বিচার বিভাগ গেজেটের মাধ্যমে কাগজে স্বাধীন হয়েছে, তবে মানুষ বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আইনের শাসন ও সব জায়গায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী এসব কথা বলেন।

এ সময় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থায় জনগণ একটি আমূল পরিবর্তন দেখতে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘এখন আক্ষরিক অর্থে স্বাধীন হয়েছে, কাগজে–কলমে হয়েছে, বাস্তবে চাই।’

তবে এ নিয়ে জনমনে ‘কিছু ভয়ও আছে’ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘বিচারপতিরা এখন ধরেন স্বাধীন। অনেকেই ধারণা করছে, ভয় পাচ্ছে— স্বেচ্ছাচারিতা যদি হয়, তাঁরা যদি প্রভাবিত হন, তাহলে কী হবে? সরকারের তো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

সচিবালয় সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আছে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘সচিবালয় কি ভালোভাবে কাজ করতে পারবে, এটা মানুষের চিন্তা। আমি বিশ্বাস করি, সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর এটা সম্ভব হবে। এখানে দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘আশা করি, মানুষের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটাবে নতুন সচিবালয় এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা।’

এ সময় বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হলে এই সচিবালয় অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সহসম্পাদক আবদুল করিম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ ফজলে এলাহী, শফিকুল ইসলাম, ফাতেমা আক্তার ও মহিউদ্দিন হানিফ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র ম ক র ট আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

রেফারেন্স–মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ, আদেশ কাল

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ করে দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের ওপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদেশ দেবেন সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার আদেশের এই দিন ধার্য করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।

লিভ টু আপিলের ওপর গত ২ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর শুনানি নিয়ে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়। ১২ নভেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল ও আজ শুনানি হয়।

আদালতে লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। এই মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হন লেখক ফিরোজ আহমেদ, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। আদালতে তাঁর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। এ মামলায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ইন্টারভেনার হন। জ্যেষ্ঠ এই দুই আইনজীবীও শুনানিতে অংশ নেন।

লিভ টু আপিলে নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন।

হাইকোর্টের আদেশের উল্লেখযোগ্য দিক

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) বক্তব্যে এসেছে। উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।

পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ। এবং আশা করি, আগামী বহু বছর ধরে জনগণ যত্নে থাকবে।’

রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করে তা সরাসরি খারিজ করার কথা বলেন হাইকোর্ট।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ যা রয়েছে

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হয় যে আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।

রেফারেন্স ও মতামত

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান।

রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১ /২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়।

মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে রিটে বিভক্ত রায়
  • অন্তর্বর্তী সরকার বৈধ: আপিল বিভাগ
  • ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না
  • ট্রাইব্যুনালে ডেকে আনার পর ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না
  • শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আমির হোসেনকে নিয়োগ
  • এবার নিজ দলের কর্মীর মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হক
  • নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট
  • ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট
  • রেফারেন্স–মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ, আদেশ কাল