ট্রাম্পের সঙ্গে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ফোনালাপের কথা নিশ্চিত করলেন মাদুরো
Published: 4th, December 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত মাসের শেষের দিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর টেলিফোনে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ আলাপ হয়েছে। গতকাল বুধবার ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাদুরো এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
সাক্ষাৎকারে মাদুরো বলেন, প্রায় ১০ দিন আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের খবর বের হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয় নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এত দিন বিষয়টি নিয়ে কথা কেন বলেননি, সে প্রসঙ্গে মাদুরো বলেন, তিনি ‘মাইক্রোফোন কূটনীতি’ এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলেন।
মাদুরো বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালনকালে আমি কূটনৈতিক সংযম শিখেছি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত কয়েক বছরে এই অভিজ্ঞতা আরও গাঢ় হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং আমাদের কমান্ডার চাভেজের (হুগো চাভেজ) কাছ থেকে শেখা অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সংযমকে মূল্য দিই।’
ভেনেজুয়েলার প্রয়াত নেতা হুগো চাভেজের অধীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাদুরো।
মাদুরো বলেন, এই ফোনালাপ ভবিষ্যতে ‘পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সংলাপের’ দরজা খুলে দিতে পারে—এমন সম্ভাবনাকে তিনি স্বাগত জানান। আর তাঁর দেশ সব সময় শান্তির পক্ষে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে মাদুরো বলেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলতে চান না। কারণ, তাঁর কাছে ‘সংযম’ ও ‘সম্মান’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গত রোববার ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এমন এক সময়ে ট্রাম্প ও মাদুরো ফোনে কথা বললেন, যখন ওয়াশিংটন ও কারাকাস গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সংকট পার করছে।
গতকাল ট্রাম্প আবারও মাদুরোর সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে মন্তব্য করেন। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তার (মাদুরোর) সঙ্গে অল্প সময়ে কথা বলেছি। তাকে কয়েকটি কথা বলেছি। এরপর কী হয়, তা দেখা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা আমাদের কাছে মাদক পাঠায়। ভেনেজুয়েলা আমাদের কাছে এমন লোকও পাঠায়, যাদের পাঠানো উচিত নয়।’
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ক্যারিবীয় অঞ্চলে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড মোতায়েন করেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরি। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলা ও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ থেকে আসা নৌযানে মাদক পাচারের সন্দেহে হামলা চালাচ্ছে। মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলা চালানোর হুমকিও দিচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসব সামরিক অভিযানকে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনলাতিন আমেরিকায় সিআইএর যত অভিযান, সফল হয়েছিল কয়টি৩০ নভেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি হিসাবমতে, ভেনেজুয়েলায় খুব সামান্য কোকেন উৎপাদিত হয়। কিন্তু ২০২০ সালে বিশ্বে উৎপাদিত কোকেনের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ পাচার হয়েছে ভেনেজুয়েলা হয়ে।
মাদুরোর অভিযোগ, ট্রাম্প মাদকবিরোধী অভিযানকে অজুহাত বানিয়ে তাঁর সরকার উৎখাত এবং ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলসম্পদ দখলের চেষ্টা করছেন।
গত সোমবার রাজধানী কারাকাসে এক সমাবেশে মাদুরো বললেন, ভেনেজুয়েলা শান্তি চায়। তবে সেই শান্তিই ভেনেজুয়েলার কাম্য, যা পাওয়ার জন্য ‘সার্বভৌমত্ব, সমতা ও স্বাধীনতা’কে বিসর্জন দিতে হবে না।
মাদুরোর ভাষায়, ‘আমরা দাসত্ব বা উপনিবেশের শান্তি চাই না! উপনিবেশ, কখনো নয়! দাসত্ব, কখনো নয়!’
আরও পড়ুনদায়মুক্তি দিলে পদত্যাগ করে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে চেয়েছিলেন মাদুরো, রাজি হননি ট্রাম্প০৩ ডিসেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার বিভাগ কাগজে স্বাধীন, এখন বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখতে চায় মানুষ: মাহবুব উদ্দিন খোকন
বিচার বিভাগ গেজেটের মাধ্যমে কাগজে স্বাধীন হয়েছে, তবে মানুষ বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আইনের শাসন ও সব জায়গায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী এসব কথা বলেন।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থায় জনগণ একটি আমূল পরিবর্তন দেখতে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘এখন আক্ষরিক অর্থে স্বাধীন হয়েছে, কাগজে–কলমে হয়েছে, বাস্তবে চাই।’
তবে এ নিয়ে জনমনে ‘কিছু ভয়ও আছে’ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘বিচারপতিরা এখন ধরেন স্বাধীন। অনেকেই ধারণা করছে, ভয় পাচ্ছে— স্বেচ্ছাচারিতা যদি হয়, তাঁরা যদি প্রভাবিত হন, তাহলে কী হবে? সরকারের তো নিয়ন্ত্রণ নেই।’
সচিবালয় সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আছে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘সচিবালয় কি ভালোভাবে কাজ করতে পারবে, এটা মানুষের চিন্তা। আমি বিশ্বাস করি, সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর এটা সম্ভব হবে। এখানে দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘আশা করি, মানুষের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটাবে নতুন সচিবালয় এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা।’
এ সময় বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হলে এই সচিবালয় অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সহসম্পাদক আবদুল করিম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ ফজলে এলাহী, শফিকুল ইসলাম, ফাতেমা আক্তার ও মহিউদ্দিন হানিফ উপস্থিত ছিলেন।