হাইব্রিড সোলারে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ
Published: 6th, April 2025 GMT
নতুন ঘরানার বেশ কয়েকটি হাইব্রিড সোলার আইপিএস সল্যুশন উদ্ভাবন করেছে প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ওয়ালটন। নতুন মডেলের হাইব্রিড সোলার আইপিএস সল্যুশন পারফরম্যান্স, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ ও সোলার প্যানেলের সহায়তায় পরিবেশবান্ধব, নবায়নযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার কথা জানাল। ফলে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর সঙ্গে গ্রাহক পরিবেশ সুরক্ষায় অংশীজন হতে পারবেন।
চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়ালটনের ‘আর্ক’ ব্র্যান্ডের ১২০০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার, ২০৫০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার, ৩ হাজার ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার ও ৫৫০০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতার হাইব্রিড সোলার আইপিএস সল্যুশন পাওয়া যাচ্ছে। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য যা ব্যবহারযোগ্য। বিশেষ করে কৃষি ও উৎপাদনভিত্তিক ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সব উদ্যোগ পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য এমন হাইব্রিড সোলার আইপিএস সল্যুশন সিস্টেম সময়োপযোগী উদ্ভাবন।
সব মডেলের সোলার হাইব্রিড আইপিএস বিশেষ সুবিধায় রয়েছে বিশেষ কাস্টমাইজেশন সুবিধা। নিজের প্রয়োজনে গ্রাহক মডেলের কনফিগারেশন বদলে নিতে পারবেন। থাকবে অনগ্রিড ও অফগ্রিড সুবিধা। নির্মাতারা জানান, সব মডেলের সঙ্গে সোলার প্যানেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এআরসি মনো আরটিএম২০১০এম এবং আরসি মনো আরটি৭১-৪৫০এম, যা পারফরম্যান্স, দ্রুত চার্জিং ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ নিশ্চিত করে।
তা ছাড়া সোলার হাইব্রিড আইপিএস মডেলের বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো বিদ্যুৎবিভ্রাট বা ভোল্টেজ ওঠানামার সময়ে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। জানা গেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, অফিস, হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ অন্যসব সংস্থার জরুরি অপারেশনাল সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত রাখতে এসব প্যানেল সহায়ক। সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহক শুধু বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবেন। অন্যদিকে, পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে অংশীজন হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ওয়ালটন কম্পিউটারের চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ বলেন, নবায়নযোগ্য, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতে আমরা নতুন হাইব্রিড সোলার আইপিএস সল্যুশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। হাইব্রিড সিস্টেম সৌরশক্তি ও গ্রিড বিদ্যুৎ থেকে স্মার্ট ইনভার্টার পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করবে। ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, বিপরীতে দীর্ঘ সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যাকআপ পাওয়া যাবে।
হাইব্রিড প্যানেলের জন্য ২০ বছরের বিক্রয়োত্তর পরিষেবা, ব্যাটারির জন্য ১২ মাস আর সোলার ইনভার্টারের জন্য ১৮ মাসের পরিষেবা পাওয়া যাবে। আগ্রহীরা ব্র্যান্ডের দাপ্তরিক সাইট থেকে বিস্তারিত
তথ্য জানতে পারবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ র জন য প রব ন ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
ইরানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি তাঁর স্মৃতিকথায় ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে প্রথম নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সময় আজারবাইজানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হেইদার আলিয়েভের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন। রাফসানজানির মতে, আর্মেনিয়ার সঙ্গে সংঘাতে ইরানের সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন আলিয়েভ।
রাফসানজানি লিখেছেন, ‘বারবার করে বলা তাঁর (আলিয়েভ) একটি মন্তব্য ছিল যে আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ইরানের উচিত আজারবাইজানে তার উপস্থিতি বাড়ানো। মাঝেমধ্যে তিনি এ–ও বলতেন, আজারবাইজান একসময় ইরানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের (ইরান) সেখানে এসে এটিকে (আজারবাইজান) রক্ষা করতে ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অনুরোধ করতেন।’ তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ইরান যদি আজারবাইজানকে তার প্রভাববলয়ে নিয়ে আসে, তবে তা পুরো ককেশাসে রাশিয়ার আধিপত্যকে নাড়িয়ে দেবে।
৩২ বছর পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আজারবাইজানের কর্মকর্তারা এখন আর বাকুর বিষয়ে তেহরানের সম্পৃক্ততা চান না।
এখন ইরানের রাজনৈতিক নেতারাও এই ছোট প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেবে তা নিয়ে অনিশ্চিত। আজারবাইজান ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু গোলস্তান (১৮১৩) এবং তুর্কমেনচায় (১৮২৮) চুক্তির মাধ্যমে রুশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তরের আগে এটি একসময় ইরানের অংশ ছিল।
গত দশকে দুটি দেশের (ইরান ও আজারবাইজান) মধ্যে ক্ষমতার গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আজারবাইজানের অনেকে ও দেশটির গণমাধ্যম এখন ইরানেরই কিছু অংশকে আজারবাইজানের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি তুলছে।
এদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধ তেহরান ও বাকুর রাজনৈতিক বিভেদকে আরও গভীরতার দিকে নিয়ে গেছে। তেহরানে আজারবাইজানের ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ইসরায়েলি ড্রোন কোথা থেকে এল?ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই ইরানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা আজারবাইজানের দিক থেকে ইসরায়েলি ড্রোন প্রবেশের খবর দেন। পরবর্তী সময়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমও এই খবর নিশ্চিত করে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে তেহরান, তাবরিজ, উরমিয়াসহ বিভিন্ন শহরে ইসরায়েলের হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনগুলো আজারবাইজান থেকে ইরানে প্রবেশ করেছিল।
বিষয়টি তখন এতটাই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে যে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় যে তারা বিষয়টি দেখছে। তবে কয়েক দিন পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন যে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে ইসরায়েল আজারবাইজানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা চালায়নি।
যদিও এটি ইরানের অনেককে আশ্বস্ত করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যম বা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউই আজারবাইজানের এ বক্তব্যকে গ্রহণ করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন অধ্যাপক বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট উভয়ই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তার মানে ইরান এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
ওই বিশেষজ্ঞের মতে, ইরান যদি আজারবাইজান সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের যুক্ত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত না হতো, বিষয়টি এতটা উচ্চপর্যায়ে গুরুত্বসহকারে নেওয়া হতো না।
তিনি আরও যুক্তি দেন যে আলিয়েভের আশ্বাস সম্পর্কে পেজেশকিয়ানের মন্তব্য ককেশাস অঞ্চলে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা তুলে ধরে। অধ্যাপক বলেন, ‘পেজেশকিয়ান যা বলেছেন, তা কেবল কূটনৈতিক ভাষা। বাস্তবে শেষ কারাবাখ যুদ্ধের পর থেকে ইরান আজারবাইজানের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করবে তা জানে না। এর পর থেকে আজারবাইজান একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বা অন্তত নিরপেক্ষ দেশ থেকে বরং একটি শান্ত কিন্তু গুরুতর হুমকির দেশে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বাকু ও তেল আবিবের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আরও প্রমাণ হিসেবে আজারবাইজানীয় ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আজারবাইজান ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে এবং দেশটি উন্নত মানের ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম আমদানি করছে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইসরায়েল আজারবাইজানের সামরিক অস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশ সরবরাহ করেছে।ইরানের দোরগোড়ায় ইসরায়েলসোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আজারবাইজান প্রথমে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের কাছাকাছি আসে। পরবর্তী সময়ে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গেও তার সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আজারবাইজান ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে এবং দেশটি উন্নত মানের ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম আমদানি করছে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইসরায়েল আজারবাইজানের সামরিক অস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশ সরবরাহ করেছে।
এখন আজারবাইজান নতুন সিরীয় সরকারের সঙ্গেও কাজ করছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর নতুন সিরীয় সরকার ইরান থেকে সরে এসেছে।
ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ককেশাস অঞ্চলে কোনো স্পষ্ট কৌশল না থাকায় ইরান এখন দেখছে যে তেল আবিব তার সীমান্তের দিকে আরও কাছাকাছি আসছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ইসরায়েল, সিরিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট দ্রুতই তুরস্কের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ইরানের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে পারে। একমাত্র বাধা হলো আর্মেনিয়া ও ইরানের মধ্যকার ৪৩ কিলোমিটার স্থলপথ, যার মাধ্যমে আজারবাইজান তার ছিটমহল এলাকা নাখচিভানের সঙ্গে যুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ। তেহরান, ইরান, ২২ জুন ২০২৫