রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে পাঁচটি কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করার সময় পাবে এসব সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলো হলো- স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। 

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ সময় বাড়ানোর কথা জানানো হয়। এর মধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। আর স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া হয়েছে। 

বাকি তিনটি সংস্কার কমিশন এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। মার্চ মাস পর্যন্ত এসব কমিশনের সময় রয়েছে। এখন তা আরও বাড়ল। এর আগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। 

এগুলো হলো সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

প্রথম ধাপে গত বছরের অক্টোবরে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন ও বিচার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে এসব কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এর আগে ৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়

নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। এই পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। গত ৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়।

ছয়টি কমিশন ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। অন্যদিকে গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এই কমিশনগুলোকে প্রতিবেদন দিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। 

এছাড়া ২২ মার্চ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো দ্রুত কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কারণ পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি

পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়। বিমানের উড্ডয়নের সময় ত্রুটি ছিল। প্রশিক্ষণের জন্য পাইলট ফ্লাই করার পর পরিস্থিতি তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।

গত ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

বুধবার তদন্ত কমিটির প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস এম কামরুল হাসানসহ একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তদন্ত প্রতেবদনটি জমা দেয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ওই ঘটনায় পাইলটসহ অন্তত ৩৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ঘটনা তদন্তে ২৭ জুলাই ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তিন মাস তদন্ত শেষে কমিটি এ রিপোর্ট দেয়। 

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগীরা আছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে তারা ১৬৮টি তথ্য উদঘাটন করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য তদন্ত কমিটি ৩৩টি সুপারিশ করেছে। প্রধান সুপারিশ হলো, জননিরাপত্তার স্বার্থে এখন থেকে বিমানবাহিনীর সব প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে পরিচালিত হবে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল করণ ছিল পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন তিনি ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন।’
   
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘এই স্কুল রাজউকের বিল্ডিং কোডের অনুমোদনে হয়নি। বিল্ডিংয়ে ন্যূনতম তিনটি সিঁড়ি থাকার কথা ছিল, সেখানে মাইলস্টোনের বিধ্বস্ত বিল্ডিংয়ে ছিল একটি সিঁড়ি, মাঝ বরাবর। বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, তিনটি সিঁড়ি থাকলে হতাহতের সংখ্যা আরও কম হতো।’

এছাড়া অন্য সুপারিশের মধ্যে বরিশাল ও বগুড়ায় রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় এ ব্যাপারে তিনি নির্দেশনাও দিয়েছেন। রাজউকের বিল্ডিং কোড যাতে নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় পালিত হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
 
প্রেস সচিব বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবাহিনীর বিমানের স্বল্পতা আছে। এয়ারপোর্টের আশেপাশে যেন ‘ফোম টেন্ডার’ (বিশেষ ধরনের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি যা দাহ্য তরল পদার্থে লাগা আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয় থাকে) সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এটা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের জন্য বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে উচ্চতার একটা বিধিনিষেধ আছে। অন্যান্য দেশে দেখা গেছে, টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের পথে কিছু স্থাপনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে, যেমন হাসপাতাল, স্কুল, ওয়ারহাউজ, ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে, এই দিকে যাতে সিভিল এভিয়েশন নজর রাখে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অনেক জায়গায় বিমানবন্দর আছে, সেগুলো যাতে ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ