটি ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে আদিবাসী অধ্যুষিত সমতল এলাকায় সেটি ৮০ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেটা পার্বত্য অঞ্চলে হোক বা সমতলে হোক, তাঁদের অধিকারগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে, তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে যে কর্মসূচিগুলো আছে, সেগুলোর সারমর্ম গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।

এসব বৈষম্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে ৭টি নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে, সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির ঘাটতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্রই উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ চিত্রই দীর্ঘকাল যাবৎ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে দেশে। তার মধ্যেও আদিবাসীদের বিষয়টি আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ, তারা প্রান্তিকের মধ্যেও প্রান্তিক। তাদের ন্যায্য প্রাপ্য রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারছে না।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে এখানে দেখা যাচ্ছে উন্নয়ন, সমাজ পরিবর্তন, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তার মূলধারা, তার মধ্যে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল কৌশলগত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সেটি করা হয়নি। সরকারের অঙ্গীকার ছিল সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন করা, সেটিও করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্টের উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও টিআইবির রিসার্চ পলিসির পরিচালক মো. বদিউজ্জামান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ